মোটিভেশনাল ইসপিইচ!

মোটিভেশনাল ইসপিইচ!

কি হবে? একদিন তো মরেই যাবো

ফেসবুক ব্যবহারকারীদের প্রতিদিনই এই বাক্যটি দেখতে হইতেছে। মশকরা প্রিয় জাতি হিসাবে পরিচিত বাঙ্গালিরা সেলফি, কুলফি, ঈদফি, প্রিজমার হালত টাইট কইরা এখন পড়ছে মরার পিছে। মরার মতো ভয়ানক বিষয়রে মশকরায় পরিণত করার বিষয়টা অনেকেই স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারেন নাই। তারা পুরা বিষয়টা নিয়াই হতাশ। আবার এই মশকরাকারীদের অনেকে বলতেছেন হতাশাগ্রস্থ। জটিল হালত। এখন মরারে মশকরায় পরিণত করা সহীহ হইছে কি না সে তর্কে আমি নাই। আর মরারে মশকরা থাইকা ফিরায়া আবার মারার চেষ্টাও আমি করবো না। আমি বরং কথা বলবো এই হতাশাগ্রস্থদের হতাশা দুর করার উপায় নিয়া। তার আগে একটু দেখবো হতাশার হাল হাকিকত।

‘হতাশা’, জিন্দেগির হালত টাইট করার জন্য এই একটা শব্দই যথেষ্ট। কবরে এক পা চইলা গেছে এমন বান্দা থাইকা শুরু কইরা কেবলই পয়দা হওয়া টেও টেও, প্রত্যেকেই হতাশ। বিশেষ কইরা এয়ারটেল প্রজন্ম। চোখ বুজার আগে মোবাইল, চোখ খুইলাও পয়লা মোবাইল এই নীতিতে বিশ্বাসী এই নয়া প্রজন্মই এই টাইপের টেটাসের জনমদাতা। রক্ষণাবেক্ষণকারী। এগোর হতাশ হবার জন্য নির্ধারিত কোনো কারণ লাগে না। দিপিকা কেন কাপুররে রাইখা সিংরে বাইছা নিলো এইটা নিয়া তারা হতাশ। আবার অমুক দলের তমুক খেলোয়াড় কেন জিতলো না সেইটা নিয়াও তারা হতাশ। সেই হতাশা থাইকাই নয়া কোনো ট্রেন্ড আইনা যতক্ষণ না সেইটা দিয়া গন্ধ না ছুটতেছে ততক্ষণ কপচাইতেই থাকে। এইটা দেইখা তাগোর হতাশার হালত সম্পর্কে ধারণা পাওয়া গেলেও কেউই হতাশা দুর করার কোনো পরামর্শ দেয় না।

পয়লা পরামর্শ হইতেছে এই মোবাইল টিপা বাদ দিয়া দিনে দুইটা বাঙ্গলা সিনেমা দেখবেন। আগেই মুখ ফিরায়েন না, পুরা কথাটা শেষ করতে দেন। বাংলা সিনেমারে তো বেইল দেন না। এইটা যে কতবড় ঔষুধ সেইটা জানলে হতাশ হইতেন না।

জসিমেরে দেখেন। সিনেমার নাম যেমনই হোক, বান্দার লটারি জেতা নিশ্চিত। এক তিনি যতবার লটারি জিতছেন বাংলাদেশের ইতিহাসে এতগুলান লটারির টিকিট ছাড়া হইছে কি না সন্দেহ। জসিমেও যদি হতাশা না কাটে কোনো সমস্যা নাই। তার পরের জেনারেশনে যান। নায়িকাদের হালতটা একটু দেখেন মনোযোগ দিয়া। আধ ছটাক জীবন নিয়া একেক জন নায়করে তুলতে হইতো আধা মণ, দেড় মণ ওজনের একেকটা নায়িকারে। বান্দার হালতটা একটাবার চিন্তা কইরা বলেন তো এর চেয়েও খারাপ অবস্থায় আপনে সত্যিই আছেন কি না?

তাও যদি হতাশা না কাটে কোনো সমস্যা নাই। আবার নায়কে ফেরত যান, এইবার ধরবেন দুইজনরে। মান্না আর ওমর সানি। ভিলেন যতবড় আদমিই হোক মান্নার থাবড়ায় তিনি বয়ড়া হবেন না এইটা সম্ভব না। মান্না যদি একাই থাবড়ায়া এতজনরে বয়ড়া করতে পারেন, আপনে হতাশ হইয়া বইসা আছেন কেন বলেন? থাবড়া-থাবড়ি যদি ভালো না লাগে সমস্যা নাই, ওমর সানিতে সুইচ করেন। দুই পকেটে হাত ঢুকাইয়া একাই যত জন চোধুরী সাবের মেয়েরে তিনি পটাইছেন এইটা তো পুরা বিশ্বেই বিরল! এক ওমর সানী যদি একাই এতগুলান চোধুরী সাবের মেয়েরে পটাইতে পারেন, আপনে একজনরেও পারবেন না? থুক্কু, একটা কিছুও করতে পারবেন না?

