রোনালদোবিহীন রিয়ালের ৩ গোলের জয়

রোনালদোবিহীন রিয়ালের ৩ গোলের জয়

লাস পালমাস ০-৩ রিয়াল মাদ্রিদ
বেল ২৬’, ৫১'(পে)
‎বেনজেমা ৩৯'(পে)

রোনালদোবিহীন রিয়াল বেলের জোড়া গোলে পূর্ণ তিন পয়েন্ট নিয়েই মাঠ ছাড়লো লাস পালমাসের বিপক্ষে। ৩-০ গোলের জয়ে অপর গোলটি করিম বেনজেমার।

প্রথমার্ধ

প্রথমার্ধটি রিয়াল সমর্থকদের মনে মিশ্র অনুভূতির জন্ম দিয়েছে বলা যায়। ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যাওয়ার স্বস্তির পাশাপাশি ছিলো মাদ্রিদের চেনা ছন্দ অনুপস্থিতির আফসোস। জুভেন্টাস এর বিপক্ষের ম্যাচকে মাথায় রেখে জিদান একাদশ সাজিয়েছিলেন মূল একাদশের নিয়মিত পাঁচ মুখ মার্সেলো, রামোস, রোনালদো, ক্রুস এবং কার্ভাহালকে ছাড়াই। এর প্রভাব স্কোর লাইনে না পড়লেও রিয়ালের ছন্দে ব্যাঘাত ঘটিয়েছে নিঃসন্দেহে। পাসিং, প্রেসিং এবং পরিকল্পিত ফুটবল; প্রায় সবই ছিলো অনুপস্থিত। আর সে সুযোগ কাজে লাগিয়ে বেশ কবারই বিপদের সম্ভাবনা তৈরি করেছিলো পালমাস। কিন্তু, আক্রমণভাগের ব্যর্থতায় জাল আর খুজে নেয়া সম্ভব হয়নি। অ্যাসেন্সিওর অমার্জনীয় মিসে যখন আশঙ্কার মেঘ ঘনাচ্ছে কেবল; ঠিক তখন বলকান ম্যাজিশিয়ানের ম্যাজিক। মদ্রিচের বাড়ানো অসাধারণ বলটি আরো অসাধারণ ভঙ্গিমায় নিজের আয়ত্ত্বে নিয়ে যে ফিনিশিংটি দিয়েছেন ওয়েলস উইজার্ড বেল; একটি শব্দেই তাকে ব্যাখ্যা করা সম্ভব, অসাধারণ। শঙ্কার মেঘ ভর করার আগেই স্বস্তি মাদ্রিদ শিবিরে। যেটুকুও বা সম্ভাবনা ছিলো পালমাসের ম্যাচে ফেরার সেটাও যেন হেলায় হারাতে উদ্যোগী হলেন ক্যালেরি। তার করা অহেতুক ফাউল থেকে পাওয়া পেনাল্টিতে গোল করে বেনজেমা এনে দেন ২-০ গোলের লিড। ব্লাংকোসদের জার্সি গায়ে নিজের ৪০০ তম ম্যাচটিকে মনে রাখার মতো করেই প্রথমার্ধ শেষ করেছেন বেনজেমা। বাজুতে অধিনায়কের আর্মব্যান্ড, নামের পাশে এক গোল, এমন একটি রাতকে স্বরণীয় করে রাখতে আর কি লাগে?

দ্বিতীয়ার্ধ

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই আরো একবার রিয়ালকে পেনাল্টি উপহার দেয় পালমাস। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছিলো ম্যাচ জয়ের চেয়ে বরং রিয়ালের হাতে ম্যাচ তুলে দিতেই বেশি আগ্রহী পালমাসের রক্ষণভাগ। এবার পেনাল্টি নিলেন বেল। এবং তার নিখুঁত নিশানায় ৫১ মিনিটেই স্কোর লাইন ৩-০। জুভেন্টাস রিয়াল কোচের মাথায় কতটা চেপে বসেছে তার শেষ নজির দেখা গেল ৬১ মিনিটের মাথায়, যখন জিদান একই সাথে তুলে নিলেন মদ্রিচ এবং কাসেমিরোকে। নাভাস, ভারান, বেল এবং বেনজেমা বাদে কেউই মূল একাদশের নিয়মিত মুখ নন। রক্ষণভাগকে তো মনে হচ্ছিলো কাস্তিয়ার রক্ষণ। সবচেয়ে সিনিয়র ভারানের বয়স সীমাই পঁচিশ পেরোয়নি। বাকি তিন জনের মধ্যে বয়স্ক ভ্যালেহোর বয়স ২১! কিন্তু এই আনকোরা রক্ষণ বা অচেনা মাদ্রিদ স্কোয়াড; কোনোটারই সুবিধা নিতে পারেনি পালমাস। বরং, নাভাসকে একা পেয়েও যে দক্ষতায় বল বাইরে পাঠালেন এক্সপোজিতো, সেটির ফুটবলীয় কোনো ব্যাখ্যা আছে বলে মনে হয় না। একই পথে হেটেছে মাদ্রিদও। বেল-বেনজেমা-লুকাস; প্রত্যেকেই যেন দিব্যি খেয়ে নেমেছিলেন গোল না করার। গোল রক্ষককে একা পেয়েও বেনজেমার মিস এখন এতটাই নিয়মিত দৃশ্য যে সেটিকে অস্বাভাবিক কিছু বলে মনে হয়নি। কিন্তু তার সাথে তাল মিলিয়ে গোল মিসের মহড়া দিয়ে বেল নষ্ট করেছেন হ্যাট্রিকের সুযোগ। একটি গোল নিঃসন্দেহে লুকাসের মূল একাদশে জায়গা পাওয়ার দাবিটিকে আরো জোরালো করতো। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ৩-০ গোলে এগিয়ে যাবার পর মনে হয়েছে শুধু জিদান না, মাঠের খেলোয়াড়দের মনও তুড়িন এর বুড়ির দিকেই।

৩-০ গোলের জয়টি জিদানকে তিন পয়েন্ট এনে দিলেও পূর্ণ স্বস্তি দিচ্ছে না নিশ্চিত। এতো সতর্কতার পরেও প্রথমার্ধেই তিনি হারিয়েছেন মৌসুমের অন্যতম কার্যকর অস্ত্র নাচোকে। কখনো সেন্ট্রালে, কখনো লেফট বা কখনো রাইট, যখন যেখানেই শূণ্যস্থান সৃষ্টি হয়েছে তা পূরণ করেছেন নাচো। তার মুখায়বয়বই বলে দিচ্ছিলো ইনজুরিটা হালকা না। এ আঘাত রিয়ালকে কতটা ভোগায় সেটিই দেখার বিষয় এখন।