‘দ্যা নোবেল’ হিসাবে খ্যাত ওমর শরীফের আজ ৮৬তম জন্মদিন। ইন্টারনেট জায়ান্ট গুগল মিশরীয় অভিনেতার সম্মানে ৪৮টি দেশের গুগল লোগোতে ওমর শরিফকে স্থান দিয়েছে।
এই তারকার জীবনের সংক্ষিপ্ত কাহিনী তুলে ধরা হল–
প্রাথমিক জীবন
- ১৯৩২ সালে মিশরের আলেকজান্দ্রিয়া শহরে ওমর শরীফ জন্মগ্রহন করেন। তার পিতামাতা সিরিয়া-লেবাননের অধিবাসী ছিলেন। জন্মের সময়ে তার নাম ছিল মাইকেল দমিত্রি শালহাব।
- একজন অভিনেতা হিসাবে পরিচিত হওয়ার আগে তিনি কায়রো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতে ও পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন এবং তার পিতার কাঠের কোম্পানিতে বেশ কয়েক বছর কাজ করেন।
- এরপরে তিনি পারিবারিক ব্যবসা ছেড়ে দেন এবং অভিনয় শেখার জন্য ব্রিটেনের রাজধানী লন্ডনে অবস্থিত ‘রয়্যাল অ্যাকাডেমি অফ ড্রামাটিক আর্টে’ চলে যান।
- ১৯৫৪ সালে তিনি তার অভিনয়ের ক্যারিয়ার শুরু করেন এবং মিশরের নেতৃস্থানীয় অভিনেত্রী ফাতেন হামামার সঙ্গে চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন।
- ১৯৫৫ সালে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। নাম পরিবর্তন করে রাখেন ওমর শরীফ এবং এর কিছু দিন পরেই ফাতেনের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯৬৬ সালে তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং ১৯৭৪ সালে তাদের মধ্যে তালাক হয়ে যায়। এ সময়ে তাদের একজন পুত্র সন্তান হয়।
আন্তর্জাতিক খ্যাতি
- ব্রিটিশ পরিচালক ডেভিড লিন এর বিখ্যাত ‘লরেন্স অফ আরাবিয়া’ সিনেমাটিতে অভিনেতা হিসেবে যোগ দেন। এর আগে ওমর শরীফ বেশ কয়েকটি মিশরীয় চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন।
- “লরেন্স অফ আরাবিয়া”তে শরীফ একজন আরব যোদ্ধার ভূমিকা পালন করেন। তার আগমনী দৃশ্যটি চলচ্চিত্র জগতে ক্লাসিক হিসাবে গণ্য হয়ে আছে।
- সেখানে তিনি প্রথমে মরুভূমির দিগন্তে একটি ছোট্ট বিন্দু হিসাবে আবির্ভূত হন, সেখান থেকে তিনি পিটার ও’টুলের সাথে ঘোড়ার দৌড়ের মত দ্রুত বড় হয়ে ওঠেন।
- তার পারফরমেন্স তাকে অস্কার মনোনয়নে সেরা পার্শ্ব অভিনেতা হিসেবে আখ্যায়িত করে এবং তাকে আন্তর্জাতিক খ্যাতি এনে দেয়।
- এসব আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও অর্জন তার ব্যক্তি জীবনে বিরাট ক্ষতি ডেকে আনে। ২০০৩ সালে সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস এর সাথে এক সাক্ষাৎকারে শরিফ একথা বলেন।
- তিনি বলেন, “এটা আমাকে আমার স্ত্রী থেকে, আমার পরিবার থেকে আমাকে আলাদা করে দিয়েছে … আমরা একে অন্যের সাথে পর্যাপ্ত দেখা সাক্ষাৎ করতে পারিনি এবং এটাই ছিল আমাদের মধ্যকার বিয়ে ভেঙে যাওয়ার কারণ’। তিনি আরও বলেন, ‘আমি শুধু মিশরের একজন চলচ্চিত্র তারকা হিসাবে থাকলে সুখী হতে পারতাম’।
ক্যারিয়ারের সংগ্রাম
- ‘ডক্টর জিভাগো’তে অভিনয় করে জন্য ওমর শরীফ তৃতীয় ‘গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার’ জেতার পর থেকে তার ক্যারিয়ার নিম্নগামী হতে থাকে।
- ১৯৬০ দশকের শেষের দিকে তিনি তার চলচ্চিত্র জগতের ভাগ্য পরিবর্তনকে স্বীকৃতি দেন, যাকে তিনি বলে থাকেন ‘দ্যা কালচারাল রেভ্যুলুশন’। ওমর শরীফ বলেন, ‘তখন নতুন পরিচালকরা তাদের নিজস্ব সমাজের বিষয়বস্তু নিয়ে চলচ্চিত্র তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করতে শুরু করেন। ফলে বিদেশিদের জন্য আর কোন স্থান থাকেনি, তাই হঠাৎ করে আমাদের আর কোন সুযোগ ছিল না’।
- তিনি পরিচিত হতে থাকেন ‘দ্যা পিঙ্ক প্যানথার স্ট্রাইকস অ্যাগেইন’ হিসাবে এবং অন্যান্যরা তাকে তখন ‘আবর্জনা’ হিসাবে বলতে থাকে।
- ২০০৪ সালে তিনি এক প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমি আমার আত্মমর্যাদা ও সম্মান হারিয়ে ফেললাম। এমনকি আমার নাতি-নাতনিরাও আমাকে নিয়ে মজা করছিলো’।
স্বাস্থ্যগত সমস্যা
- ১৯৯২ সালে ট্রিপল হার্ট বাইপাস করাতে হয় ওমর শরীফকে। ১৯৯৪ সালে তিনি একটি হালকা ধরণের হার্ট অ্যাটাকের সম্মুখীন হন। সেই সময়ে, তিনি তার ফিল্ম অফার ফিরিয়ে দিতে শুরু করেন।
- চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারের বাইরে শরীফ একজন বিশ্বমানের কল ব্রিজ খেলোয়াড় ছিলেন এবং শিকাগো ট্রিবিউন পত্রিকায় তিনি কল ব্রিজ নিয়ে লিখেছিলেনও। পরবর্তী বছরগুলোতে তিনি এই খেলাটি ছেড়ে দেন।
- তার ছেলে তারেকের মতে, ‘২0১৫ সালের মে মাসে শরীফ আলযেহইমারের রোগে আক্রান্ত হন এবং তার কর্মজীবনের সবচেয়ে বড় চলচ্চিত্রগুলি স্মরণে করার চেষ্টা করতে থাকেন’।
- সাবেক স্ত্রীর মৃত্যুর মাত্র ৬ মাস পরে, ১০ জুলাই ২০১৫ তারিখে ওমর শরীফ কায়রোতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
অর্জন
- শরীফ দুটি ‘গোল্ডেন গ্লোব’ এবং একটি ‘অস্কার’ মনোনয়ন লাভ করেন।
- ২০০৩ সালে ‘মসিয়ে ইব্রাহিম’ নামের একটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করার জন্য ‘সিজার অ্যাওয়ার্ড’ লাভ করেন।
- সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যে অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ২00৫ সালে ইউনেস্কো কতৃক ‘আইনস্টাইন’ পদক লাভ করেন।
সূত্র : আলজাজিরা