সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র-ব্রিটিশ-ফরাসি বাহিনীর হামলা শুরু

সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র-ব্রিটিশ-ফরাসি বাহিনীর হামলা শুরু

মিত্রশক্তি যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সকে সাথে নিয়ে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক, হোমস ও হামায় একযোগে বিমান হামলা চালিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, যেসব জায়গায় ‘রাসায়নিক অস্ত্র’ রয়েছে শুধু সেসব স্থাপনাকে লক্ষ্য বানিয়ে হামলা চালানো হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শনিবার সকালে হোয়াইট হাউস থেকে এই হামলা শুরুর ঘোষণা দেন। ঘোষণায় ট্রাম্প বলেন, কিছুক্ষণ আগে আমি সশস্ত্র বাহিনীকে সিরিয়ার বাশার আল আসাদের রাসায়নিক অস্ত্রের স্থাপনাগুলো লক্ষ্য করে আক্রমণ চালানোর নির্দেশ দিয়েছি। যুক্তরাজ্য ও  ফ্রান্সের বাহিনী আমাদের সাথে যৌথভাবে এই আক্রমণে অংশ নিচ্ছে।

ট্রাম্প বলেছেন, এই হামলার একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে, বাশার আল আসাদের রাসায়নিক অস্ত্রের উৎপাদন এবং এর ব্যবহার বন্ধের বন্দোবস্ত করা।

তার ঘোষণার সময়ই দামেস্ক, হোমস এবং হামায় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায় বলে আলজাজিরার খবরে বলা হয়েছে।

সিরিয়া এই হামলাকে ‘বর্বরতাপূর্ণ আগ্রাসন’ বলে উল্লেখ করেছে। রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ‘সানা’র বরাতে সিরিয়া সরকার জানিয়েছে, ‘এ হামলায় সিরিয়াকে একচুল পিছু হটাতে পারবে না। সিরিয়ার শক্তিশালী বাহিনী জনগণের সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই হামলায় প্রতিরোধ গড়ে তুলবে’।

রাশিয়ার সংবাদ সংস্থা তাস জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে ছোঁড়া ৭১টি মিসাইল ভূপাতিত করতে সক্ষম হয়েছে সিরিয়ার প্রতিরক্ষা বাহিনী।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের এই হামলা আগ্রাসনমূলক’। বিবৃতিতে হামলার পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করে আরো বলা হয়েছে, এই হামলা নিয়ে আলোচনা করতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বিশেষ সভা ডাকতে পারে রাশিয়া।

মিত্র দেশ যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে বলেছেন, ‘সিরিয়ার সরকার সেদেশের জনগণের বিরুদ্ধে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করছে। আমাদের কাছে প্রমাণ রয়েছে, অতএব এই হামলায় কারো অবাক হওয়ার সুযোগ নেই। যেমন, দুমায় আইসিস নেই, সেখানে সিরিয়া সরকারই জনগণের ওপর রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করেছে’।

অপর মিত্র দেশ ফ্রান্স জানিয়েছে, তারা রাশিয়ার সাথে কোন রকম দ্বন্দ্ব বা যুদ্ধে জড়াতে চায় না। ফ্রান্স সংঘাতের পক্ষে নয় বরং সিরিয়া সরকারের রাসায়নিক অস্ত্রের মজুত, উৎপাদন ও ব্যবহার বন্ধে এই হামলায় যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের পাশে রয়েছে বলে জানান দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ফ্লোরেন্স পার্লি।

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও জোটের এই হামলায় নিন্দা জানিয়েছে ইরান। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের মজবুত মিত্র ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ও যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী এই হামলার মধ্য দিয়ে তারা অপরাধ করেছেন।

শনিবার সকালে বাশার আল আসাদ দ্রুত তার কার্যালয়ে প্রবেশ করেন।

যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্রদের এই পদক্ষেপের মধ্যে দিয়ে সিরিয়ায় গত সাত বছর ধরে চলা রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা হল বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। গত ৭ এপ্রিল বিভিন্ন আন্তর্জতিক সংবাদমাধ্যম সিরিয়ায় উদ্ধার ও চিকিৎসা কাজে নিয়োজিত কয়েকটি দাতব্য সংস্থার বরাত দিয়ে দৌমায় রাসায়নিক হামলার খবর প্রকাশ করে।

এরপর বুধবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সেখানে ৪৩ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে জানায়, লক্ষণ দেখে বিষয়টি বিষাক্ত রাসায়নিকের হামলা বলেই মনে হয়েছ। দৌমায় আরও পাঁচশতাধিক মানুষকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে বলেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে।