গত কয়েক বছর ধরে ফাইভজি সেবা চালু করার চেষ্টা চালিয়ে আসছে নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক টেলিকমিউনিকেশন প্রতিষ্ঠান ‘ভেরিজন’। অবশেষে সেই চেষ্টা সফলতার মুখ দেখতে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের ১১টি শহরে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হচ্ছে পঞ্চম-প্রজন্মের এই ওয়্যারলেস সেবা। কিছুদিন আগে এমনই একটি ঘোষণা দিয়েছে কোম্পানিটি। একেবারে প্রান্তিক অঞ্চল থেকে শুরু হবে ফাইভজি সেবা। ভেরিজনের মতে, প্রাথমিকভাবে মিশিগান, আটলান্টা, বার্নার্ডসভিলে, নিউ জার্সি, ব্রকটন, ম্যাসাচুয়েটস, ডালাস, ডেনভার, হস্টন, মিয়ামি, সিয়াটল, ওয়াশিংটন ডিসি ও সাকরামেন্টো শহরের গ্রাহকরা এই সেবা পাবেন।
সেবা বলা হলেও এই ফাইভজি প্রযুক্তির রয়েছে নানাবিধ স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি। কোম্পানিগুলো সেদিকটায় নজর তো দিচ্ছেই না, বরং এসব তথ্য বরাবরের মতোই গোপন করে এড়িয়ে গিয়ে ব্যবসা কায্রক্রম চালিয়ে নিচ্ছে।
এফসিসি’র গবেষণা
১৯৯৬ সালেই চলমান এই ৩জি ও ৪জি সেলুলার নেটওয়ার্ক নিয়ে গবেষণা চালিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের টেলিকমিউনিকেশন প্রতিষ্ঠান ফেডারেল টেলিকমিউনিকেশন কমিশন (এফসিসি)। গবেষণায় এসব দ্রুত গতির নেটওয়ার্কের ক্ষতিকারক দিকগুলা ভেসে উঠলেও ব্যবহারযোগ্য বলে বাজারে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বর্তমান সময়ের কিছু গবেষণা থেকে আসন্ন ফাইভজি নেটওয়ার্কের ক্ষতিকারক দিকগুলো তুলে ধরেছে কিছু গবেষণা প্রতিষ্ঠান। এই নেটওয়ার্কের ক্ষতিকারক মাইক্রোওয়েভ ফ্রিকোয়েন্সি জটিল বক্ষব্যাধি থেকে শুরু করে প্রাণহানিও ঘটাতে পারে বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা। যা কখনোই হেসে উড়িয়ে দেবার নয়।
মাইক্রোওয়েভ ফ্রিকোয়েন্সি যেভাবে ক্ষতি করে–
১ মিলিমিটার তরঙ্গদৈর্ঘ্যের এই ফাইভজি নেটওয়ার্কের ক্ষতিকর দিক বিজ্ঞানীদের নানা গবেষণায় উঠে এসেছে। তারা ধারণা করেন ক্ষুদ্র তরঙ্গদৈর্ঘের এই নেটওয়ার্ক থেকে ক্ষতিকর তরঙ্গ বিচ্ছুরিত হয়।
এসব তরঙ্গ বিচ্ছুরণের ফলে মানব শরীরে নানাবিধ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, যেমন– মাথা ব্যথা, চোখের দৃষ্টি ঘোলা হয়ে যাওয়া, স্বল্প নিদ্রা, হৃদরোগসহ নানা জটিল রোগের জন্ম দেয়। শুধু সেলুলার নেটওয়ার্কই নয়, রাউটার ও ওয়াইফাই টাওয়ারের ব্যবহৃত তরঙ্গ থেকেও এমন শক্তিশালী রেডিয়েশন উৎপন্ন হয় যা মানবদেহের জন্য বেশ ক্ষতিকর।
রেডিয়েশন এন্টেনার যত কাছে থাকে তত শক্তিশালী, এবং দূরত্ব বাড়লে দূর্বল হয়ে পড়ে। তাই অপ্রয়োজনীয় কারণে রাউটার ও ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক থেকে দূরে থাকা উচিৎ।
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে লক্ষাধিক ফাইভজি টাওয়ার স্থাপন
ফাইভজি সেবার একটা গুরুত্বপুর্ণ দিক হচ্ছে এটি ফোরজির চেয়ে প্রায় চারগুন দ্রুতগতিসম্পন্ন। এর গতি হতে পারে প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ১০০ মেগাবাইটের কাছাকাছি। আর এই সেবাকে গ্রাহকের কাছে সুন্দরভাবে পৌছে দিতে দেশটির কিছু টেলিকম কোম্পানি প্রতি ৫০০ ফুট অন্তর অন্তর একেকটি ফাইভজি টাওয়ার স্থাপনের উদ্যোগ নিচ্ছে। টাওয়ারে ভূসংযুক্ত ইলেক্ট্রিসিটি ও সাথে প্রায় রেফ্রিজারেটর আকৃতির একটি করে ইলেক্ট্রিক বক্স থাকতে পারে। তাই ইলেকট্রিসিটির বহুল ব্যাবহার ও মাইক্রোওয়েভ ফ্রিকোয়েন্সির ছড়িয়ে পড়াকেই আপাত দৃষ্টিতে ক্ষতিকারক দিক হিসেবে চিহ্নিত করছেন গবেষকরা।
তাই যুক্তরাষ্ট্রের এফসিসি (ফেডারেল কমিউনিকেশন কমিশন) এই ফাইভজি টাওয়ার স্থাপনকে স্বাস্থ্য ঝুঁকির দরুণ অবাঞ্চিত ঘোষণা করলেও টেলিকম কোম্পানিগুলো আইনি প্রক্রিয়ার মাধমে এই প্রক্রিয়াকে বাস্তবায়নের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।