‘দেশকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে আমি বই লেখি না’

‘ওরহাম পামুক’-এর সাক্ষাৎকার

‘দেশকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে আমি বই লেখি না’

সংবাদ ও সাহিত্য বিষয়ক অনলাইন ম্যাগাজিন স্লেইট এর পক্ষ থেকে সাংবাদিক ও লেখক আইজ্যাক চটিনার গত বছর তার আই হ্যাভ টু আস্ক’ সিরিজের একটি পর্বে নোবেল বিজয়ী লেখক ওরহান পামুকের এই সাক্ষাৎকারটি নেন। ‘মাই নেইম ইজ রেড’, ‘স্নো’, ‘ইস্তাম্বুল’ এবং সম্প্রতি প্রকাশিত ‘রেড হেয়ারড উইমেন’ ছাড়াও আরো অনেক পুরস্কারপ্রাপ্ত বইয়ের লেখক ওরহান পামুক উপন্যাস ছাড়াও আরো অনেক ননফিকশন রচিয়তা। তিনি প্রায়ই নিউ ইয়র্কে হাজির হন তার দেশ তুরস্কের চলমান চিত্র নিয়ে কথা বলতে। মতামতের স্বাধীনতা ও আর্মেনীয় গণহত্যা এবং কুর্দি সম্প্রদায়ের ওপর তুর্কিদের অন্যায়-অনাচারের প্রতি আন্তর্জাতিক মহলের মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করায় তুরস্ক সরকার স্বনামধন্য এই লেখকের সমালোচনা করার সাথে সাথে দাঁড় করান বিচারের কাঠগড়ায়ও। কিভাবে দীর্ঘ সময়ের পরিক্রমায় লেখক লিখে চলেছেন এবং লেখকের কাজের রুটিনসহ সাক্ষাৎকারটিতে আলোচনায় আসে তুরস্কে চলমান রাজনৈতিক শুদ্ধি অভিযান। আলাপচারিতাটি ‘জবান’-এর জন্য এটি তর্জমা করেছেন শাহরিয়ার মাহমুদ তুহিন।

 

ওরহান পামুক : আমি ইস্তাম্বুল থেকে ঘন্টাখানেক দুরত্বের একটি দ্বীপে আছি। সকালে আমি সাঁতার কাটি। এরপর সারাদিন কাজ করি, আছি একটি গ্রীষ্মকালীন অবকাশকেন্দ্রে। এই সাক্ষাৎকার শেষে আমি আবার সাঁতার কাটব। এভাবেই আজকের দিনটা শেষ হবে।

আইজ্যাক চটিনার : এক সাক্ষাৎকারে আপনি বলেছিলেন যে আপনি দৈনিক দশঘন্টারও বেশি সময় কাজ করেন, এখনো কি এমন করেন?

পামুক : হ্যাঁ, অবশ্যই। আমার কাজ করতে ভাল লাগে। তবে আমি উপন্যাস লেখাকে কাজ হিসেবে দেখি না কারণ লেখার সময় আমার তেমনটাই অনুভব হয় যেমনটা কোন বালক সারাদিন ধরে তার বল নিয়ে খেলার সময় অনুভব করে।

ননফিকশন লেখালেখিতে কোন আগ্রহ পাচ্ছেন?

পামুক : না, আমি এখন নতুন একটি উপন্যাস লিখছি। ননফিকশন নিয়ে ভাবার বদলে বেশিরভাগ সময়ই আমার মন উপন্যাসের নতুন কোন চিত্র কল্পনায় ব্যস্ত থাকে।

কিন্তু যখন আপনি ননফিকশন লেখেন, তখন কি সেটাকে কোন কাজ বলে মনে হয়?

পামুক : এতে সাংবাদিকতার অনুভূতিই বেশি কাজ করে। এখন, এই বয়সে, আমি শুধু তাই নিয়ে লিখি, যা নিয়ে লিখতে আমার ইচ্ছে হয় এবং এসময় আমার মনে হয় আমি নানারকম খেলা, আবিস্কার ও মজার মধ্যে আছি। আমি অবশ্যই একজন সুখী লেখক।
 
শুরুর দিককার সময় থেকে এবারকার দশম উপন্যাস লেখার পদ্ধতির মাঝে কোন পার্থক্য আছে কি?

