শেষের পথে প্রিমিয়ার লিগ। প্রায় পুরোটা মৌসুমই কেটেছে সিটিজেনদের দাপটে। ইউনাইটেডের হারে পাঁচ ম্যাচ হাতে রেখেই সিটি শিরোপা নিশ্চিত করে ফেলায় প্রিমিয়ার লিগ নিয়ে চলতি মৌসুমের উত্তেজনা আগেভাগেই শেষ হয়ে গিয়েছে। এখন বিশ্লেষকরা হিসাব কষছেন পিএফএর সম্ভাব্য বর্ষসেরা কে হতে পারেন তা নিয়ে।
তালিকায় প্রথম নামটি অনুমিতভাবেই মিসরীয় তারকা মোহাম্মদ সালাহ’র। এরপরেই রয়েছেন সিটি তারকা কেভিন ডি ব্রুইনি, স্পার্স স্ট্রাইকার হ্যারি কেন, সিটির মিডফিল্ডার ডেভিড সিলভা-লিরয় সানে এবং ইউনাইটেড এর গোলরক্ষক ডেভিড ডি গিয়া। পূর্ণাঙ্গ বিশ্লেষণে ডেইলি মেইলের বিশ্লেষকরা ব্যাখ্যা করেছেন এই নামগুলোকে বেছে নেয়ার কারণও।
মোহাম্মদ সালাহ (লিভারপুল)
মৌসুমের শুরুতেও এ নামটি সম্ভাব্য বর্ষসেরার তালিকায় কেউ কল্পনা করেছেন বলে মনে হয় না। প্রিমিয়ার লিগে প্রথম প্রচেষ্টায় চেলসির হয়ে ডাহা ফেল মারা সালাহকে যখন ৩৯ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে দলে ভেড়ান ক্লপ, বিস্মিত হয়েছিলেন অনেকেই। ক্লপের জুয়াটা কতটা কাজে লেগেছে তা সালাহর নৈপুণ্যেই স্পষ্ট।
চেলসিতে ফ্লপ সালাহ রোমায় যাবার আগে আরেক ইতালিয়ান ক্লাব ফিওরেন্টানায় কাটান এক মৌসুম। সেখান থেকেই বলা যায় পূন:জন্ম ঘটে তার। রোমায় ধারাবাহিক সালাহর নৈণুপ্য নজর কাড়ে রেডস কোচ ক্লপের। যার জন্য ৩৯ মিলিয়ন পাউন্ড ঢালতেও দুবার ভাবেননি তিনি। মৌসুমের শেষে অবশ্য সালাহকে কতটা কম দামে পেয়েছেন ক্লপ এই ভাবনায় মত্ত বাকিরা।
মৌসুমের মধ্যপথেই লিভারপুলকে অকুল পাথারে ফেলে বার্সায় যখন পাড়ি জমান কৌতিনহো প্রমোদ গুনেছিলেন অনেকেই। কৌতিনহোর বিদায়ের পর মানে এবং ফিরমিনহোকে নিয়ে সালাহ গড়ে তুলেছেন ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলের অন্যতম ভয়ংকর আক্রমণভাগ। যার ওপর নির্ভর করে বহু বছর পর রেডসরা স্বপ্ন দেখছে ইউরোপিয়ান অঞ্চলে নিজেদের আভিজাত্য ফিরে পাবার।
অর্জন : চলতি মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগে লিভারপুলের ৪০টি গোলে সরাসরি অবদান রেখেছেন সালাহ। ৩০ গোলের সাথে রয়েছে ১০ টি অ্যাসিস্ট। প্রথম আফ্রিকান খেলোয়াড় হিসাবে প্রিমিয়ার লিগে ৩০ গোলের রেকর্ড করেছেন তিনি।
সম্ভাবনা : চলতি মৌসুমের নৈপুণ্য বিবেচনায় পিএফএর বর্ষসেরা হবার ক্ষেত্রে সালাহর সম্ভাবনাই সবচেয়ে বেশি।
কেভিন ডি ব্রুইন (ম্যানচেস্টার সিটি)
প্রথমবারের প্রচেষ্টায় প্রিমিয়ার লিগে এসে প্রমোদ গোণা আরেক খেলোয়াড় ডি ব্রুইন। কাকতালীয়ভাবে তিনিও চেলসিতেই ছিলেন। স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে ফ্লপ এই বেলজিয়ান এখন বিবেচিত হন প্রিমিয়ার লিগের অন্যতম প্রতিভা হিসাবে।
