ফেসবুক আসলে আমাদের কী কী জানে?

ফেসবুক আসলে আমাদের কী কী জানে?

বলা হয়ে থাকে, তথ্যই আজকের দিনের তেল সম্পদ। এক্ষেত্রে তফাত শুধু বড় দেশগুলো তেলের জন্য কেবল ছোট দেশগুলোর ওপর হামলা করে। কিন্তু তথ্যের ওই যুদ্ধে করপোরেশনগুলো দুনিয়ার সবাইকেই নিজের নজরদারিতে রাখতে চায়। এ যুদ্ধ এমন এক যুদ্ধ যার কোনো শুরু এবং শেষ পর্ব নেই। কবে থেকে তথ্যের ওই যুদ্ধ অবস্থার শুরু তা টের পাননি কেউ। সম্প্রতি কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা বনাম ফেসবুক বিতর্ক প্রকাশের পর থেকে সারা দুনিয়ায় হ্যাশট্যাগ অ্যাকাউন্ট মুছে ফেলার (#ডিলিট ফেসবুক) আন্দোলন শুরু হয়েছে। অবশ্য প্রশ্ন থেকে যায়, যেসব তথ্য ইতোমধ্যে ফেসবুকের হাতে চলে গেছে, সেসবের কী হবে?

ওই প্রশ্নের একটি সহজ উত্তর দিয়েছিলেন প্রযুক্তি খাতের মিডিয়া টেক ক্রাঞ্চ-এর সিনিয়র লেখক রোমেইন ডিলিট। তিনি বলেন, আসলে ফেসবুকের যা জানা ও তথ্য নেয়ার তা ইতোমধ্যেই নিয়ে নিয়েছে।

ফেসবুকের প্রচণ্ড অনৈতিকতা ও বিলিয়ন বিলিয়ন ব্যবহারকারীর অজ্ঞতার কারণেই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অকল্পনীয় তথ্য পাচার হয়ে গেছে। অবশ্য সর্বশেষ আজ বুধবার ফেসবুকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা বাড়াতে নতুন প্রাইভেসি পলিসি আনবে তারা। সামাজিক মাধ্যমটির চিফ প্রাইভেসি অফিসার এরিন ইগান ও ডেপুটি কাউন্সেল অ্যাশলি বেরিনগার এক ব্লগ পোস্টে প্রাইভেসি সেটিংসে পরিবর্তন আনার কথা জানান।

ফেসবুক আসলে আমাদের ব্যাপারে কী জানে বিষয়ে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ডিলিট জানান, ফেসবুকের শর্তাবলির নামে যে লম্বা ফিরিস্তি থাকে তা আসলে একটি ‘বিশাল অসত্য’। ওই শর্তের তালিকাটি (টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশনস) বেশ লম্বা। কিন্তু বক্তব্য একেবারে ভাসা ভাসা। ফলে মানুষজন ওই শর্তের ব্যাপারটিতে সর্বোচ্চ চোখ বোলায়, পড়ার আগ্রহ পায় না।

কিছুদিন আগে নিউজিল্যান্ডের ফেসবুক ব্যবহারকারী ডিলান ম্যাক্কে তার ফেসবুক ডাটা ডাউনলোড করে হতবিহ্বল হয়ে পড়েন। যারা ব্যক্তিগত গোপনীয়তার ব্যাপারটি আমলে নেন তারাও হতবিহ্বল হয়ে পড়বেন। কেননা ফেসবুক এমন সব তথ্য ও জিনিসের তালিকা করে যা জানার কোনো কারণ ফেসবুকের নেই।

যেমন ম্যাকে দেখতে পান, তার ফোন দিয়ে যাকে যাকে কল করেছেন তার তালিকা ফেসবুকের কাছে আছে এবং সেটি ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারের তালিকা নয়, ফোন দিয়ে করা কললিস্ট। আরস টেকনিকার খবর মতে, ম্যাক্কে ২০১৫ সালে মেসেঞ্জার চালু করেছিলেন। তিনি দাবি করেছেন, ওই মেসেঞ্জার থেকেই মেসেজ ও কল লিস্ট তার অনুমতি ছাড়াই ফেসবুক নিয়ে নিয়েছে।

এখানেই শেষ নয়।

টুইটার ব্যবহারকারী ম্যাট জনসন এক টুইটে জানান, তার ফেসবুক থেকে ডাউনলোডকৃত জিপ ফাইলে সব নম্বরের তালিকা ছিল। ওইসব নম্বরে তিনি কল বা মেসেজে দিয়েছিলেন।

এ রকম অভিজ্ঞতা অনেকেরই হয়েছে। ফলে এটিকে বিছিন্ন কোনো ঘটনা বলা যায় না।

এছাড়া ফেসবুকের এসএমএস-এর ক্ষেত্রেও মেটাডাটা ব্যবহৃত হয়েছিল। ফলে অনেক সময় দেখা যেত, অ্যান্ড্রয়েডের ক্ষেত্রে ইনবক্সের বদলে ডিফল্ট হিসেবে ফেসবুক মেসেঞ্জার চালু হয়ে যায়। এক্ষেত্রে ফেসবুকের দাবি হলো, এর মাধ্যমে আপনাকে অন্যদের সঙ্গে যুক্ত করতে ফেসবুকের সুবিধা হয়। তাই আপনি প্রথমবারের যখন মেসেঞ্জার চালু করেন তখন ফেসবুক আপনার সব কন্টাক্ট নম্বর নিয়ে নেয়। তবে আজকাল সেটি শুধু আর ফোন নম্বর নয়, আপনার সব এসএমএস, এমনকি কতক্ষণ কার সঙ্গে কথা বলেছিলেন ওই তথ্যও হাতছাড়া হয়ে যায়।

অবশ্য ফেসবুক বিস্তারিত জানায়নি, গ্রাহকের ওইসব ব্যক্তিগত তথ্য নানানভাবে নেয়ার পেছনে উদ্দেশ্য কী।

আরেক টুইটার ব্যবহারকারী ডিলান কুরানও ওইসব তথ্য পাচার হওয়া বিষয়ে জানিয়েছেন, অন্তত যেসব তথ্য তার অনুমতি নিয়েই নেয়া হয়েছে সেসবও তো কম নয়। এটিকে তিনি বলেন, ‘ফেসবুকে আপনি যা লেখেন, যে কোনো ফাইল পাঠান বা গ্রহণ করেন, এমনকি অডিও মেসেজও গ্রহণ বা পাঠান এর সবই ফেসবুকের সম্পত্তি হয়ে যায়।’

অন্যদিকে শুধু ফেসবুক নয়, সর্বদা বিরাজমান গুগল প্রতিনিয়ত আপনার-আমার সব তথ্য তার সমুদ্রের মতো ভাণ্ডারে জমিয়ে রাখছে।

আরেকটি জিনিস ব্যাখ্যা করা জরুরি যে, অ্যান্ড্রয়েডের সঙ্গে গুগল চুক্তিবদ্ধ থাকায় ফেসবুক যেসব তথ্য আমাদের অ্যান্ড্রয়েড থেকে বিনা অনুমতিতে নিজেদের হস্তগত করেছে ওই দায় গুগলেরও নিতে হবে।

আপনার এমন তথ্যের খবরও ফেসবুক দিতে পারবে যা এক দশক আগে ঘটে গেছে, আপনি তা ভুলেও গেছেন। এক্ষেত্রে দুঃখজনক হলেও সত্য, আপনার বেশি কিছু করারও নেই।