পামুক : শুরুর দিকে, প্রায় ৪০ বছর আগে যখন আমি শুরু করেছিলাম, খুব বেশি কাব্যিক ছিলাম, দৃষ্টিসীমা ছিল আরো বড়, এবং খুব সম্ভবত আরো বেশি অনুসন্ধিৎসু মনও ছিল আমার। কিন্তু এবার আমি একটা ছোট উপন্যাস লিখতে চেয়েছিলাম যেখানে থাকবে মেটাফিজিকস এবং দর্শন। কূপ খননকারী এক গুরু ও তার শিষ্যকে নিয়ে আমি একটি বাস্তবধর্মী গল্প বলতে চেয়েছি সেখানে। ১৯৮৮ সালের গ্রীষ্মে আমি যেখানে থাকতাম তার পাশেই এই মানুষগুলোকে আমি দেখতে পাই। একটি দ্বীপে, এদের পুনরায় দেখি আমি, তখন আমি একটি বই লিখছিলাম। তারাই ছিল সর্বশেষ প্রাচীন পদ্ধতির কূপখননকারী এবং তারা তখনো ইস্তাম্বুলের আশপাশে কূপ খননের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছিল। কারণ সেখানে যথেষ্ট সরকারি পানির সুবিধা ছিল না, বিশেষ করে সত্তর ও আশির দশকে, প্রত্যেকে নিজ নিজ বাড়িতে কূপ খনন করাতো এবং নিজের বাগানেই পানির ব্যবস্থা করে নিত। আমি দেখেছিলাম যখন তারা কূপ খননের কাজ করছিল, সেই বৃদ্ধ গুরু কূপ খননকারী ও তার কিশোর শিষ্যকে, যাদের মাঝে সম্পর্কটা ছিল পিতা পুত্রের মত। বৃদ্ধ গুরু কূপ খোদক তার শিষ্যকে শিখাচ্ছিল আবার গালমন্দও করছিল। এবং সেই সাথে খুবই সতর্কতার সাথে আগলে রাখছিল ও যত্ন নিচ্ছিল তার কিশোর শিষ্যের। এই চিত্র আমি প্রত্যেকদিনই দেখতাম যখন আমি রাতে শহরের কেন্দ্রে যেতাম। তাদের এই সম্পর্ক আমাকে নাড়া দেয়, খুব সম্ভবত এই কারণে যে আমি এমন ধরনের এক পিতার কাছে বড় হয়েছি যিনি আমার আশপাশে খুব একটা বেশি থাকতেন না এবং কখনোই আমাকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেননি বা আমার সম্পর্কে আমার বাবা বেশি কিছু জানতেনও না।

আপনার পিতা কি এখনো বেঁচে আছেন? নাকি মারা গেছেন?

পামুক : না নেই, উনি মারা গেছেন।

তিনি কখন মারা যান?

পামুক : তিনি মারা গিয়েছেন প্রায় ১২ বছর আগে।

তিনি কি কখনো আপনার লেখা পড়েছিলেন?

পামুক : তিনি আমাকে খুব সাহায্য করতেন। আমি আমার নোবেল পুরষ্কার গ্রহণের বক্তব্য লিখেছিলা‌ম আমার বাবার সুটকেস নিয়ে। তিনিও চেয়েছিলেন একজন কবি হতে, লিখেছিলেন কবিতাও। কিন্তু সফল হতে পারেননি, অবশ্য সফলতার পেছনেও উনি দৌঁড়াননি। তাই মৃত্যুর আগে উনি আমাকে তার কিছু লেখার একটি সংগ্রহ দিয়ে গিয়েছিলেন, যা নিয়ে আমি একটি প্রবন্ধ লিখেছি। এটি একটি কাব্যিক প্রবন্ধ।

আপনার পিতা প্রথমবার আপনার লেখা পড়ার পর আপনার কি অনুভূতি হয়েছিল তা কি আপনার মনে আছে?

পামুক : আমার পিতা ছিলেন অতিশয় দয়ালু এবং চমৎকার বিনয়ী। তিনি আমার সমালোচনা না করায় আমি অবাক হয়ে যাই। তিনি আমার ও আমার ভাইদের সাথে এমনভাবে আচরণ করতেন যেন আমরা সবাই খুব জিনিয়াস, আমার বাবার সাথে আমার সম্পর্কই এই বইয়ের মূলছন্দ বিনির্মাণ করেছে। এছাড়াও যেহেতু ‘দ্য রেড হেয়ার্ড উইমেন’ উপন্যাসের মূল ভিত্তি হচ্ছে ভাবপ্রবণতা ও ব্যক্তিগত সম্পর্ক, এটাকে কাহিনীর ভিত্তিতে তুলনা করা যায় সফোকেলের উপন্যাস ‘ইডিপাস রেক্স’ এর সাথে। যা মূলত পুত্র কতৃক পিতাকে হত্যার গল্প। আমার গল্পটা কিছুটা পরাশ্রয়ী প্রকৃতির বলা চলে, এবং ফার্সি কবি ফেরদৌসীর অনবদ্য উপন্যাস শাহনামা বা ‘বুক অফ কিংস’ ও ‘ইডিপাস রেক্স’ এর অনুরুপ একটি উপাখ্যান, যেখানে রুস্তম ও সোহরাব এর কথা এসেছে, কিন্তু এইবার পিতা তার নিজ পুত্রকে হত্যা করেছে। এ হচ্ছে পিতা কর্তৃক পুত্র হত্যার গল্প। এগুলো হলো পশ্চিমা ও ইসলামী সভ্যতার কিছু অনুশাসনমূলক গল্প।