পেপ গার্দিওলার প্রথম মৌসুম; যেটি নিঃসন্দেহে ব্যর্থ ছিল, সেটিকে বদলে ৫ ম্যাচ হাতে রেখে লিগ শিরোপা জেতানোর অন্যতম মূল কারিগর ডি ব্রুইন।
ডি ব্রুইনের সৃষ্টিশীলতা সিটিকে সাহায্য করেছে দুর্দান্তভাবে। চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত প্রিমিয়ার লিগে সিটি করেছে ৯৩ গোল; ম্যাচ প্রতি প্রায় তিনটি করে। যা সিটিকে পরিণত করেছে প্রিমিয়ার লিগ ইতিহাসের অন্যতম ডমিনেটিং ফোর্সে।
মৌসুমজুড়েই দুর্দান্ত খেলা ডি ব্রুইনের শ্রেষ্টত্বের পথে মূল বাধা হয়ে দাড়াতে পারে ক্রিসমাসের পর মাত্র এক গোল পাওয়াটা। তবে ইতিবাচক দিক হতে পারে সিটির শিরোপা জয়।
অর্জন : চলতি মৌসুমে ডি ব্রুইন গোল করেছেন ৭টি এবং মোট অ্যাসিস্ট সংখ্যা ১৫টি, অন্য যে কারো চেয়ে তিনটি বেশি।
সম্ভাবনা : সিটির শিরোপা জয়ে মূখ্য ভূমিকা পালন করলেও সালাহর ব্যাক্তিগত নৈপুণ্য ডি ব্রুইনির জয়ের পথে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দেখা দিতে পারে।
হ্যারি কেন (টটেনহাম হটস্পার)
স্পার্সদের জন্য আরো একটি শিরোপাশূণ্য মৌসুম হলেও ব্যক্তিগত নৈপুণ্যে কেন ছিলেন দারুণ উজ্জ্বল। গোলপোস্টের সামনে দুর্দান্ত কেন স্পার্সদের পরিণত করেছেন সমীহা জাগানিয়া এক শক্তিতে। তার পায়ের ওপর ভর করে শুধু প্রিমিয়ার লিগই না, ইউরোপেও দারুণ করছে স্পার্সরা। গত চার মৌসুম ধরে উত্তরোত্তর উন্নতি করা কেন দারুণভাবেই লড়াইয়ে আছেন গোল্ডেন বুটের।
সালাহর চেয়ে এখনো পাঁচ গোল পিছিয়ে থাকলেও হাতে আরো পাঁচটি ম্যাচ থাকায় কেন এর এখনো সম্ভাবনা রয়েছে প্রিমিয়ার লিগের সর্বোচ্চ স্কোরার হওয়ার।
অর্জন : ২০১৪-১৫ মৌসুম থেকে প্রিমিয়ার লিগে কেন এর চেয়ে বেশি গোল করতে পারেননি কেউই। এই মৌসুমে এ পর্যন্ত তার গোল রয়েছে ২৫টি এবং অ্যাসিস্ট ২টি।
সম্ভাবনা : নিঃসন্দেহে ডার্কহর্স, তবে বাস্তবতা বিবেচনায় তৃতীয় হবার সম্ভাবনাই বেশি।
ডেভিড সিলভা (ম্যানচেস্টার সিটি)
সিটির অন্যতম মূল ভরসা সিলভা। আট মৌসুম কাটিয়ে সিটির হয়ে জিতেছেন তিনটি প্রিমিয়ার লিগ।
সিটির তরুণ স্কোয়াড, যা প্রতিভাবান খেলোয়াড়ে পরিপূর্ণ, সেখানে অভিজ্ঞ সিলভার অন্তর্ভূক্তি যোগ করেছে বাড়তি শক্তি। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সিলভা শুরু থেকে খেলেছেন এমন একটি ম্যাচও হারেনি সিটি; ম্যাচের হিসাবে টানা পচিশ ম্যাচ।
