অতিরিক্ত সুন্দরী হওয়ার যন্ত্রণা

অতিরিক্ত সুন্দরী হওয়ার যন্ত্রণা

প্রবাদ আছে, মানুষ মাত্রই সৌন্দর্যের পূজারি। তবুও সুন্দরের কিছু মধুর যন্ত্রণা আছে। নারী ও পুরুষের মনোজগৎ এতটাই আলাদা যে, কারো পক্ষে এখনো একজনকে অারেকজন পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারে না। নারী সৌন্দর্য যেমন তার কাছে অত্যন্ত মূল্যবান তেমনি পুরুষের কাছেও আকর্ষণীয়। ব্যক্তিগত পর্যায়ে নারীর সৌন্দর্য সব সময় যে আর্শীবাদী হওয়া যাবে এমনটি মনে করার সুযোগ নাই। অনেক সময় অতিরিক্ত সৌন্দর্যই নারীর জীবনে নানান যন্ত্রণার কারণ হয়ে থাকে।

আসলে সুন্দরের কোনো মানদণ্ড নেই। সাধারণত একজনের কাছে যা সুন্দর কিংবা কোনো নারীকে মহাসুন্দরী মনে হলেও অন্যজনের কাছে তা হয় না। সুন্দরের প্রতি প্রশংসার পাশাপাশি কোনো নারী যখন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সুন্দরী হন তখন তাকে কেমন কষ্টকর ও যন্ত্রণাময় জীবন পার করতে হয় তারই বর্ণনা দিয়েছেন এক সময়ের জনপ্রিয় মডেল অ্যালেক্সা সোওলিস। এখন তার বয়স ৫০ বছরের ঊর্ধ্বে। কিন্তু এখনো নিজের স্মৃতিতে সুন্দরের বিড়ম্বনাগুলো উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে। ‘দি কাট’ ম্যাগাজিনে এক নিবন্ধে নিজে অতিরিক্ত সুন্দরী হওয়ায় তিনি যে জ্বালাতনের মধ্য দিয়ে এতদূর এসেছেন তা উল্লেখ করেছেন।

অ্যালেক্সা সোওলিস বলেছেন, ‘আমার চারপাশের প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ আমাকে খুব সুন্দরী বলে আখ্যায়িত করতে শুরু করে। আমি লম্বা-কোমল গড়নের ছিলাম। আমার শরীর ছিল খুবই আকর্ষণীয়। খুবই গভীর ব্রাউন চোখ ও সুন্দর চুলের অধিকারী ছিলাম। ক্লাস এইট থেকেই মডেলিং শুরু করি। যখন পরিমিত মেকআপ, চোখের পরিপাটি সাজ, হাই হিল ও গাউন গায়ে সুসজ্জিত করে নিতাম তখন সত্যিই এক ঝড় তোলা রুপের ঝিলিকে অনেক তরুণের মনে আতঙ্ক তৈরি হতো।’

‘আমি স্বীকার করি, ওই সৌন্দর্য আমার জন্য অনেক দরজা খুলে দিয়েছিল। জনসংযোগ কর্মকতা, নিউজ প্রডিউসার এবং সংবাদ ও টকশো উপস্থাপক হিসেবে কাজ করেছি। এছাড়া টিভি নাটক, বিজ্ঞাপন ও থিয়েটারেও কাজ করেছি। অন্যদিকে সব প্রতিযোগীকে ছাড়িয়ে যেভাবে চাকরি পেয়েছি এর পেছনে মূল ভূমিকা ছিল আমার রূপ।’

মডেল অ্যালেক্সা সোওলিস এর সাম্প্রতিক কালের ছবি

 

‘অতিরিক্ত সুন্দরী হওয়ার সবচেয়ে বাজে দিক হলো অন্য নারীরা শুধু শুধুই হিংসার চোখে দেখে। নারীরাই আমাকে সারা জীবন কাঁদিয়েছে। তারা আমাকে বিশ্বাস করতো না। তারা কখনোই আমাকে তাদের স্বামীর পাশে সহ্য করতো না’।