আপনি জানেন, প্রত্যেক বছর, একটা সেমিস্টার আমি কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে পড়াই। সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাটলারস লাইব্রেরি সফরকালে এরিস্টটল, প্লেটো, শেকসপিওর এদের নাম বিশালাকারে বড় হাতের অক্ষরে করে লেখা আছে।

কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাসিক সাহিত্য পড়ানোর ক্ষেত্রে খুব ভালো। তখন আমি নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করি, পশ্চিমা ক্লাসিকগুলো নিয়ে কি করা যায়। এবং ইডিপাস রেক্সকে কিসের সাথে তুলনা করা যায়।

ইডিপাসকে আত্মকেন্দ্রিক হিসেবে সাব্যস্ত করে ফেলার প্রবণতা আমাদের মধ্যে রয়েছে। কেননা সে তার পিতাকে খুন করেছে, কিন্তু তারপরও আমরা তাকে ভিন্ন চোখে দেখি। এবং রুস্তমকে কর্তৃত্বপরায়ণ হিসেবে সাব্যস্ত করার প্রবণতাও আমরা দেখাই, নিজ সন্তানকে খুন করেছিল বলে।

কেন? কারণ ফেরদৌসীর ‘শাহনামা’ উপাখ্যানের সম্পূর্ণ গল্প জুড়ে রুস্তম কর্তৃক সোহরাবকে খুন করার ব্যাপারটাকে যৌক্তিকভাবে গ্রহণযোগ্য করে তোলারই চেষ্টা করা হয়েছে আমার লেখায়।

আমার মনে হয়, আমরা আধুনিক যুগের মানুষরা যেভাবে কোন কিছুর পাঠোদ্ধার করি, সফোকেলের ইডিপাস রেক্সও ওই একই প্রকারের পুত্র কর্তৃক পিতাকে হত্যাকে গ্রহণযোগ্য করার চেষ্টার ফলাফল। আমরা ইডিপাসকেকে সম্মান করি, আমাদের সমবেদনাবোধ থেকেই আমরা তার ব্যথা অনুভব করতে পারি। তাকে বুঝতে পারি বলেই, আমরা তার অপরাধকে সম্মান করি। তাই আমি পিতা-পুত্র, পিতার অভাব, পুত্রের স্বকীয়তা বা স্বতন্ত্রতা এই বিষয়গুলো নিয়েই লিখতে চেয়েছিলাম।

আপনি সচেতনভাবে আপনার লেখাকে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সেতু হিসেবে কতটুকু দেখেন?

পামুক : আমি এই ব্যাপারটা নিয়ে এত ভাবতে চাই না। নব্বইয়ের মাঝামাঝি থেকে বিশেষত ২০০০ সালের শুরুর দিকে যখন আমার বইগুলো আন্তর্জাতিকভাবে অনুবাদ হওয়া শুরু হয়, তখনো আমি সজ্ঞানে এমনটা চাইনি যে সবাই আমার বইগুলোকে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মাঝে সেতু বলা শুরু করেছিল। কারণ আমার দেশকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরার জন্য আমি লিখি না। আমি নিজের কাছে নিজে সরল ও পরিস্কার থাকার চেষ্টা হিসেবেই হয়তো লিখি। বা হয়তো আরো কোন গভীর কারণ থাকতেও পারে। এই একই কথা আমি ইস্তাম্বুলের একজন লেখক হওয়ায় শুনে আসছি। অবশ্যই আমি ইস্তাম্বুল নিয়ে লিখে আসছি। আমার সারাটা জীবন আমি ইস্তাম্বুলেই কাটিয়েছি। এখন আমি ৬৫, প্রায় ৬৫ বছর ধরে এই শহরেই আছি আমি। অনিবার্য ভাবেই আমার গল্পগুলো তাই ইস্তাম্বুলকে ঘিরে, কিন্তু এটা কোন আরোপিত বিষয় নয়। আমি নিজেকে বলিনি যে আমাকে ইস্তাম্বুল নিয়ে লিখে লেখক হতে হবে। অন্যান্য লেখকদের মত আমি তাদের নিয়েই লিখছিলাম যাদের আমি জেনেছি, দেখেছি। হ্যা, আমি মনুষ্যত্ব নিয়ে লিখি, এবং অবশেষে ইস্তাম্বুলের মনুষ্যত্ব নিয়েও। বিংশ শতকের শুরুর দিকে, আমি প্রথম লক্ষ্য করি যে কিছু আন্তর্জাতিক সাহিত্য-সমালোচক আমাকে প্রথম সেতু হিসেবে উল্লেখ করেন, যাহোক সে কথা বাদ। অতঃপর, ইস্তাম্বুলের একজন লেখক হিসেবে আবার বলছি প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সেতু হওয়া আমার লক্ষ্য নয়, তবে আমি এসব থেকে শিখছি। সেতু হওয়ার জন্য নয়, আমার পৃথিবীর এই আমার অংশকে পৃথিবীর বাকি অংশের কাছে ব্যাখ্যার জন্যও নয়, বরং আমি লেখক হিসেবে আমার গল্প বলছি। আমার গল্পগুলোর সাফল্যে অনেক কিছুই প্রকাশিত হয়, কিন্তু এটাই আমার অনুপ্রেরণার বিষয় নয়। সেতু হওয়ার জন্য আমি লেখায় অনুপ্রেরণা নেই না।

