সিরিয়ায় ইরান-ইসরায়েল কি সম্মুখযুদ্ধে জড়াবে?

সিরিয়ায় ইরান-ইসরায়েল কি সম্মুখযুদ্ধে জড়াবে?

সিরিয়া যুদ্ধ দিন দিন জটিল আকার ধারণ করছে। সাম্প্রতিক উত্তেজনা ও যুদ্ধের নতুন ডাইমেনশনে এটা পরিস্কার দেখা যাচ্ছে যে, এর পরে সিরিয়াতে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধটা আর বাক্যযুদ্ধ না থেকে সম্মুখ সমরে গড়াতে যাচ্ছে। ঘটনা ধীরে ধীরে সেদিকেই এগুচ্ছে ।

তবে যুদ্ধটা এত সহজ হবে না। ওপর ওপর তারা নিজেদের স্বার্থটা জনপ্রিয় করতে চেষ্টা করবে এবং অবশ্যই নিজের দেশকে বাঁচিয়ে তারা লড়বে, এজন্য তাদের জনগনকে খুব একটা সাফাইও দিতে হবে না। ইরান ও ইসরায়েলের জন্য এটা সুবিধাজনক হলেও অভাগা সিরিয়ানদের জন্য বয়ে আনবে নতুন রক্তস্রোত।

কয়েক দিন আগে ইসরায়েলের প্রভাবশালী দৈনিক ‘হারেতজ’ খবর করেছিল যে, ফেব্রুয়ারির দশ তারিখে ইসরায়েল তার আকাশে একটি ইরানী ড্রোন নামিয়েছে। ড্রোনটি ইসরায়েলের আকাশ সীমায় প্রবেশ করলে ইসরায়েলি এপাচি হেলিকপ্টার ড্রোনটি ফলো করতে থাকে, এবং অবশেষে মিসাইল মেরে ফেলে দেয়। ইরান স্বীকার করেছে তারা ড্রোন পাঠিয়েছিল তবে সেটা ছিল পরিদর্শক ড্রোন, আর ইসরায়েল বলছে সেটা অস্ত্রে সজ্জিত ড্রোন ছিল।

ইরান সিরিয়ায় সামরিক ঘাঁটি আর জিপিএস নির্দেশিত মিসাইল তৈরির কারখানা স্থাপন করছে। যা ইরানের নিজের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজন বলে ইরান দাবি করছে। কিন্তু ইসরায়েল স্বাভাবিক ভাবেই তাদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় ইরানের এই পদক্ষেপকে হুমকি মনে করে। তাই তারা কিছুতেই ইরানকে সিরিয়ায় স্থায়ী সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করে গেঁড়ে বসতে দেবে না

 

কেন ইরান-ইসরায়েল সিরিয়াতে সম্মুখ সমরে লিপ্ত হবে একনজরে এবার কয়েকটি পয়েন্ট দেখে নিতে পারি:

ফেব্রুয়ারিতে ড্রোনটি যাত্রা করে ইরানের আল কুদস বাহিনী সিরিয়ার হোমস এর টি-ফোর বিমানঘাঁটি থেকে। কুদস ফোর্সের লিডার হচ্ছেন লেজেন্ডারি এবং দুর্ধর্ষ জেনারেল কাসেম সুলেমানি।

ফেব্রুয়ারির দশ তারিখে ইসরায়েলি বিমান সরাসরি টি-ফোর বিমানঘাঁটিতে আক্রমণ করে বেইসের কিছু ক্ষতি সাধন করে।

গত সোমবার যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য-ফ্রান্স সিরিয়া আক্রমণের আগেই, ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান সরাসরি এই টি-ফোর বিমানঘাঁটিতে আবারও হামলা করে। এতে তিনজন ইরানি সেনা নিহত হয়, যার মধ্যে আছেন, ড্রোন ইউনিটের লিডার কর্নেল মেহেদি দেগান।

ইসরায়েলি সামরিক সূত্র মোতাবেক, ‘এটি ইসরায়েলের প্রথমবারের মতো সরাসরি ইরানি সামরিক স্থাপনা বা সেনাদের ওপর আক্রমণ’। যদিও ফেব্রুয়ারিতে এই বিমানঘাঁটিতে একবার আক্রমণ করেছিল। আর এসব হচ্ছে অভার্ট আক্রমণ, কোন গোপনীয়তা নাই। যা নতুন মাত্রা যোগ করেছে ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্বে।

ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির প্রধান উপদেষ্টা আলি আকবর বেলায়েতি বলেছেন, ‘ইরান এর যথোপযুক্ত জবাব দেবে’।