নিঃসন্দেহে সিটির শিরোপা জয়ে মূখ্য ভূমিকা পালন করেছেন ডি ব্রুইন। কিন্তু তাতেও বিন্দুমাত্র ম্লান হয় না ৩২ বছর বয়সী সিলভার নৈপুণ্য।
অর্জন : মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগে সিলভার অ্যাসিস্ট ১১ টি, তার চেয়ে বেশি সংখ্যক অ্যাসিস্ট রয়েছে শুধু দুইজনের। তারই দুই ক্লাব সতীর্থ সিলভা এবং সানে। এ পর্যন্ত গোলও করেছেন আটটি।
সম্ভাবনা : বর্ষসেরা হবার সম্ভাবনা কিছুটা কম থাকলেও শীর্ষ পাঁচে জায়গা নিশ্চিতই বলা যায়।
লিরয় সানে (ম্যানচেস্টার সিটি)
সিটিজেনদের হয়ে চলতি মৌসুমে নজরকাড়া নৈপুণ্য দেখানো আরেক তারকা সানে। ৩৭ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে শালকে থেকে সিটিতে নাম লেখানো সানের প্রথম মৌসুমটা কেটেছিলো সাদামাটা। কিন্তু চলতি মৌসুমে নিজের প্রতিভার প্রমাণ দিয়ে হয়ে উঠেছেন সিটির অন্যতম মূল খেলোয়াড়ে।
প্রিমিয়ার লিগে মানিয়ে নিতে একটু সময় নিলেও গার্দিওলার ছোয়ায় তিনি হয়ে উঠেছেন দুর্দান্ত। শুধু সিটির হয়েই না জার্মান জাতীয় দলেও রিউসের জায়গায় দারুণ মানিয়ে নিয়েছেন এ তরুণ তারকা।
পিএফএর বর্ষসেরার সাথে সানের নাম রয়েছেন পিএফএর উদীয়মান বর্ষসেরার তালিকায়ও।
অর্জন : চলতি মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগে সানে এ পর্যন্ত গোল করেছেন ৯টি এবং অ্যাসিস্ট করেছেন ১২টি। তার চেয়ে বেশি অ্যাসিস্ট রয়েছে শুধু ডি ব্রুইনিরই।
সম্ভাবনা : পিএফএর বর্ষসেরা হতে না পারলেও বর্ষসেরা উদীয়মান খেলোয়াড় হবার দারুণ সম্ভাবনা রয়েছে এ তরুণের।
ডেভিড ডি গিয়া (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড)
গত কয়েক মৌসুমে মোটা অংকের বিনিময়ে একাধিক খেলোয়াড় দলে ভেড়ালেও এখনো ডেভিলসের মূল একাদশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় ডি গিয়াই।
ইউনাইটেড আরো একবার প্রিমিয়ার লিগে ব্যর্থ মৌসুম কাটালেও তার দায় কোনোভাবেই ডি গিয়ার ওপরে বর্তায় না। যে কয়টি গোল হজম করেছেন রক্ষা করেছেন তার চেয়েও অনেক বেশি। আর যে কয়টিই খেয়েছেন সেগুলোতে তার চেয়ে দায় বেশি রক্ষণভাগের।
মৌসুম জুড়েই নজকাড়া নৈপুণ্য দেখাতে গিয়ে ডি গিয়া প্রমাণ করেছেন কেন তাকে বিশ্বের অন্যতম সেরা গোলরক্ষক বলা হয়।
অর্জন : এ পর্যন্ত ১৬টি ম্যাচে ক্লিনশীট (গোলবিহীন) রাখতে সক্ষম হন ডেভিড ডি গিয়া। ১৯৭৬ সালে স্পার্স গোলরক্ষক প্যাট জেনিংস এর পর আরো কোনো গোলরক্ষকই বর্ষসেরা হতে পারেননি। নৈপুণ্য বিবেচনায় ডি গিয়া নিঃসন্দেহে যোগ্য।
সম্ভাবনা : ইউনাইটেডের ব্যর্থতাই কাল হয়ে দেখা দিতে পারে ২৭ বছর বয়সী এ স্প্যানিয়ার্ডের বর্ষসেরা হবার পথে।