আপনি কি নিজেকে ইউরোপীয় ভাবেন?

পামুক : হ্যা, অন্যান্য তুর্কিদের ন্যায় আমিও নিজেকে একই সাথে ইউরোপিয়ান এবং তুর্কি ভাবি। যদিও আমি ধর্মনিরপেক্ষ, তবে ইসলামী সংস্কৃতির একপ্রকারের আধুনিক সংস্করণও আমার আছে বটে। আমি ধার্মিক নই, তবে হ্যা আমি সেক্যুলার হলেও এই সভ্যতারই অন্তর্ভুক্ত।

আমি একজন গর্বিত ইউরোপিয়ান ঐ অর্থে যে বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে তুরস্কের প্রবেশের জন্য রাজনৈতিক সমর্থনকালীন সময়ে আমিও কাজ করেছিলাম, বা অপচয় করছিলাম হয়তোবা। সেসব ছিল ভাল সময়, পরে সবকিছু খারাপ দিকে মোড় নেয়। এবং এখন তুরস্ক ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের কোন গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থী নয় বরং তুরস্ক ইউরোপের সাথে যুদ্ধকে বেছে নিচ্ছে। এই ব্যাপারে আমি খুব দুঃখ পাই।

তুরস্কে সম্প্রতি যে একটি সামরিক অভ্যুত্থান হল বা বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে যে একটি অভ্যুত্থান চলমান ছিল; এ ব্যাপারে আপনার প্রথম প্রতিক্রিয়া কি ছিল?

পামুক : আমি এই অভ্যুত্থানের ব্যাপারে কিছু জানতাম না। যখন বাস্তবেই অভ্যুত্থান ঘটে তখন তা দেখেছি। ৯ টা ২০ মিনিটে যখন এই অভ্যুত্থান শুরু হয় তখন আমি মিডিয়া থেকে, ইন্টারনেট থেকে, বিশেষ করে টিভি থেকে খবর পাচ্ছিলাম, এবং বিষ্ময় নিয়ে সবকিছু দেখছিলাম। রাত ৩টা পর্যন্ত আমি অভ্যুত্থান দেখতে থাকি, অভ্যুত্থানকারীরা সফল হতে পারবে না বুঝতে পেরে একটা ঘুমের বড়ি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। আমি এত বেশি ক্ষিপ্ত ও বিচলিত ছিলাম যে আগেই বুঝেছি ফেলেছিলাম, আমার ঘুম আসবে না। অভ্যুত্থান ব্যর্থ হওয়ায় আমি চমৎকার খুশি হই, এবং সেই সাহসী মানুষগুলোর প্রতি ভীষণ কৃতজ্ঞ ছিলাম যারা রাস্তায় বের হয়ে ট্যাংকগুলোকে রুখে দাঁড়িয়েছিল। পশ্চিম ইউরোপীয় দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে এই লোকগুলো তুমি বা আমার মত নিরপেক্ষ ছিল না, এরা তো তারাই যারা এরদোগান বা তাদের দল বা গণতন্ত্রকে কে সমর্থন করছিল। তারা আমার উদার মূল্যবোধের জন্য মাঠে নামেনি, তবে পরোক্ষভাবে হলেও তারা তুরস্কের গণতন্ত্রের সমর্থনে নেমেছিল ও সফল হয়েছিল।
 
একবছর পরেও কি আপনার ঐ একই অনুভূতি আছে এখন?