আগের জেনারেশনে না পোষাইলেও চিন্তার কিছু নাই। চলতি সিনেমার হালত দেখলেও আপনার হতাশা দশ মিনিটেই নাই হয়া যাওয়ার কথা। অভিনয়ের ‘অ’ও না জাইনা শুধু তেল দিতে পারার গুণেই একেকজন নিজের নামের আগে নিজেই স্টার বসায় দিছে। নিজেই বয়ান দিতেছে, “আমার এ ফিলিমটায় আমারে নতুন কইরে আবিষ্কার করতে পারবেন দর্শকেরা। নাচ, গান, ফিলিমের নাম সবই নতুন!”। হালটা চিন্তা করেন! এগুলান কি কৃষ্ণগহ্বর নাকি হোমিও মেডিসিন যে তাগোরে আবিষ্কার করা হইবো? এগোর চেয়েও আপনে খারাপ? যদি, আসলেই হন তাইলে বাকি অংশ পড়ার কিস্সু নাই। আর যদি সামান্য হইলেও হতাশা কাটে তাইলে আগাইতে থাকেন।

আপনের যদি ফিলিমে সমস্যা হয় তারও সমাধান আছে, হতাশ হবার কারণ নাই। বাংলাদেশে থাকেন আর ক্রিকেট দেখেন না, এইটা তো সম্ভব না। আর ক্রিকেট দেখেন কিন্তু সুজনরে চেনেন না, এইটাও সম্ভব না। তার একটা ছবি সামনে রাখেন। এরপর তার যতগুলা পদ পদবী আছে ওপর থেইকা নিচ কইরা একটার পর একটা লেখতে থাকেন। পদ পদবী যদি হাইটে সুজনের চেয়ে কম হয়, আমি আকিকা দিয়া নাম বদলামু, কথা দিলাম। আপনে পাড়ায় তো ক্রিকেট খেলছেন, খেলছেন না? আপনি নিশ্চিন্ত থাকেন আপনের স্পিন বলের গতিও তার পেস বলের চাইতে বেশি। তার যুগে যদি এমন মোবাইল থাকতো, ব্যাটসম্যান বোলিং এর সময় একবার বিবিরে ফোন দিয়া পুরা পরিবারের হাল হকিকতের খোজ নিয়া ফোন কাইটা পকেটে রাখার পরেও পাঁচ-সাত সেকেন্ড সময় পাইতো বল খেলার জন্য! এমন একজন যদি সাইজের চেয়ে বেশি পদ পদবি নিয়া বইসা থাকতে পারে, আপনে কিছুই করতে পারবেন না?

ভাই, এই বিষয়ে যে রাজনীতি ঢুকায়া হতাশ হইয়্যা পড়ছেন, আমার একটা কথা মানেন, অনন্ত জলিলের ছবি দেইখা ঘুমায়া যান। আপনের হতাশা কাটার চান্স নাই। সুজনে না হইলেও সমস্যা নাই, অপশন আছে। দেশি ক্রিকেটারে ভরসা নাই? বিদেশি স্যাম্পল দিতেছি তাইলে। রানাতুঙ্গার নাম মনে আছে? না থাকলেও সমস্যা নাই, গুগলে সার্চ দেন পায়া যাবেন। এই আদমি পোয়াতি অবস্থায় পুরা ক্যারিয়ার শেষ করছেন। আদমি হইয়্যাও পোয়াতি হবার মতন অসম্ভবরে তিনি সম্ভব করছেন। আবার সেই অবস্থায় ক্রিকেটও খেলছেন! একটাবার চিন্তা করেন, রানাতুঙ্গা একাই দুইটা অসাধ্য সাধন করলো, আর আপনে একটা বিষয় নিয়াই হতাশ হইয়া আছেন! আগেই ক্লিয়ার করি, অসাধ্য সাধন করেন তয় পোয়াতি হওয়ার চেষ্টা কইরেন না ভাই। এমন ক্রেডিট একজনের কাছে থাকাই ভালো!

ক্রিকেট যদি সহীহ না ঠেকে তাতেও সমস্যা নাই। আপনে তার মানে বিদেশি মালের, তওবা, মানে ফিলিমের ভক্ত। কারিনারে তো চিনেন। জাব উই মেটওয়ালি। কারিনার জামাই, সাইফের পয়লা বিয়াতে কারিনা যখন যায়, তখন সে সাইফরে ডাকতো আংকেল বইলা। এখন সাইফের নিকাহ কইরা ডাকে ওগো বইলা। কারিনার আংকেল তার ওগো হয়া গেলো কিন্তু আপনে বইসা আছেন হতাশ হয়া!

এরপরেও যদি না কাটে, মানে হতাশা না কাটে, হতাশ হওয়ার কিছু নাই। অপশন আরো আছে। সানিরে দেখেন। এট্টুক পইড়াই যারা সানির শেষে লিওন লায়াগ সার্চ দিয়া দিছেন, ভাই আপনেরা ঔষুধ খান। বাকিরা শুনেন। সানি দেওলরে দেখেন। কোনটা নাচ আর কোনটা ফাইট তা আজ পর্যন্ত কোরিওগ্রাফার বা অ্যাকশন ডাইরেক্টর, কেউই ধরতে পারে নাই। কিন্তু বান্দা হিট। একাই আরেক দেশের আর্মিরে উড়ায়া দিয়া আসতেছে কিল-ঘুসি মাইরাই। হের একলার হাতে আর্মি নাই হয়া গেলো আর আপনে হতাশারই হারাইতে পারলেন, দিলে চোট লাগলো ভাই।

ফিলিম যেহুতু দেখেন গানও শুনার অভ্যাস থাকার কথা। হিমেশ এর নাম শুনছেন? হ্যা, নাক দিয়াই গান গায়া হিট যে আদমি। একজন নাম দিয়া গান গায়া কাপায়া দিতাছে আর আপনে মুখের ভিতর বার্গার ভইরা অস্থির হইতেছেন, তাইলে হতাশা কেমনে কাটবো ভাই?

এখন হতাশায় ভুগা অনেকে এই লেখা পইড়াই হতাশ হয়া গেছেন। তা হন সমস্যা নাই, তয় দোহাই লাগি হতাশার জ্বালা ফেসবুকে টেটাস মাইরা মিটায়েন না। আপনাগের হালত দেইখা বুজুর্গ সমাজও দিন দিন হতাশ হয়া যাইতেছে!