ইরান সিরিয়ায় সামরিক ঘাঁটি আর জিপিএস নির্দেশিত মিসাইল তৈরির কারখানা স্থাপন করছে। যা ইরানের নিজের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজন বলে ইরান দাবি করছে। কিন্তু ইসরায়েল স্বাভাবিক ভাবেই তাদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় ইরানের এই পদক্ষেপকে হুমকি মনে করে। তাই তারা কিছুতেই ইরানকে সিরিয়ায় স্থায়ী সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করে গেঁড়ে বসতে দেবে না।

মূলত ইসরায়েলের সাথে ইরানের দ্বন্দ্ব হতে যাচ্ছে সুলেমানির সাথে ইসরায়েলের দ্বন্দ্ব। নিউ ইয়র্ক টাইমসে সম্প্রতি এক কলামে থমাস ফ্রাইডম্যান যা বলেছেন আমিও তার সাথে একমত। তিনি লিখেছেন, ‘সুলেমানির পিঁছু না হটা পর্যন্ত ইরানের কুদস বাহিনী অপ্রতিরোধ্যই থাকছে, অতএব ইসরায়েলের উচিত হবে আঁটঘাট বেধে তৈরি হওয়া’

 

ইসরায়েলি আর্মির উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল ইওভ গ্যালান্টের মতে, ‘সিরিয়াতে ইসরায়েলের সুস্পষ্ট স্বার্থ রয়েছে এবং আমরা সেখানে রেড লাইন স্থাপন করেছি। আমরা কিছুতেই সিরিয়া থেকে লেবাননে (হিজবুল্লাহদের হাতে) অস্ত্র যেতে দেব না, এবং আমরা সেখানে কোন ইরানি ঘাঁটি স্থাপনও মেনে নেব না’।

দেখা যাচ্ছে, ইসরায়েল চান্স পেলেই সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানি বাহিনিকে সরাসরি হামলা করছে। এতে রাশিয়া বারবার ইসরায়েলকে এসব হামলা বন্ধ করতে বললেও আজ পর্যন্ত ইরান কিংবা সিরিয়ার পক্ষ নিয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কোন সামরিক পদক্ষেপ নেয় নাই রাশিয়া। তাতে প্রমাণিত হয়, রাশিয়া চাচ্ছে না ইসরায়েলের সাথে এই মুহূর্তে কোন যুদ্ধে জড়াতে। অর্থাৎ, ইসরায়েলের সাথে ইরানের যুদ্ধে ইরান একা। তবে রাশিয়ার বিমান বাহিনীর সহযোগিতা ছাড়া ইরান ইসরায়েলের বিরুদ্ধে খুব একটা সুবিধা করতে পারবে না। তবে ইসরায়েলের সেনা বাহিনী স্থল পর্যায়ে যুদ্ধে জড়ালে খেলা ইরানের দিকে মোড় নেয়ার সম্ভাবনাই বেশি। কিন্তু এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে ইসরায়েলের সাথে পেরে উঠতে হলে ইরানের ভালো এয়ার সাপোর্ট লাগবে।

ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের অন্যতম মূল খেলোয়াড় হচ্ছেন জেনারেল কাসেম সুলেমানি। যিনি আজ পর্যন্ত কোন যুদ্ধে হারেন নি। ব্যাটেল হার্ডেন্ড এই জেনারেল আরব ওয়ার্ল্ডের রাজনৈতিক আর যুদ্ধের ডাইনামিক্স সবচেয়ে ভালো বোঝেন। তার হাতে ইরান বহু ফসল ঘরে তুলেছে। দামেস্ক-সানা-বাগদাদ-লেবানন আজ অনেকটা তার নিয়ন্ত্রণে। যদিও কাসেম সুলেমানির সাথে ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির কিছু দ্বন্দ্ব রয়েছে, কিন্তু সুলেমানির আছে সুপ্রিম লিডার আলি খামেনির অকৃত্রিম সমর্থন।

মূলত ইসরায়েলের সাথে ইরানের দ্বন্দ্ব হতে যাচ্ছে সুলেমানির সাথে ইসরায়েলের দ্বন্দ্ব। নিউ ইয়র্ক টাইমসে সম্প্রতি এক কলামে থমাস ফ্রাইডম্যান যা বলেছেন আমিও তার সাথে একমত। তিনি লিখেছেন, ‘সুলেমানির পিঁছু না হটা পর্যন্ত ইরানের কুদস বাহিনী অপ্রতিরোধ্যই থাকছে, অতএব ইসরায়েলের উচিত হবে আঁটঘাট বেধে তৈরি হওয়া’।

এখন অবস্থা যা দাঁড়িয়েছে তাতে আর আনুষ্ঠানিক ঘোষণার কিছু থাকছে না। ধীরে ধীরে ইরান ইসরায়েল যুদ্ধ সিরিয়াতে মূল আলোচ্য ইস্যু হয়ে উঠলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।