পামুক : না, আমি ঠিক আগের মত আর ভাবি না। আমি সেই মানুষগুলোর কাছে কৃতজ্ঞ, কিন্তু সরকার এই সামরিক অভ্যুত্থানকে ব্যবহার করে বেশিরভাগ উদারপন্থিদের শায়েস্তা করছে। যারাই সরকারের সমালোচনা করেছে, তাদের বেশিরভাগকেই সরকারি চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হচ্ছে। ৪০ হাজার জনসাধারণ এবং ১৪০ জন সাংবাদিক এখন কারাগারে বন্দি। তুরস্কে গল্পের বই লেখা কোন সমস্যা না, কিন্তু কেউ যদি সাংবাদিকদের মত বা রাজনৈতিক সমালোচকদের মত কোন উদ্যোগ নেয়, তাকে ব্যাপক সমস্যায় পড়তে হয়।

আপনিও কি একইভাবে রাজনীতি ও ইতিহাস নিয়ে বলতে গিয়ে সমস্যায় পড়েছেন বা পড়ছেন?

পামুক : হ্যাঁ, সরকারের সাথে আমার অনেক ঝামেলা হয়েছে। আমার উপন্যাসের জন্য নয়, বরং আমার সাক্ষাৎকারসমূহ ও আমার বিভিন্ন বক্তব্যের কারণেই এই ঝামেলার সৃষ্টি। আমার রাজনৈতিক মন্তব্য সবসময় সবাই জানতে চায়। নিশ্চয়ই জানেন, লেখক দমন-পীড়নের সবচেয়ে পুরনো এবং মারাত্মক উদাহরণগুলো কিন্তু বেশিরভাগ ৩০ দশকে করা ঐ সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং জার্মানিরই, যেখানে কাফকার মত লেখকরা লিখতেই পারত না।

আপনি কাফকার মত লিখতে পারেন, কেউ আপনাকে ঘাটাবে না। যতক্ষণ না আপনি সরকারের সমালোচনা করছেন। কিন্তু যদি আপনি সরকারের সমালোচনা করেন, তবেই সেরেছে। আমার অনেক বন্ধু জেলে আছে, শুধুমাত্র সরকারের সমালোচনা করেছে বলে। তুরস্কে এখনো অনেক সাহসী মানুষ আছেন। তুরস্ক শুধুমাত্র ক্ষমতাশীল দলের নয়, এরদোগানের কিংবা একেপি-রও নয়। এখানে সাহসী উদারপন্থি মানুষও রয়েছেন, যারা লড়ে যাচ্ছেন প্রতিদিন। সর্বশেষ নির্বাচনে ক্ষমতাশীল দল ভোট পেয়েছিল ৫১ শতাংশ আর বিরোধীদল পেয়েছিল ৪৯ শতাংশ। খুবই মজার ব্যাপার যে উভয়পক্ষ প্রায় সমকক্ষ। এজন্যই আমি এখনো এখানে আছি, এবং এটাই আমার দেশ।

ঔপন্যাসিক চরিত্র হিসেবে বা সাধারণ একটি চরিত্র হিসেবে এরদোগান কি আপনাকে আগ্রহী করে?

পামুক : না না, আমি এই আলোচনায় যেতে চাই না। চলেন, বইয়ের ব্যাপারে কথা বলা যাক।

আচ্ছা, আপনার আগের একটি বইয়ের বিষয়ে কি প্রশ্ন করতে পারি? যা হচ্ছে….

পামুক : হ্যাঁ, যে কোন প্রশ্নই করতে পারেন।

আপনার লেখা ‘স্নো’ উপন্যাসে একটি পুরাতন উদ্বৃতি পড়েছি। এক চরিত্র মন্তব্য করে ‘যদি ধর্মনিরপেক্ষ সেনাবাহিনী রক্ষা না করে তবে সামান্য পরিমাণ পশ্চিমামনা কোন ব্যক্তি এই দেশে নি:শ্বাস পর্যন্ত নিতে পারবে নাএবং বিশেষ করে এই প্রতিরক্ষা সেসব বুদ্ধিজীবীদের চেয়ে বেশি আর কারো প্রয়োজন নেই যারা মনে করে তারা সবার চেয়ে উত্তম এবং বাকিরা নিচু’।

পামুক : [হেসে] হ্যাঁ।

ইস্তাম্বুলে নিজ বাড়িতে ওরহান পামুক। Image: Ozan Kose/AFP/Getty Images

‘যদি সেনাবাহিনী না থাকত, ধর্মান্ধদের জং ধরা ছোরা নেমে আসত তাদের ও তাদের অলংকৃত নারীদের ভাগ্যে এবং কেটে কুচি কুচি করত সবাইকে।’ কেমন লাগে যখন আপনি এমনটা এখন শুনেন?

