সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ঘোষণা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কোটা পদ্ধতি বাতিল, পরিষ্কার কথা। বারবার আন্দোলনের নামে জনগণের ভোগান্তি এড়াতে সংস্কারের চেয়ে এটা বাতিল হলেই ভালো। বুধবার জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগদলীয় সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানকের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আমাকে বলল- আমরা তিন দিন ঘুমাতে পারছি না। লোকজন অসুস্থ হয়ে পড়ছে। এমনকি রাস্তাঘাট বন্ধ করে দেয়ায় রোগীরা হাসপাতালে পর্যন্ত যেতে পারছে না।’
তিনি বলেন, জেলায় জেলায় যে কোটা রয়েছে সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও রাস্তায় নেমে গেছে। আমি বলে দিয়েছি- কোনো কোটাই থাকবে না। বিসিএসএসে যেভাবে পরীক্ষা হয়, মেধার ভিত্তিতেই সব নিয়োগ দেয়া হবে।
সংসদে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মেয়েরাও রাস্তায় নেমে গেছে, কোটা চায় না। তাহলে কোটা পদ্ধতি থাকার কী দরকার? প্রতিবন্ধী ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীকে আমরা অন্যভাবে চাকরির ব্যবস্থা করব। আন্দোলন অনেক হয়েছে, এবার ক্লাসে ফিরে গিয়ে পড়াশোনা করলেই হয়।
আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে সরকারপ্রধান বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসির বাসভবনে যারা হামলা করেছে তাদের খুঁজে বের করে বিচার করা হবে। তিনি বলেন, যারা ভাংচুর লুটপাটে জড়িত, তাদের বিচার হতে হবে। লুটের মাল কোথায় আছে, তা ছাত্রদেরই বের করে দিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ রোদের মধ্যে ছাত্ররা রাস্তায় বসে আন্দোলন করছে, এটা ঠিক হচ্ছে না। তারা অসুস্থ হয়ে যেতে পারে। তাছাড়া এমনিতেই ঢাকায় যানজট লেগে থাকে সবসময়। রাস্তাঘাট বন্ধ করে ছাত্ররা আন্দোলন করছে। এতে মানুষের কষ্ট ও দুর্ভোগ হচ্ছে। যেহেতু এত কিছু হচ্ছে, তাই আর কোনো কোটাই থাকবে না। বাতিল করে দিলাম।
এ সময় কোটা পদ্ধতি বাতিল করার ঘোষণা দিয়ে আন্দোলনকারীদের ঘরে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
অন্যদিকে আন্দোলনকারীরা প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পর আগামীকাল সকাল দশটায় সংবাদ সম্মেলনে তাদের অবস্থান জানাবে বলে জানিয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি রাজু ভাস্কর্যের সামনে অবস্থানরত সাধারণ শিক্ষার্থীরা ফিরে গেছেন। এই আন্দোলনের মুখপাত্র সাধারণ শিক্ষার্থী অধিকার রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের দাবিতে বলা হয়েছিলো, তারা প্রধানমন্ত্রীর নিকট হতে সুস্পষ্ট তারিখসহ একটি বক্তব্য চান। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তেমন কোন নির্দিষ্ট দিন তারিখ উল্লেখ করেননি। এমন পরিস্থিতিতে আন্দোলনকারীরা কী সিদ্ধান্ত নেন সেটি দেখতে আগামীকালের সংবাদ সম্মেলন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
উল্লেখ্য, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি কোটা সংস্কারের দাবিতে শাহবাগে মানববন্ধন করেন চাকরিপ্রত্যাশীরা। পরে আবার ২৫ ফেব্রুয়ারি মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেন তারা। ৩ মার্চের মধ্যে এই সমস্যার সমাধান দাবি করেন। সমাধান না হওয়ায় আবার আন্দোলনে নামেন।