ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের প্রতিবন্ধক ব্যাংক ঋণ

ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের প্রতিবন্ধক ব্যাংক ঋণ

দেশের মোট জিডিপির প্রায় ৩০ শতাংশ এসএমই খাত থেকে অর্জিত এবং মোট শ্রমশক্তির ২৫ শতাংশ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে এই খাত থেকে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন, দারিদ্র্য বিমোচন, বেকারত্ব দূরীকরণ, আঞ্চলিক বৈষম্য কমানো, নারী-পুরুষের সমতা বিধান ও নারী ক্ষমতায়ন বাস্তবায়নে এসএমই (ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প) খাতের ভূমিকা অসীম।

সারা দেশে স্থানীয় পর্যায়ে গড়ে তোলা ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের শিল্প কারখানা রয়েছে ৪০ হাজারেরও বেশি। বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প মালিক সমিতি (বাইশিমাস) সূত্রে জানা গেছে, দুই হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের হালকা প্রকৌশল শিল্পে প্রতি বছরে টার্নওভার প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা। এ খাত থেকে সরকারের রাজস্ব আয় আড়াইশ’ কোটি টাকারও বেশি। এসব শিল্প কারখানার সঙ্গে জড়িয়ে আছে ৩৫ লাখ কর্মীসহ দেড় কোটি মানুষের জীবন-জীবিকা ও ভাগ্য।

দেশের বিভিন্ন স্থানে হালকা ও মাঝারি শিল্পে উদ্যোক্তরা নিত্যনতুন পণ্য উৎপাদন করে করে চলছেন। সীমিত পুঁজির খুদে শিল্প মালিক আর অভাবনীয় মেধার দক্ষ কারিগররা মিলে হালকা ও মাঝারি শিল্পকে পরিণত করেছেন দেশের সম্ভাবনার আলোকবর্তিকায়।

দেশের ৯৬ শতাংশ শিল্পই ক্ষুদ্র ও মাঝারি। কৃষি খাতের বাইরের খাতগুলোর মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ কর্মসংস্থানই হয় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে। দেশের ৩৫ লাখেরও বেশি শ্রমিক এ খাতে জড়িত। বিপুলসংখ্যক তরুণের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

বাংলাদেশে অনেক নারীই ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা থেকে এখন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। ব্যবসায়িক দক্ষতার গুণে অল্পদিনেই তারা সফল হয়েছেন। তাদের ওই সফলতার খবর পেয়ে সফল মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে অনেককে নারী উদ্যোক্তা হিসেবে শ্রেষ্ঠ জয়িতা ঘোষণাও করে। এমন অসংখ্য জয়িতা দেশের অর্থনীতির ভিতটিকে শক্তিশালী করেছেন। বিশ্বব্যাংক গ্রুপের ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে এখন ক্ষুদ্র ও মাঝারি নারী উদ্যোক্তার সংখ্যা ২৩ লাখ।

অবশ্য অধিকাংশ নারী উদ্যোক্তাকেই প্রতিষ্ঠা পেতে নানান বাধা পার করতে হয়। এর মধ্যে প্রধান প্রতিবন্ধকতা হলো ব্যাংক ঋণ। ব্যবসার পরিসর বাড়াতে ঋণের জন্য আবেদন করলেও তা তারা পান না। তাই ব্যবসা করতে চাইলেও অনেক নারী টাকার অভাবে পারেন না। আবার পরিবারের কাছ থেকেও সাড়া মেলে না।

নারী উদ্যোক্তারা প্রতি বছর ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের মাত্র ৪ শতাংশ পান। উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও আর্থিক সমর্থন এ দেশের নারীদের নেই। আন্তর্জাতিক বাজারে ২৫ থেকে ৩১ শতাংশ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের মালিক নারীরা। অথচ বাংলাদেশে এ হার ১০ শতাংশেরও নিচে। নারী উদ্যোক্তাবান্ধব সূচকে বিশ্বের ১৩২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১২৫তম।

ক্ষুদ্র ও মাঝারি নারী শিল্প উদ্যোক্তাদের বার্ষিক ঋণ চাহিদার ৬০ শতাংশই পূরণ করতে পারছে না ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। ব্যাংকাররা তাদের ঋণ দেয়া ঝামেলা বলে মনে করেন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকেরও নির্দেশনা রয়েছে, পুনঃঅর্থায়ন ঋণের কমপক্ষে ১০ শতাংশ নারী উদ্যোক্তাদের দিতে হবে। তবে এ নির্দেশনা মানছে না কিছু ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান।

নারী উদ্যোক্তাদের ব্যাংক ঋণ পাওয়া সহজ করতে জামানত ছাড়াই ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রতি বছরই ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে নারী উদ্যোক্তার সংখ্যা বাড়ছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে তাদের মোট বরাদ্দের ৫৫ শতাংশ নারী উদ্যোক্তার জন্য বিনিয়োগের ব্যবস্থা রয়েছে।

দেশের সামগ্রিক অগ্রযাত্রায় নারীর সফল ও প্রয়োজনীয় অংশগ্রহণ প্রবৃদ্ধির যেমন নিয়ামক তেমনি নারীর চলার পথে ও নিরন্তর গতিতে সময়োপযোগী অবদানের শুভযোগ। বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীর ক্ষমতায়ন এবং এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় নারী জাতির সামনে এগিয়ে যাওয়ার যাওয়ার পথ প্রসারিত করছে। একই সঙ্গে তাদের অভাবনীয় সাফল্যও দেখা যাছে। সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়েও কোনো সরকারি-বেসরকারি কিংবা বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানে আকর্ষণীয় পদে চাকরি ছেড়ে শিল্প উদ্যোক্তা হয়ে সফলতা পেয়েছেন।

সফল নারী উদ্যোক্তারা মনে করেন, দেশীয় কাঁচামালে তৈরি করে পণ্য বাজারজাত করার মাধ্যমেই তারা সফল হচ্ছেন। পণ্য শুধু তৈরি করলেই হবে না, তা সব ক্রেতার সামর্থ্য অনুযায়ী পৌঁছে দেয়াও এক বড় চ্যালেঞ্জ। প্রতিযোগিতার যুগে এই দায় অনেক থাকে। শিল্প পণ্যের গুণগত মানের দিকেও বেশি করে নজর দিতে হয়। তা না হলে বাজার হারানোর আশঙ্কা থাকে। তাই উৎপাদিত পণ্যের উন্নত মান নিয়ে বিশেষভাবে সচেতন থাকতে হয়। দেশের ভোক্তা শ্রেণির প্রয়োজন মিটিয়ে তাদের পণ্য বিদেশে চলে যাচ্ছে। এই খাত বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেও বিশেষ ভূমিকা পালন করছে।