স্থগিত হয়নি আন্দোলন, টিএসসিতে অবস্থান করছেন শিক্ষার্থীরা

স্থগিত হয়নি আন্দোলন, টিএসসিতে অবস্থান করছেন শিক্ষার্থীরা

কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা সরকারের সাথে আলোচনার পর স্থগিতের সিদ্ধান্ত মেনে নিচ্ছেন না। একদল শিক্ষার্থী এখনও সেখানে অবস্থান করছেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সাথে আলোচনায় অংশ নেয়া ২০ জন সদস্যও সেখানে অবস্থান নিয়েছেন।

সোমবার সন্ধ্যার পর সচিবালয় থেকে ফিরে এসে প্রতিনিধিদল অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের মাঝে আলোচনার কথা জানিয়ে আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দিলে “ভূয়া” “ভূয়া” বলে চিৎকার করতে থাকে। সরকারের আশ্বাসের প্রতি শত ভাগ অনাস্থা প্রকাশ করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে টিএসসিতে অবস্থানরত ছাত্র-ছাত্রীরা।

ছাত্র অধিকার সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক হাসান আল মামুন জানিয়েছেন, “সরকারের সাথে আলোচনার ফলে আন্দোলন স্থগিতের সিদ্ধান্ত সবাই না মানায় আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

রাত নয়টার দিকে দেখা যায়, টিএসসিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা “মিথ্যা আশ্বাস, মানি না, মানবে না” বলে স্লোগান দিতে থাকে।

এদিকে সচিবালয়ের বৈঠক শেষে দেশের প্রায় সব মিডিয়াতে আন্দোলন স্থগিতের খবর প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু এই খবর লেখা পর্যন্ত টিএসসিতে বিপুল পরিমাণ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী অবস্থান করছেন। এদিকে অবস্থানকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। তারা আশঙ্কা করছেন, রাতে ছাত্রলীগের আন্দোলনবিরোধীরা অতর্কিত হামলা করতে পারে। এদিকে ঢাকা বিশ্বদ্যিালয় ক্যাম্পাস এলাকায় বিপুল পরিমাণ পুলিশ-র‌্যাব এর পাশাপাশি সোমবার সন্ধ্যা থেকে বিজিবির টহল লক্ষ্য করা গেছে।

ছাত্রলীগের মহানগরীর নেতাকর্মীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের নেতাকর্মীদের সাথে দেশি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মলচত্তরে রেজিস্টার বিল্ডিংয়ের সামনে জড়ো হচ্ছেন। টিএসসিতে অবস্থানরত আন্দোলনকারীদের কাছে এই খবর পৌছার পরেও এখনও জমায়েত জারি রয়েছে। ভয় দেখানোর জন্য রাতে ছাত্রলীগ অস্ত্রমহড়া দিতে পারে বলে একাধিক আন্দোলকারী এই প্রতিবেদকের নিকট আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি জসিমউদ্দিন হল শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল বাসিত তার ফেসবুক ওয়ালে এমন উপস্থিতির সত্যতার কথা জানিয়েছেন।

 

মল চত্ত্বরে আছি একা।চারপাশে লাঠি সোঁটা,হকিস্টিক,রড,রামদা হাতে মল চত্ত্বর ভরা ঢাকা কলেজ,মহানগর উত্তর-দক্ষিনের কয়েকশো…

Posted by Abdul Basit on Monday, April 9, 2018

রাত সাড়ে আটটার দিকে এমন অবস্থা দেখা যায়। এদিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সংবাদকর্মীদের বিশ্বাস করতে পারছেন না। কয়েকজন সাংবাদিক খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে হয়রানির শিকার হয়েছেন। তাদের আশঙ্কা সরকারের সাদা পোশাকধারীরা সাংবাদিক পরিচয়ে তাদের তথ্য ও ছবি সংগ্রহ করতে এখানে এসেছেন যাতে তাদের সহজে শনাক্ত করা যায়। এই  অাতঙ্ক থেকে তারা কয়েকজন সাংবাদিকের মোবাইল ও ক্যামেরা থেকে ছবি মুছে দিয়েছেন। অন্যদিকে ভুয়া খবর ছড়ানোর জন্য অনেক আন্দোলনকারী সংবাদমাধ্যমের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের মধ্যে বিভেদ ইতোমধ্যে স্পষ্ট হয়েছে। একদল আন্দোলনে শরীক হয়েছেন। অন্যদল আন্দোলনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আন্দোলনকারীদের সাথে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া দিচ্ছেন। তবে এতদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের যে একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল তা আর লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। উপাচার্যের বাসভবনে হামলা ও আন্দোলন স্থগিতের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদের চলতে থাকা সমাবেশ প্রমাণ করে আন্দোলনে আর সরকার দলীয় ছাত্রসংগঠনের নেতাদের প্রভাব নাই।