ইরাককে নিরস্ত্র করার নামে ২০০৩ সালের ২০ মার্চ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজেরাই অস্ত্র নিয়ে নেমে পড়ে ঘুমন্ত বাগদাদের উপর। এ সময়ে মার্কিন সেনাবাহিনীর সাথে যোগ দেয় যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, পোল্যান্ডসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রের একটি মিত্র বাহিনী। আর নির্দেশদাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় আমেরিকার যুদ্ধবাজ রাষ্ট্রপতি জর্জ ডব্লিউ বুশ। ২০০৩ সালে ইরাক আক্রমণের সময় আমেরিকার বুশ প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা দাবি করেছিলেন, ‘ইরাকের নিকট গোপন অস্ত্রের যোগান রয়েছে এবং প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের সঙ্গে আল-কায়েদার গভীর সম্পর্ক আছে।’ এমন প্রচারণায় তারা ইরাক আক্রমণকে যৌক্তিক করার চেষ্টা করে। দীর্ঘ হত্যাযজ্ঞের পর ২০১০ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ইরাক থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করে এই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযানের শেষদৃশ্য মঞ্চায়ন করেন। কিন্তু নাটকের আড়ালেও যে নাটক আছে তা হয়তো ভাবতে পারেনি শান্তিকামী মানুষেরা।
মানবাধিকার এবং সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলা বিষয়ক সাংবাদিক ক্রফটন ব্লাক গত ০২ অক্টোবর ২০১৬ যুক্তরাজ্য ভিত্তিক গবেষণা সংবাদমাধ্যম ‘দি ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম’-এ একটি গবেষণা প্রকাশ করেন। যেখানে দেখা যায়, ইরাক যুদ্ধের সময় সন্ত্রাসীদের নামে ভুয়া (কৃত্রিম) ভিডিও প্রচারের অভিযোগ তোলা মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনের বিরুদ্ধে। ২০০৭ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত যুক্তরাজ্য ভিত্তিক পাবলিক রিলেশনস প্রতিষ্ঠান ‘বেল পটিংজার’-কে ৫৪ কোটি মার্কিন ডলার প্রদান করে পেন্টাগন।
এ সময় বেল পটিংজার আরব দেশের নানান বিষয়ে খবরের ক্লিপ এবং বিদ্রোহীদের করা ভিডিওর আদলে কৃত্রিম ভিডিও তৈরি করতো। প্রতিষ্ঠানটির প্রাক্তন কর্মচারী জানান, ‘দর্শকদের নজরদারিতে আনার জন্য ভিডিওগুলো ব্যবহার করা হতো’। আবার অন্যদিকে এ সম্পর্কে প্রতিষ্ঠানটির প্রাক্তন চেয়ারম্যান সানডে টাইমসকে পেন্টাগনের গোপন অভিযানের ব্যাপারে নানা গোপন চুক্তি থাকার বিষয় নিশ্চিত করেছেন।

বেল পটিংজারের ভিডিও এডিটর মার্টিন ওয়েলস (বর্তমানে তিনি আর প্রতিষ্ঠানটির সাথে জড়িত নন) দি ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম’ এর কাছে এক নাতিদীর্ঘ সাক্ষাৎকারে পেন্টাগনের এই কেলেঙ্কারি সম্পর্কে বিস্তারিত জানান। তিনি মার্কিন ভিক্টরি ক্যাম্পে অবস্থানকালের নানা অভিজ্ঞতাসহ বর্ণনা করেন তার কাজগুলো। পেন্টাগনের হয়ে বেল পটিংজার যেসব কাজ করতো–
১. এজেন্সিটি পেন্টাগনের জন্য তিন ধরনের ভিডিও তৈরি করতো। ক. টেলিভিশন কমার্শিয়াল; যেখানে আল-কায়েদাকে নেতিবাচক ভাবে উপস্থাপন করা হতো, খ. ‘অ্যারাবিক টেলিভিশনের সংবাদ’গুলোর মতো করে নিউজ ক্লিপ গ. আল কায়েদার প্রচারণার ভিডিওর আদলে লো-রেজ্যুলেশন ভিডিও।
২. টহলের সময় ইউএস মেরিনাররা সিডিগুলো বহন করতো এবং কোলাহলের মধ্যে ফেলে রাখতো। আবার তারা কোনো বাড়িতে হামলা করতো সেখানে গিয়ে তারা সিডি রেখে আসতো।
৩. সিডিগুলোতে রিয়েল প্লেয়ার নামক সফটওয়্যার সেট-আপ দেয়া থাকতো; যা কিনা ইন্টারনেটের সাথে সংযোজিত হয়ে চালু হতো। এবং সেখানে এমন কিছু কোড ব্যবহার করা হতো যেন দর্শকের আই.পি. অ্যাড্রেস পেন্টাগন এবং পটিংজারের কাছে পৌঁছে যায়।
এভাবে যুদ্ধবাজ আমেরিকা ভুয়া খবর প্রচার করে পৃথিবীর কাছে ইরাক আক্রমণকে যৌক্তিক প্রমাণ করার চেষ্টা করেছিলো এবং ভিডিও দেখা ব্যক্তিদের সনাক্ত করে হত্যাযজ্ঞের নকশা সাজাতো।