রেকর্ড যাকে ছাড়ে না, রেকর্ডকে যিনি ছাড়েন না

রেকর্ড যাকে ছাড়ে না, রেকর্ডকে যিনি ছাড়েন না

সাড়ে ৪১ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতাসম্পন্ন তুরিনের জুভেন্তাস স্টেডিয়ামে বহু দর্শক তখনো নিজের সিটটা খুঁজে পাননি। মাত্রই মিনিট দুয়েক আগে ম্যাচ শুরুর বাঁশি বাজলেও ধাতস্থ হতে সময় লাগারই কথা মহারণ দেখতে আসা মানুষজনের। তারা দেখতে এসেছেন, চ্যাম্পিয়ন্স লিগের প্রথম কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগে রোনালদো খেলতে এসেছেন। বলা ভাল, খেলে দিতে এসেছেন, অসংখ্যবারের মতো। মার্সেলো টু ইস্কো, ইস্কো টু রন, রন টু নেট। গোল! ম্যাচের বয়স মোটে আড়াই মিনিট!

রোনালদো, রেকর্ডের সঙ্গে যার নিত্য বসবাস। রেকর্ড যাকে ছাড়ে না, রেকর্ডকে যিনি ছাড়েন না। মঞ্চ যদি হয় ইউসিএল, তখন গেঁড়ে বসেন খুঁটি। সেই খুঁটিতে ভর দিয়ে গড়ে চলেছেন ইউরোপ সেরার টূর্ণামেন্টে একের পর এক কীর্তি। আজ গড়লেন একমাত্র ফুটবলার হিসেবে টানা দশ ম্যাচে (১৫ গোল) গোল দেবার অনন্য কৃতিত্ব। গতবছর কার্ডিফে জুভেন্তাসের বিপক্ষে ফাইনাল দিয়ে শুরু করেছেন, বছরঘুরে ফের তুরিনের বুড়িরা এসেছে, গোলস্কোরার রোনালদো নামটা রয়ে গেছে! ভয় ছিলো, ইউসিএলের নকআউট স্টেজে এর আগে তিনবার রিয়ালকে নকডআউট করেছে ইতালিয়ান দৈত্যরা। আবার গেল দুই সাক্ষাতে বিজয়ের ঝান্ডা উড়িয়েছে রিয়ালই, তাও ফাইনালে। দিনকয়েক আগেই জুভ দলপতি জিয়ানলুইজি বুফন রোনালদো সম্পর্কে বলেছিলেন, “রোনালদো একটা দুঃস্বপ্নের নাম। তার মুখোমুখি হওয়া মানেই আরেকটি নির্ঘুম রাত উপহার পাওয়া।” সময়ের অন্যতম সেরা গোলরক্ষককে ভুল প্রমাণ হতে দেননি মাদ্রিদ মহারাজা, যদিও দুঃদ্বপ্নেও এমনটা চাননি জিজি। একজোড়া গোল খেয়ে ফের রোনালদোর হাত থেকে দলকে বাঁচাতে ব্যর্থ তিনি। আর, ৬৪ মিনিটে রিয়াল ও রোনালদোর দ্বিতীয় গোলটা বুফনকে হয়তো হঠাৎ হঠাৎ ঘুম থেকে জাগিয়ে দেবে বহু রাত্তিরে।

জুভ ডিফেন্সকে কাটিয়ে বল নিয়ে রোনালদো একেবারে গোললাইনের পাশে। সামনে বুফন। চেষ্টা করার ঝুঁকি নেননি। ডি বক্সের শেষ প্রান্তে থাকা লুকাস ভাস্কুয়েজকে বল দিলেন। ভাস্কুয়েজের জোরালো শট, উড়ে এসে বুফির স্বভাবজাত দুরন্ত সেইভ। বল তখনো ডি বক্সেই। সাথে সাদাকালোর ছয় সৈন্য। বল কার্ভাহালের পায়ে। ক্রস দিলেন, রোনালদো উল্টে গিয়ে শট নিলেন। বুফন চেয়ে রইলেন। বাইসাইকেল কিক এবং গোল! মাঝে মধ্যে বিপক্ষের বিষাক্ত মায়ায় বিমোহিত হতে হয়। চোখের পলকে হয়ে যাওয়া ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর ক্যারিয়ারের অন্যতম সুন্দর গোলে মন্ত্রমুগ্ধ দর্শকের ভূমিকাই পালন করছিলেন বুফনসহ সাতজন জুভ প্লেয়ার, কার্ভা ও ভাস্কুয়েজ। গোল নাম্বার হান্ড্রেড টুয়েন্টি!

রাতটা রোনালদোরই। দুই গোল করেছেন, ৭২ মিনিটে মার্সেলোকে দিয়ে করিয়েছেন দলের তৃতীয় ও শেষ গোল। শেষের দশমিনিটে কম করেও পেয়েছেন গোটা চারেক সুযোগ। এর একটিও জাল ছুঁলে হ্যাটট্রিক হয়ে যেতো। সবসময় হ্যাটট্রিক লাগে না। হ্যাটট্রিক শব্দটি রনের কাছে দুধভাত। বাইসাইকেল তেমনটা নয়। তাই বাইসাইকেল গোলের স্তুতিতেই পূর্ণতা পাক এই জয়ের, এমন রাত রোজ রোজ আসে না। অবশ্য, চলতি সিজনে ৯ ম্যাচে ১৪ গোল করে ফেলা মহামঞ্চের মহারাজা কোন না কোন বাহানায় ইউসিএলের আলোকমালাকে নিজের দিকে টানবেনই।