পামুক : প্রথমত, এই মন্তব্যটি ঐ বইয়ে করেছিল একজন এফবিআই এজেন্ট।

হ্যাঁ, ঐটা একটা চরিত্র।

পামুক : এই ব্যক্তি যে তরুণ বামপন্থিদের বলছিল ‘সরকারের সমালোচনা কোরো না, কারণ তারা ইসলামপন্থি রাজনৈতিকদের সাথে খুব খারাপ আচরণ করছে’। তারা এমনটা করছে যেন দেশটা ইরানের মত হয়ে না যায়। ভুলে যাবেন না যে, ঐ ব্যক্তি কিন্তু এফবিআই’র পক্ষের লোক, যে বিপরীতের লোকগুলোকে একে একে অনুসরণ করছিল এবং সরকারের বিরোধিতা করতে মানা করছিল।

দেখতেই পাচ্ছেন সবকিছু কেমন জটিল এবং মোটেও সহজ নয়। কোন পক্ষ ন্যায্য/সঠিক তা জানা সহজ নয়। আমার কাছে, আমার সহজাত প্রবৃত্তি হল ‘নিজের বই লেখো, নিজের বই নিয়ে ভাবো, বই নিয়ে ব্যস্ত থাকো, এবং নিজেকে, নিজের বন্ধুদের বা মতামতের স্বাধীনতার পক্ষে সবাইকে সমর্থন দিয়ে যাও’। এটাই আমার স্বপ্নরাজ্য, এটাই আমার জীবনধারা। আমাকে রাজনৈতিক বিশ্লেষণী কিছু জিজ্ঞাসা করবেন না। আমার বিশ্লেষণগুলো আমার বই লিখতে থাকা নিয়ে এবং মতামতের স্বাধীনতাকে রক্ষা নিয়ে এবং আমার বন্ধুসহ অন্যান্যদের এবং অবশ্যই নিজের মতামতের স্বাধীনতাকে রক্ষা করা নিয়ে।

আমি আপনার একটি সাক্ষাৎকার পড়েছি যেখানে আপনি বলেছিলেন যে তুরস্কের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের প্রতিনিধিত্ব এখনো ধর্মনিরপেক্ষরাই করে। এই অবস্থা কি পরিবর্তিত হয়েছে?

পামুক : হ্যাঁ, কারণ কামাল আতাতুর্কের ধর্মনিরপেক্ষকরণ ও আধুনিকায়ন প্রকল্পের কারণে সাংবাদিকতা, বিজ্ঞাপন, আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার এমন এক বিশাল, সমৃদ্ধ ও জটিল সাম্রাজ্য তৈরি হয় যা শুধুমাত্র পশ্চিমা ধ্যানধারণাসম্পন্ন ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ও চালিত। ঐ মন্তব্যের দ্বারা আমি এই কথাই বুঝাতে চেয়েছিলাম।

সময়ের পরিক্রমায় দেশের পরিবর্তনের কারণে, একজন লেখক হিসেবে, আপনার লেখার প্রকল্প কি কোনভাবে পরিবর্তিত হয়েছে?

পামুক : ভাল প্রশ্ন।

অবশেষে প্রশ্ন পছন্দ হওয়ায় ধন্যবাদ।

পামুক : একজন লেখক হিসেবে, আমি নিশ্চয়ই প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছি। কিন্তু লেখার জন্য আমার সংকল্প কিংবা লেখার জন্য আমার ভালবাসা, কিংবা উপন্যাস শিল্পের প্রতি আমার মোহ, এখনো বলবৎ আছে।

