ছোটদের বড় ম্যাচ!
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে রেলিগেশন রাউন্ডের অলিখিত সেমিফাইনালে মুখোমুখি হওয়া ব্রাদার্স ইউনিয়ন-অগ্রণী ব্যাংক ম্যাচকে স্বল্প শব্দে এভাবেই বর্ণনা দেওয়া যায়। শেষের আগে শেষ বলে কিছু নেই, হারার আগে হার মানতে নেই। হারলেই অবনমন, এমন সমীকরণে মানরক্ষার ব্যাপারটা প্রকট। বিকেএসপির মাঠ চাক্ষুষ করেছে দুর্দান্ত এক ওভার। ম্যাচের ছয়শতম বলের পরিণতি ফের মনে করায়, ক্রিকেট চিরস্থায়ী অনিশ্চয়তার খেলা। গলির ক্রিকেট থেকে পেশাদারিত্ব, সবখানেই বিদ্যমান এই অনিশ্চিত আখ্যান। রোমাঞ্চ, উৎকণ্ঠা, উত্তেজনার চূড়ান্ত পরীক্ষায় ঋষি ধাওয়ানের করা ম্যাচের শেষ বলে চার মেরে দলকে উত্তীর্ণ করেছেন নাজমুস সাদাত।
তার আগের গল্পটা ধুন্ধুমার, যাতে আলোকিত সৌম্য সরকার। ৬৭ বলে ফিফটি, ১০৭ বলে সেঞ্চুরি, ১২৭ বলে ১৫৪ রান! লিস্ট ‘এ’ ক্যারিয়ারে নিজের সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেললেন সৌম্য, যা চলতি লীগের সর্বোচ্চ ইনিংসও। মারলেন ১১টি ছক্কা, এটিও ধরাছোঁয়ার বাইরে। এদিন অনেক কিছুই হয়েছে। হতাশা প্রাপ্তির মেলবন্ধনে দুই দলের খেলোয়াড়রা নিজেদের উজাড় করে দেন, ম্যাচেও হয়ে যায় মনে রাখার মত কতো কিছু।
রান তাড়া করে জেতার একযুগ পুরনো রেকর্ড অতিক্রম, ঋষিকে সঙ্গে নিয়ে অগ্রণী ব্যাংকের ৫ম উইকেট জুটিতে সৌম্যর ১৭১ রানের জুটি।
সৌম্যের গড়ে দেয়া ভিতে দাঁড়িয়ে ঋষি খেলেন ৬৫ বলে অপরাজিত ৮০ রানের ইনিংস। অগ্রণী ব্যাংক খেই হারায় গৌধূলিলগ্নে। ১৩ রানে শেষ পাঁচ উইকেট খুইয়ে তারা থামে ৩৩৪ এর ঘরে।
জবাব দিতে নেমে ব্রাদার্সের দুই ওপেনার জুনাইদ সিদ্দিকী-মিজানুর মিলে তুলোধোনা করেন বিপক্ষকে। ১৩.৪ বলে স্কোরবোর্ডে রান ১২১। ৪৫ বলে ৬২ করে আহসানের শিকার হবার পর খানিক ঝিমিয়ে পড়েন সিদ্দিকীও। ২য় উইকেটে মাইশুকুরের সাথে পঞ্চাশোর্ধ জুটি করেছেন, তবে তার গতি ছিল কিঞ্চিত শ্লথ। দুজনের ৭৭ রানের জুটিতে বল লেগেছে ৮৯টি। ব্রাদার্স ইউনিয়ন আক্ষরিক অর্থেই খেলেছে মিলেমিশে, দলের প্রয়োজনে। প্রথম তিনজন ছাড়াও ফিফটি হাঁকান দেবব্রত দাস। তবে সব ছাপিয়ে ৭ বলে ১০ করা নাজমুস সাদাদকে ঘিরেই আনন্দে মাতে দল।
শেষ ওভারে ব্রাদার্সের দরকার ৯ রান, ঋষি ধাওয়ানের প্রথম বলে সাদাতের সিঙ্গেল। পরের বলেই আউট সেট ব্যাটসম্যান দেবব্রত। পরের ৩ বলে সাদাত ও সোহরাওয়ার্দি শুভকে ৪ রান এর বেশি করতে দেয়নি ঋষি। শেষ বলে সাদাতের সামনে তাই ‘হয় মারো নয় মরো’ অবস্থা। সাদাত স্কুপ করলেন, চার হল, বিজয় এলো। বিফলে গেল সৌম্য- ঋষির দুর্দান্ত দুই ইনিংস। অগ্রণী ব্যাংকের অবনমন নিশ্চিত, পরের মৌসুমে তাদের দেখা মিলবে প্রথম বিভাগ ক্রিকেটে। আর মরতে মরতে জিতে গিয়ে সাদাত হয়ত মুচকি হাসছেন, ‘ওস্তাদের মাইর শেষ বলে’ বুলি আউড়িয়ে’…
স্কোরকার্ড:
• ব্রাদার্স ইউনিয়ন ৩৩৫/৬ (৫০) (জুনাইদ সিদ্দিকী ৮৩, মাইশুকুর ৮২, দেবব্রত দাস ৭৩, মিজানুর রহমান ৬২, ধাওয়ান ৩/৭১)
• অগ্রণী ব্যাংক ৩৩৪ (৪৯.১) (সৌম্য সরকার ১৫৪, ঋষি ধাওয়ান ৮০*, ধীমান ঘোষ ২৫, সাখাওয়াত ৩/৪৩, সোহরাওয়ার্দি ৩/৪৮)
ফলাফল : ব্রাদার্স ৪ উইকেটে জয়ী।