আন্দোলনের মোড় ঘোরাতেই উপাচার্যের বাসায় হামলা!

আন্দোলনের মোড় ঘোরাতেই উপাচার্যের বাসায় হামলা!

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে জল্পনা কল্পনা। এই ন্যক্কারজনক হামলার দায়ভারের প্রশ্নে সরকার, প্রশাসন ও ঢাবি কর্তৃপক্ষের সন্দেহের তীর আন্দোলনকারী সাধারণ শিক্ষার্থীদের দিকে। আন্দোলনকারীরা সোমবার ক্যাম্পাসে সংবাদ সম্মেলন করে এর সাথে জড়িতদের গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন। মনে করা হচ্ছে, সাধারণ শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করতে বা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে এই হামলা করা হয়ে থাকতে পারে।

হামলার ঘটনার পর রোববার সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের পক্ষ থেকে এই ঘটনায় জড়িতদের বিচার দাবি করা হয়। অন্যদিকে মঙ্গলবার বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে বেশ হুমকি ধামকি দেন। তিনি বলেন, “আন্দোলনের নামে কোন ধরণের বিশৃংখলা সহ্য করা হবে না। আমাদের অভিভাবক ভিসি স্যারের বাড়িতে হামলা করা হয়েছে।”

এ ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে বের করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে উত্তাল ঢাবি ক্যাম্পাসে সক্রিয় দুটি পক্ষই এই হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে। আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি ছাত্রলীগ সার্বক্ষণিক বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়েছে।

সরকারের দোষারোপ

সোমবার সচিবালয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, “কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে ভাঙচুর, হামলা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির ঘটনা নিন্দনীয়।”

অন্যদিকে মঙ্গলবার উপাচার্যের বাসভবন পরিদর্শন শেষে ওবায়দুল কাদের বলেন, “এটি যে পরিকল্পিত হামলা তা প্রমাণিত। কারণ ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা বিকল করে দেওয়া হয়েছে। এই নারকীয় বর্বরতার সঙ্গে জড়িতদের  কাউকে কোনো অবস্থাতেই ছাড় দেওয়া হবে না। তদন্ত চলছে। কিছুটা চিহ্নিত হয়েছে। বাকিটাও চিহ্নিত হবে। এর বিচার করতেই হবে। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে।”

সরকারের মদদে হামলা : বিএনপি

কোটা সংস্কার দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর দোষ চাপাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামানের বাংলোয় হামলা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। মঙ্গলবার বেলা ১১টায় নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, “ভিসির বাসভবনে হামলা পরিকল্পিত। সরকারের মদদ না থাকলে এভাবে হামলা করা সম্ভব নয়।”

রিজভী আরো বলেন, “ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এক নেতা ক্যাম্পাসে প্রবেশের ১০ মিনিটের মাথায় হামলা হয়েছে। এ থেকে স্পষ্ট, কারা এই হামলার পেছনে রয়েছে।” বিএনপির এই নেতা বলেন, “কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর গত দু’দিনে পুলিশ ও ছাত্রলীগের হামলা ১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হানাদার বাহিনীর হামলাকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। সেখানে মেধাবীদের ওপর রাতভর কি নিষ্ঠুরভাবে গুলি করা হয়েছে, টিয়ারশেল মারা হয়েছে, হাসপাতালে শত শত ছাত্রছাত্রী রক্তাক্ত অবস্থায় কাতরাচ্ছিল, তা দেখে সাধারণ মানুষের মধ্যে নিন্দার ঝড় বইছে।”

ঢাবি শিক্ষক সমিতির প্রতিবাদ সভা

সোমবার একে রাজনৈতিক মদদপুষ্ট বলে জানিয়েছিল শিক্ষক সমিতি। এরপরে আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ভবন ও অন্যান্য ভবনে হামলাসহ উপাচার্যকে সপরিবারে হত্যার চেষ্টার প্রতিবাদে’ এই মানববন্ধন হয়।

মানববন্ধনে শিক্ষক সমিতির সভাপতি মাকসুদ কামাল বলেন, “কোটা সংস্কারে শিক্ষার্থীদের নৈতিক দাবির প্রতি সমর্থন আছে। আগামী ৭ মের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে যেন এর সমাধান হয়, দীর্ঘায়িত যেন না হয়, সেটাই আশা করি।”

দোষীদের বিচার দাবি করেছেন আন্দোলনকারীরা 

সোমবার সংবাদ সম্মেলনে সাধারণ শিক্ষার্থী অধিকার সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে এই হামলায় জড়িতদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করা হয়। এবং এও জানানো হয়, সাধারণ শিক্ষার্থীরা এর সঙ্গে কোনভাবেই জড়িত নয়।

এ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ফাহমিদুল হক ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেছেন, “আন্দোলনকারীরা ছাড়া সব পক্ষই তাদের ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করছেন।”

গতকাল ভিসির বাসভবনে গিয়েছিলাম। এধরনের ভাংচুর আমি কখনো দেখিনি। অত্যন্ত নিন্দনীয় কাজ হয়েছে এটা। তীব্র নিন্দা জানাই।…

Posted by Fahmidul Haq on Tuesday, April 10, 2018

উল্লেখ্য, কোটা সংস্কারে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনকারীদের দাবিগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো– কোটা সংস্কার করে ৫৬ থেকে ১০ শতাংশে কমিয়ে আনা, কোটা প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্যপদগুলোতে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া, চাকরি নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার না করা।

আন্দোলনের অংশ হিসেবে গত রোববার দুপুরে কোটা সংস্কার দাবিতে শাহবাগে জড়ো হয়ে পদযাত্রা কর্মসূচি করে শিক্ষার্থীরা। পরে তাদের অবস্থানে রাত আটটার দিকে পুলিশ চড়াও হলে সংঘর্ষ হয়। এক পর্যায়ে এই সংঘর্ষ পুরো ক্যাম্পাস এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এতে পুলিশসহ দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। অনেককে আটক করে পুলিশ।

গতকাল সোমবারও দিনভর বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। পরে বিকেলে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জাসান খান কামালের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের ২০ সদস্যের প্রতিনিধি দলের বৈঠক হয়।

বৈঠক থেকে বেরিয়ে তারা সরকারের আশ্বাসে আগামী ৭ মে পর্যন্ত কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা দেন। তবে তাদের এ ঘোষণা মেনে নেননি উপস্থিত শিক্ষার্থীরা। তারা ক্যাম্পাসে বিচ্ছিন্নভাবে বিক্ষোভ করছেন।