প্রথমদিকের বছরগুলিতে, আমি উপন্যাস লিখছিলাম অনেকটা কাব্যিক কায়দায়, প্রত্যেকটা লাইন, প্রতিটি শব্দ, এমনভাবে লিখছিলাম, যেন প্রত্যেকটি বাক্যই চূড়ান্ত। আমি পরীক্ষামূলক লেখালেখির চেষ্টা করছিলাম। আমার প্রথমদিকের উপন্যাসগুলোতে আমি আমার সংস্কৃতি, আমার মানুষজন, মধ্যবিত্ত, উচ্চ-মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত মধ্যবিত্ত, ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী, পশ্চিমা শ্রেণী, ইউরোপীয়ান, ইস্তাম্বুলের তুর্কিদেরকে নিয়ে বেশি লেখতাম। এই সেই স্থান যেখানে আমি বড় হয়েছি, এবং এগুলোই সে বিষয় যা নিয়ে আমি লিখেছি। এমনকি এই বই, ‘দ্য রেড হেয়ার্ড উইমেন’ এর কিছু অংশ তাদের নিয়ে, আবার এর কিছুটা অংশে যেখানে তারা নেই; সেখানে ঠাঁই পেয়েছে আরো বৃহত্তর পরিমণ্ডল, সম্পূর্ণ তুরস্কের ছবি। আমি দ্বিতীয় এই পরিমণ্ডল নিয়ে আরো বেশি বেশি লেখা শুরু করি। শুধুমাত্র আমার ধর্মনিরপেক্ষ এবং রক্ষণশীল ইস্তাম্বুল নয়; বরং আড়ম্বরপূর্ণ, জনপ্রিয় ও বৃহত্তর ইস্তাম্বুল, যা নিয়ে আমি লিখেছি মনের মধ্যে থাকা বিষ্ময় থেকে ৪০ বছর ধরে, ইস্তাম্বুলের উন্নয়নের সে এক মহাকাব্য। এই নতুন বইটি একটি নাতিদীর্ঘ উপন্যাস, যা মূলত পরিবর্তনের গল্প, একটি কাব্যিক পরিবর্তন, এবং এতে আরো আছে প্রজন্মেরও কথা, পিতা-পুত্র’র কথা। প্রকৃতপক্ষে এই বই ২০০ পৃষ্টার কলেবরে ধারণ করেছে তিনটি প্রজন্মের সময়কালকে।

আর্থার মিলার এবং হ্যারল্ড পিন্টারের সাথে পেনোন্স এর জন্য একটি সত্য-উন্মোচন কার্যক্রম করেছিলেন, আশির দশকে, এই তথ্য কি সঠিক?

পামুক : হ্যাঁ, ১৯৮৫ সালে, ঐ সময় একটি সফল সেনা অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছিল, জেলে দেয়া হয়েছিল অনেক লেখক, মানবাধিকার কর্মী, বামপন্থি। আন্তর্জাতিক পেন (PEN) আমেরিকান পেন এবং হেলসেঙ্কি ওয়াচসহ বিভিন্ন মতামত স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করা এসব সংস্থা আর্থার মিলার ও হ্যারল্ড পিন্টারকে পাঠিয়েছিল তুরস্কে। যেহেতু আমার স্বাচ্ছন্দগতির ইংরেজি ভাষা দক্ষতা ছিল, এবং একজন তরুণ ও উঠতি লেখক ছিলাম, তাই তারা আমাকে তাদের স্থানীয় গাইড বানিয়ে নেয়। চারদিনের জন্য তাদের বন্ধু হতে পারাটা ছিল খুবই আনন্দের। সেই দিনগুলো আমার এখনো মনে পড়ে, অত্যন্ত আনন্দঘন সময়, যদিও সে সময়ও অনেক মানুষ জেলে ছিল।

এখনো কি একই রকম অনুভূতি হয়?

পামুক : এখনো একই রকম অনুভূতি হয়, যদিও আরো খারাপ। কেন? কারণ ঐ সময় টানেলের শেষপ্রান্তে আলোর অস্তিত্ব ছিল। আমরা তখন সেনা-অভ্যুত্থানে অভ্যস্ত ছিলাম, কিন্তু আমাদের আরো বেশি স্বাধীনতা ছিল, কিন্তু আমরা পিছু হটেছি। আমার জীবনে এমনটা কখনো হয় নি। পাঁচ বছর বা আট বছর আগে, তুরস্কের ইতিহাসে তখন পর্যন্ত ছিল সবচেয়ে ভাল মতামতের স্বাধীনতার সময়। এবং আমি সে বিষয়ে খুব খুশি ছিলাম। যদিও সরকারের সাথে আমার ঝামেলা ছিল, কিন্তু আমি সেসব আমলে নিইনি। আমি আশাবাদী ছিলাম কারণ আমি ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা দেখতে পেতাম, কিন্তু আমি এখন কোন ভবিষ্যৎ দেখি না, এবং এটাই আমার দুঃখের কারণ। তবে আমাকে নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নাই, আমি বই লিখছি। আমাকে নিয়ে বিচলিত হবেন না।
 
বিশ্বাস করুন, আমি আপনাকে নিয়ে উদ্বিগ্ন নই। আপনি যখন যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপে আসেন এবং শিক্ষকতা করেন বা আর যাই করেন, আপনার কি মনে হয় পশ্চিমা জগত যেভাবে তুরস্ককে দেখে সে তুলনায় তুরস্কের কি আদৌ কোন পরিবর্তন হয়েছে? মানুষ কি ভিন্নভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায় বা তুরস্কের ব্যাপারে ভিন্নসুরে কথা বলে?

