ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের শ্রীনগরের বালহামা গ্রামে ভারতীয় বাহিনী ও কাশ্মিরী স্বাধীনতাকামীদের মধ্যে ২ দিন ব্যাপি লড়াইয়ের একপর্যায়ে কবি গোলাম মুহাম্মাদ ভাটের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় ভারতীয় সেনারা। এতে ঘরের আসবাবপত্রের সাথে কবির ৩০ বছর ধরে লেখা বহু কবিতার পাণ্ডুলিপি পুড়ে গিয়েছে। খবর আলজাজিরার।
এ পর্যন্ত ৫২ বছর বয়সী এই কবির ৩টি বই প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া তার ঘরে অসংখ্য অপ্রকাশিত কবিতার পাণ্ডুলিপি ছিল।
ঘটনার সময় ভাট তার গৃহপালিত গরুদের পানি পান করাচ্ছিলেন, এমন সময়ে তিনজন স্বাধীনতাকামী তার বাসায় আশ্রয় প্রার্থনা করেন। এর ঘন্টা তিনেক পর ভারতীয় সেনারা তার বাড়ি ঘেরাও করে এবং কবিকে বাঁচতে চাইলে বাড়ি থেকে বের হয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। এরপর তারা কবির বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়।
কবি বলেন, “দুই দিন যাবত আগুনের ধোঁয়া উড়তে থাকে এবং আমাদের চাল, ভুট্টা, পোষাক, কাঠ এবং ব্যবহৃত সব কিছু পুড়ে গন্ধ বের হতে থাকে। এই বাড়িটি আমার পিতা ১৯৬৫ সালে নির্মাণ করেন।”
এই ঘটনার পরে কবির পুড়ে যাওয়া বাড়ির সামনে হাজার হাজার জনতা কবিকে সান্ত্বনা দিতে হাজির হয়। তখন কবি তাদেরকে একটি কবিতাংশ আবৃতি করে শোনান–
“কে টিউলিপের এই বাগানটি ধ্বংস করে ফেলেছে
কোন ঝড় আমাদের শহরে আঘাত করেছে?”
“এই ঘরটি আমার জন্য শুধু একটি বাড়ি ছিল,
এখন এই জায়গাটি আমার জন্য একটি মাজার”
তার স্ত্রী বলেন, “তার স্বামী তার জীবনে অনেক জটিল সময় পার করেছেন, এমনকি স্বাধীনতাকামীদের জানাজায় কবিতা কবিতা পাঠ করায় অনেকবার জেল খেটেছেন।”
ভাট জানান, “আমাকে ১৯৯৩ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত সাত বছর জানাজার সময়ে কবিতা পাঠের অভিযোগে গ্রেফতার রাখা হয়।”
এই কবির অধিকাংশ কাজ কাশ্মিরের ইতিহাস, লড়াই সংগ্রাম ও ধর্মকে কেন্দ্র করে। তিনি ১৯৮২ সালে কলেজের প্রথম বর্ষ শেষ করেই পড়ালেখা বাদ দিয়ে দেন। কবিতা লেখার পাশাপাশি তিনি জীবনধারণের জন্য কৃষিকাজকে বেছে নেন।
ভাট নিজ নামের পাশাপাশি ‘মাদহোশ বালহামি’ ছদ্ম নামে তিনি লিখে থাকেন। তিনি উর্দুসহ বেশ কয়েকটি কাশ্মিরী ভাষায় লিখতেন। তিনি বলেন, “আমি সব লেখা একত্রিত করি; সেখানে কমপক্ষে ৮০০ পৃষ্ঠা কবিতা ছিল যা আমি প্রকাশের পরিকল্পনা করছিলাম। ঘর হারানোর জন্যে আমি কষ্ট পাচ্ছি না, আমি আমার কবিতা হারিয়ে কষ্টে আছি।”
সব নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার পরেও ভাট বলেন, “আমি আমার লেখালেখি চালিয়ে যাবো, আমি আরও জোর দিয়ে কবিতা লেখায় মনযোগী হবো।”
