মধ্যরাতে আসলে কী ঘটেছিল সুফিয়া কামাল হলে

মধ্যরাতে আসলে কী ঘটেছিল সুফিয়া কামাল হলে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি সুফিয়া কামাল হলে সাধারণ ছাত্রীদের ওপর ছাত্রলীগের হল সভাপতির আক্রমণ ও কয়েকজনকে রক্তাক্ত করার ঘটনা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে গত রাত থেকেই পাল্টাপাল্টি প্রচারণা শুরু হয়েছে।

ঘটনার পরপরই ছাত্রলীগের হল সভাপতি ইফফাত জাহান এশাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রত্ব বাতিল করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। একই সাথে ছাত্রলীগও দল থেকে বহিস্কার করে। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এশাকে ছাত্রলীগ থেকে বহিস্কার করা হয়।

ছাত্রলীগের হল সভাপতি এশা হলের ছাত্রী মুর্শিদা খাতুনের পায়ের রগ কেটে দিয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। উদ্ভিততত্ত্ব বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মুর্শিদাও সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে তার পায়ে আঘাতের বর্ণনা দিয়েছেন।

অন্যদিকে ছাত্রলীগের বেশকিছু নেতা এই ঘটনায় আহত মুর্শিদা খাতুনের ওপরই দোষ চাপাচ্ছেন। ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন তার ফেসবুক পাতায় লিখেছেন, “সুফিয়া কামাল হলের যে মেয়েটির ছবি ভাইরাল হয়েছে, ওর রগ কাটে নি। ও সেই সময় অন্য একটি মেয়ের চিৎকার শুনে রাগে ছাত্রলীগের নেত্রীর রুমের গ্লাসে লাথি মেরেছিল।”

আসলে কি ঘটেছিলো তা ঘটনার সময় উপস্থিত হলের এক শিক্ষার্থীর লেখায় বিস্তারিত উঠে এসেছে। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সাফিয়া শারমিনের লেখাটি হুবহু তুলে দেয়া হলো,

“সুফিয়া কামাল হল থেকে বলছি…

ঘটনার সূত্রপাত আনুমানিক ১২ টার দিকে, সারাদিনের ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে গেছিলাম। এক ফ্রেন্ডের ফোনে ঘুম ভাঙ্গছে, লাফিয়ে উঠে নিচে দৌড় দিলাম। ৯ তলা থেকে নামতে নামতে দেখলাম ৩-৪ তলায় সিড়িতে রক্ত, ফ্লোরে রক্ত। ভিড় ঠেলে নিচে নামলাম, আপুদের কাছে জিজ্ঞাসা করার বলল তিনদিন ধরেই অত্যাচার চলতেছিল নিরবে, যারা পলিটিকালি হলে উঠেছে তাদের উপর, এখন এক মেয়ের পা কেটে দিয়েছে। কেউ ভয়ে মুখ খুলে নাই। প্রত্যয় প্রদীপ্ত দুটো মুখোমুখি ভবন। এশা প্রত্যেয়ে মেয়েদের মারার সময় প্রদীপ্তর কিছু মেয়ে দেখে চিৎকার করছে। কিছু মেয়ে নিচে নেমে আসলে তাদেরকে বলছে ‘তেলাপোকা দেখে চিৎকার দিছে, কিছু হয় নাই’। কিন্তু ফ্লোরে সিড়িতে রক্ত দেখে হলের মেয়েরা একত্রিত হইছে। এর মধ্যে এশা ঐ মেয়েদের কে নিয়ে দরজা বন্ধ করে দিছে। তারপর হলের হাউজ টিউটর ম্যামরা এসে মেয়েটাকে হাসপাতালে পাঠাইছে, এবং হলের মাঠে সব মেয়েরা তখন ক্ষ্যাপা। এশার বহিষ্কার স্লোগান দিচ্ছিল, এর মধ্যে এশাকে কিছু মেয়ে মাঠে নিয়ে আসছে, তখন কিছু মাইরও খাইছে। এর মধ্যে ভাইয়ারাও চলে আসছে হলের সামনে। ম্যামরা জানতে চাইলো আমরা কি চাই? বললাম এশাকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার, ওকে জুতার মালা পরাবো আমরা। যেহেতু কোটা সংস্কার আন্দোলন অহিংস আন্দোলন, তাই মারবো না। এর মধ্যে গোলাম চলে আসলো তার কইন্যাকে উদ্ধার করতে। সামনের দিকেই ছিলাম, আস্তে করে বললাম “ভুয়া” সাথে সাথে শুরু হয়ে গেল প্রক্টর তুই দুর হ, ভুয়া। অনেক কথাবার্তার পর এশাকে নিয়ে আসা হলো সবার সামনে মাফ চাওয়ার জন্য, জুতার মালা পরানোর জন্য। কিন্তু গোলাম বাবাজি জুতার মালা পরাতে দিবেন না। মেয়েরা ক্ষেপে গেল, তারপর শুরু হল ধাক্কাধাক্কি। এদিকে গোলাম ও তার সাথের লোকজন এশাকে ঘিরে বাঁচাতে চাইছেন প্রাণপণে। মেয়েদের মাইর খেলেন গোলাম তার কন্যা ও আশেপাশের লোকজন। এদিকে দুই ভবনের গেটে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ায় আমরা ক্যান্টিনের পিছনের গেট দিয়ে হলে মেইন গেটে চলে আসলাম, যাতে কেউ পালাতে না পারে।

ভাইয়ারা তখন বাইরে অবস্থান করছেন, স্লোগান দিচ্ছেন। এদিকে ধ্বস্তাধ্বস্তির এক পর্যায়ে এশাকে জুতার মালা পরানো হলো, হাউস টিউটর ও গোলামের কাছ থেকে মৌখিক বিবৃতি নেওয়া হলো। এরপর ম্যামরা ধ্বস্তাধ্বস্তির একপর্যায়ে প্রক্টর এবং এশাকে হাউস টিউটর ভবনের ভিতরে ঢুকিয়ে কলাপসিপল গেট বন্ধ করে দিল। তখন মেয়েরা হাউস টিউটর ভবনের সামনে অবস্থান নিল, তারপর আমরা আমাদের দাবি এবং স্লোগান সমানতালে চলতে থাকলো। ভিতরে আমরা বাইরে ভাইয়ারা। সুফিয়া কামাল হল থেকে তিনটি দাবি দেওয়া হয়েছে যে হলে কোন আনুষ্ঠানিক রাজনীতি থাকবে না, ছাত্রীদের ওপর অত্যাচারের বিচার এবং আমাদের ভাইবোনদের ওপর অত্যাচারের বিচার করতে হবে। রাত ৪ টার দিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে, ভাইয়ারা ফিরে গেছেন। মেয়েরা তাদের দাবি আদায়ে গণস্বাক্ষর করছে।

যে আপুটা আহত হয়েছেন, তিনি নিরাপদে আছেন। আমরা নিরাপদে আছি। আর একটা গুজব ছড়ানো হচ্ছে যে মেয়েটা পা নিজে কেটেছে, এটা পুরাটাই বানোয়াট। এমন একটা রাতে সাক্ষী হতে পেরে ভালো লাগলো। ভাইবোনেরা যারা আহত হয়েছেন তারা সুস্থ হোন দোয়া করি। আমরা কোন অন্যায় মেনে নিবো না। এখন আর ভয় নাই, যেখানে হামলা হবে সাহস করে এগিয়ে যাবেন সবাই, যেভাবে আমরা গিয়েছি। আপুরাও অনেক কিছু পারে সেটা অনুপ্রেরণা হিসেবে নিন। ভয়ে কেউ চুপ করে থাকবেন না।”

পরে কবি সুফিয়া কামাল হল প্রভোস্টের উপস্থিতিতে হলের সাধারণ ছাত্রীরা হল সভাপতি ইফফাত জাহান এষাকে জুতার মালা পরিয়ে দেয়।

ছাত্রলীগের হল সভাপতিকে (বহিস্কৃত) জুতার মালা পরিয়ে দিলেন ক্ষুব্ধ ছাত্রীরা

ছাত্রলীগের হল সভাপতিকে (বহিস্কৃত) জুতার মালা পরিয়ে দিলেন ক্ষুব্ধ ছাত্রীরামঙ্গলবার রাতে সুফিয়া কামাল হলের কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের রুমে রুমে গিয়ে মারধর করেন ছাত্রলীগ সভাপতি ও ছাত্রলীগের অন্যান্যা নেত্রীরা।এক পর্যায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি সুফিয়া কামাল হল ছাত্রলীগের সভাপতি ইফফাত জাহান এষাকে (বহিস্কৃত) হলের বিক্ষুব্ধ সাধারণ ছাত্রীরা জুতার মালা পরিয়ে দেয়।

Posted by Joban on Wednesday, April 11, 2018

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুফিয়া কামাল হলের ভেতরের একটি দৃশ্য! সাধারণ ছাত্রীরা আক্রান্ত! দয়া করে লিংক চাহিয়া কেউ বিপদে ফেলবেন না! নিজ দায়িত্বে তথ্য যাচাই করে নিন। সম্ভব হলে বিপন্নদের পাশে দাঁডান!

Posted by Zahid Al Amin on Tuesday, April 10, 2018

মুর্শিদা খাতুনকে কবি সুফিয়া কামাল হলের পার্শ্ববর্তী সরকারি কর্মচারী হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়