পামুক : আসলে ব্যাপারটা খুব জটিল। ১৯৮৫ সালে যখন আমি প্রথম যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলাম, যখন আমার সাবেক-স্ত্রী নিউইয়র্কে পিএইচডি করছিল, যখন কিছু ছোট্ট খবর প্রকাশিত হত। যেমন ধরুন, নিউইয়র্ক টাইমস তুরস্কের একটি ভূমিকম্প নিয়ে ১২ তম পৃষ্ঠায় খুব ছোট একটা খবর ছেপেছিল। তখন নিউইয়র্কের তুর্কিরা নিজেদের মাঝে ফোনালাপে একজন অপরজনকে জিজ্ঞাসা করত ‘তুমি কি নিউইয়র্ক টাইমসে তুরস্কের খবর দেখেছ?’ এবং তারা খুব গর্বিত হত। আজকাল কিংবা বিগত তিন বৎসর ধরে প্রত্যেকদিন পত্রিকার পাতায় তুরস্ককে নিয়ে কিছু না কিছু থাকে। প্রথমত, তুরস্কের দৃষ্টিগোচরতা বেড়ে গেছে। শুরুর দিকে, খবরগুলো আনন্দদায়ক ছিল কারণ সেখানে ইসলাম ও গণতন্ত্র এমনকি আধুনিকতা আজকের ইউরোপকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু বিগত তিন বছর ধরে সবকিছু উল্টোদিকে ধাবমান, সবকিছু স্বৈরাচারের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সাংবাদিক, লেখক সবাইকে জেলে দেয়া হচ্ছে, গণতন্ত্র দিন দিন সংকীর্ণ থেকে সংকীর্ণতর এবং সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ছে। উদারমনা, সুশিক্ষিত ও পশ্চিমা ঘরানার লোকজন সত্যিকার অর্থেই অসুখী এবং ভাবছে ভবিষ্যতে কী ঘটবে। এই হচ্ছে অবস্থা। প্রকৃতপক্ষেই, এ সকল কারণে আমি কাজ করছি এবং আগের চেয়ে অনেক বেশি লিখছি। কেননা খবর থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলাটা সত্যিই হতাশাজনক।

তাহলে আপনি এখন আপনার অফিসে কোন সময়ে কাজ করেন? বা, এই বিচ হাউসের যেখানেই আপনি থাকেন না কেন ইন্টারনেট চেক করা হয়? নাকি উপন্যাস দ্বারা আপনি এখন বেষ্টিত? এক্ষেত্রে আপনার পদ্ধতি কি?

পামুক : আমি আছি একটি গ্রীষ্মকালীন অবকাশকেন্দ্রে, এখানে অবশ্যই ইন্টারনেট আছে। আমি এই অবকাশকেন্দ্রে অনেক ডিভিডি ও বই নিয়ে এসেছি, যেগুলো আমি পড়তে চাই। তাই আমি সত্যিই অনেক সুবিধাপ্রাপ্ত এবং অনন্য। আমার বই, সিনেমা, কাজ নিয়ে সবসময় আমি খুব খুশি এবং সবসময় আমি এসবই করছি। আমি আমার প্রেমিকাকে সবসময় বলি, কারো দেশে ভয়ংকর অনেক কিছু ঘটছে, কিন্তু সে তার বই ও সিনেমা নিয়েই অনেক খুশি এবং লেখালেখিই করছে, তখন সেই ব্যক্তির সারাক্ষণ সেই আপরাধবোধ কাজ করবে। এদেশে স্বৈরাচারীভাবে অনেক নিষ্পাপ ব্যক্তিকে কারান্তরীন করা হচ্ছে। অপরাধবোধে না ভোগাটাই তাই অসম্ভব। এবং এক্ষেত্রে সুরাহা হল সারাক্ষণ কাজে ব্যস্ত থাকা এবং অন্যান্যদের সহযোগিতা করা। এখান থেকে বের হওয়ার কোন রাস্তা নেই।

পামুক : আপনার সাথে কথা বলে খুব ভাল লাগল।

আপনার সাথেও কথা বলে দারুণ লাগল, আপনার সাঁতার উপভোগ্য হোক।

পামুক : ঠিক আছে, ঠিক আছে, ধন্যবাদ, বিদায়।

বিদায়