‘আমার প্রতিযোগী, একটু আকর্ষণীয়, দেখতে ভালো ও ধনী নারীরা আমাকে ঘৃণা করতো। কলেজ শেষ করে যখন প্রথম চাকরি যোগ দিই তখন আমার নারী সহকর্মীরা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিল। তারা অর্ধেক বোতল মদ আমার ডেস্কে রেখে গিয়েছিল এটা প্রমাণ করতে যে, আমি কাজের জায়গায় বসে মদ্যপান করি’।

‘একটি মজার কথা হলো, আমি এক ভদ্রলোককে বিয়ে করি। কিন্তু তার ভাইয়ের স্ত্রী এখনো আমাকে পারিবারিক কোন দাওয়াতে ডাকেননি, এমনকি ফেসবুকেও আমাকে ব্লক করে দিয়েছেন অকারণে ’।

‘আমার উচ্ছল তারুণ্যের সময়টাতেই বন্ধু সংকটে ভুগেছি। তবে যে কোনো পুরুষকে আমার পাশে পাওয়া খুব সহজ ছিল। কিন্তু তারা কেন আমার সঙ্গে মিশতে চায় তা তো বুঝতেই পারতাম, অথচ মনে-প্রাণে বন্ধু কামনা করেও পাইনি’।

‘এখন আমার জীবনের এতটা বছর পার করে পেছনে ফিরে তাকিয়ে মনে প্রশ্ন আসে, আমার এই অতিরিক্ত সুন্দরী হওয়ার কারণে কী পেয়েছি! তখন দেখি, এটি আমাকে কিছু চাকরি আর বহু বয়ফ্রেন্ড দিয়েছে। এছাড়া আর কোনো অর্জন নেই এ রূপ দিয়ে?’

‘এখন স্বামীর সঙ্গে বেশ মানিয়ে নিয়েছি। অবশ্য শুরুতে বিভিন্ন আচরণ আর মদ্যপের কারণে ছেড়ে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তিনি এটা নিয়ন্ত্রণে এনেছেন। আর আমিও ছেড়ে যেতে পারিনি। কেননা নতুন করে কাউকে সঙ্গী করতে ভয় পাই’।

‘ওইসব দিন এখন শেষ। বয়স ৪০ বছর পার হতেই শরীরে একটু একটু মেদ জমতে শুরু করেছে। আমার মেকআপ, সাজগোজ নিয়ে আর আগের মতো সিরিয়াস নই। এখন আর আগের মতো ওসব সমস্যা নেই। আমার মতো চলি। কেউ আর আমার দিকে ওই মোহময় দৃষ্টিতে তাকায় না, বরং আমি যেন এক অদৃশ্য নারী। কেউ আমার দিকে আর মনোযোগ দেয় না।’

অ্যালেক্সা সোওলিসের বর্ণনায় এটি পরিষ্কার, তার জীবনের ওই অংশ খুব বেদনাবিধুর ছিল। কারণ যৌবনে যত রূপবতীই হোক না কেন বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সে সবার মনযোগের বাইরে চলে যাবে। তা নিয়ে আগের উৎসাহ থাকবে না। কেউ বয়সী রূপসীর দিকে তাকায় না সেই ভাবে, যৌবনে যেমনভাবে গুরুত্ব দেয়, এমনকি পরিবারেও কোনো গ্রহণযোগ্যতা থাকে না। তবে বয়সীরা একটা বিষয় খুব ভালো সুযোগ পায়, তা হলো- তারা নিজেকে অনেক পরিণত বা যোগ্য ব্যক্তি ভাবতে পারেন। অন্যদিকে তাদের কষ্ট লাগে যৌবনে যারা তার প্রতি খুব উৎসুক ও সজাগ দৃষ্টি ছিল, এখন তা নেই বলে। তাদের ভাবনায় এসে জড়ো হয় স্মৃতি। অনকে সময় বিষন্ন লাগে। মাঝে মাঝে মনে হয় নিজের সব মূল্য হারিয়ে ফেলেছেন যেন।