ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি সুফিয়া কামাল হল থেকে ছাত্রীদের মোবাইল ফোন চেক করে বের করে দেয়া হচ্ছে। ছাত্রীদের মোবাইল ফোনে বা সামাজিক সাইটগুলোর একাউন্টে কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নেয়া বা এধরনের কোন কিছুতে লাইক শেয়ার করে থাকলে কিংবা কোটা সংস্কার নিয়ে সরকারের সমালোচনামূলক কোন কিছু পাওয়া গেলে তাদেরকে হল থেকে বের করে দেয়া হচ্ছে। বৃহস্পতিবার রাত ৮টার পর থেকে নিয়ে ২টা পর্যন্ত কবি সুফিয়া কামাল হলে মোট ২০ জন ছাত্রীকে বের করে দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
এ খবর পেয়ে আন্দোলনকারী সাধারণ শিক্ষার্থীরা হলের সামনে জড়ো হতে শুরু করেছেন। সাধারণ শিক্ষার্থী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ন আহবায়ক নুরুল হক নুরু বেশ কয়েকজন ছাত্রকে নিয়ে ফেসবুক লাইভে এসে স্লোগান দেন, ‘ভয় দেখিয়ে আন্দোলন, বন্ধ করা যাবে না’ এবং ‘আমার বোন পথে কেন, প্রশাসন জবাব চাই’।
পরে রাত আড়াইটায় হলগেটে দাঁড়িয়ে প্রেস ব্রিফিং দেন নুরুল হক নুরু। তিনি বলেন, আগামীকাল শুক্রবার বিকাল চারটায় আমরা এর প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করব’। এ সময় পরিষদের আহবায়ক হাসান আল মামুনও উপস্থিত ছিলেন।
কয়েকজন শিক্ষার্থীকে তাদের স্থানীয় অভিভাবকের কাছে তুলে দেওয়ার কথা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জিজ্ঞাসায় স্বীকার করেছেন ছাত্রী হলটির আবাসিক শিক্ষক আফরোজা বুলবুল।
এর আগে বুধবার অনুষ্ঠিত ডিসিপ্লিনারি বোর্ডের বৈঠকে হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইফফাত জাহান এশাকে হেনস্তার জন্য ২৬ শিক্ষার্থীকে চিহ্নিত করে কারণ দর্শানোর নোটিস দেয়।
এরপরই হল কর্তৃপক্ষ হলের শিক্ষার্থীদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন, তাদের ধমক দিয়ে স্বীকারোক্তি নেওয়ার চেষ্টা চলছে। এর মধ্যেই বিভিন্ন শিক্ষার্থীর স্থানীয় অভিভাবকদের ডাকা হয় হল প্রশাসনের পক্ষ থেকে।
সন্ধ্যার পর থেকে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে ব্যাগ নিয়ে হল থেকে বের হতে দেখার কথা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন একজন দারোয়ান।
আবদুল আউয়াল নামে এক অভিভাবক রাত ১০টার দিকে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি আমার বোনকে ফোন দিয়েছিলাম। সে না ধরে তার এক শিক্ষক ধরেন। তিনি আমাকে আসতে বলেন’।
রাত ১২টার দিকে গণিত তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী শারমিনকে নিয়ে তার স্থানীয় অভিভাবক হল থেকে বেরিয়ে আসেন।
সাংবাদিকদের সঙ্গে তারা কোনো কথা বলতে চাননি। শারমিনের অভিভাবক বলেন, তাদের কোনো কথা বলতে মানা করা হয়েছে। রাত ১২টা ২০ মিনিটের দিকে আরেক ছাত্রীকে নিয়ে তার অভিভাবক বেরিয়ে আসেন। সাংবাদিকরা এগিয়ে গেলে তারা কোনো কথা না বলে দ্রুত মোটর সাইকেল চালিয়ে চলে যান।
মো. ফারুক নামে একজন অভিভাবককে রাত সাড়ে ১২টার দিকে হলের সামনে দেখা যায়। ঢাকার ধামরাই উপজেলা থেকে মেয়েকে নিতে আসেন তিনি। তার সঙ্গে ছিল ভাই কামরুল আহসান। ওই অভিভাবক সাংবাদিকদের বলেন, ‘রাত ৮টার দিকে আমাকে ফোন করে মেয়েকে নিয়ে যেতে বলা হয়। সেজন্য ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে আমাকে আসতে হয়েছে’।
তবে রাত সোয়া ১টার দিকে ফারুক বের হলেও তার মেয়ে হলেই ছিলেন। ফারুক সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলতে চাননি। অনেক বলার পর কামরুল বলেন, তার ভাতিজি আন্দোলনে যেন আর না যায়, সেকথা তাদেরকে বলা হয়েছে। তিনিও তার ভাতিজিকে বুঝিয়েছেন।
ছাত্রীদের এমন গণহারে বহিষ্কারের খবরে কবি সুফিয়া কামাল হলের সামনে জড়ো হতে শুরু করেছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সর্বশেষ রাত ২টায় সেখানে ছাত্ররা উপস্থিত হয়ে স্লোগান দিতে থাকে।
উল্লেখ্য, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটে গত ১০ এপ্রিল কবি সুফিয়া কামাল হলে। সেদিন রাতে হলের যেসব মেয়েরা কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল তাদেরকে খুঁজে খুঁজে মারধর করা হচ্ছে বলে খবর ছড়িয়ে পড়লে সাধারণ শিক্ষার্থীরা একজোট হয়ে হলের সামনের মাঠে নেমে আসে। সেসময় ছাত্রলীগের হল শাখা সভাপতি ইফফাত জাহান এশাকে জুতার মালা পরিয়ে দেয়। সাথে সাথে ছাত্রলীগ থেকেও বহিষ্কার করা হয় এশাকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও তার ছাত্রত্ব বাতিল করে। পরে অবশ্য ছাত্রলীগ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এশার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়।