দার্শনিক প্লেটো মানুষকে সংজ্ঞায়িত করেন হোমো পলিটিকাস (Homo Polioticus) হিসেবে। এর অর্থ দাঁড়ায় মানুষ জন্মগতভাবেই রাজনৈতিক জীব। এটা সর্বজনবিদিত যে যারা ‘রাজনীতি করে’, তাদের চরম লক্ষ্য এবং প্রাপ্তি হলো ক্ষমতায় যাওয়া। এবং যাওয়ার পর ক্ষমতায় টিকে থাকা। কিন্ত এই ক্ষমতায় আসা যাওয়ার খেলার বাইরেও প্রত্যেকটা রাজনীতিবিদ একজন মানুষ। ইতিহাস শুধু মানুষের অর্জনকে দেখে। তাই ইতিহাস যখন আমাদের রাজনীতিবিদদের সম্পর্কে বলে তখন শুধুমাত্র তাদের অর্জনগুলোই বলে, তাই আমরা অনেক সময়ই ভুলে যাই রাজনীতির বাইরে এদেরও থাকে ভিন্ন ভিন্ন রকমের শখ ও পছন্দ। কিন্ত খুব কম সময়ই আমরা তাদের ব্যক্তি জীবন সম্পর্কে জানতে পারি যদি না আমরা রাজনীতিবিদদের মোটা মোটা আত্মজীবনী নিয়ে না বসি।
বিশ্ব দরবারে যে সকল রাজনীতিবিদ তাদের অর্জন নিয়ে সমাদৃত, আজকে আমরা এমন কতিপয় নেতৃবৃন্দের অর্জনের বাইরে গিয়ে তাদের ছোটখাটো শখগুলোর দিকে নজর দিব—
জুনিচিরো কোইযুমি
জুনিচিরো কোইযুমি তিনি ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল অবধি জাপানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাকে বলা হয় নব্য জাপানের নির্মাতা। তার এই পরিচয়ের বাইরেও আরেকটা বড় পরিচয় ছিল সে হচ্ছে এলভিস প্রিসলির পাঁড় ভক্ত, যাকে বলে ডাই-হার্ড ফ্যান। তার সংগ্রহে রয়েছে ‘রক এন রোল’ সম্রাটের সকল গানের সিডি। এছাড়াও যখনই সুযোগ পেতেন এলভিস প্রিসলির গানের কথা বলতেন। এছাড়া সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে দুই জনের জন্মদিনই একই তারিখে! কাকতালীয়ই বটে।
নিকোলাস সারকোজি
সম্প্রতি ফরাসি দেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজি দুর্নীতির মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন। ৬৩ বছর বয়সী এই রাজনীতিবিদ ২০০৭ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। রাজনীতির বাইরে তার আরেকটা পছন্দের কাজ ছিল স্ট্যাম্প সংগ্রহ করা। তার এই শখের কথা অবশ্য বিশ্ব দরবারে ভালোই জানাশোনা ছিল। এমনকি ইংল্যান্ডের রাণী ২য় এলিজাবেথ তাকে ইংল্যান্ডের পোস্ট অফিস থেকে এক সেট স্ট্যাম্প উপহার দেন। বলাই বাহুল্য স্ট্যাম্প পাগল সারকোজি খুব রোমাঞ্চিত হয়েছিলেন এই উপহার পেয়ে।
সাদ্দাম হুসাইন
সাদ্দাম হুসাইন আবদুল মাজিদ আল তিকরিতি, সংক্ষেপে সাদ্দাম হুসাইন ছিলেন ইরাকের পঞ্চম রাষ্ট্রপতি। ১৯৭৯ সাল থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত ২৪ বছর রাষ্ট্রপতি ছিলেন তিনি। তথাকথিত ‘স্বৈরাচার’ শাসকের অনেক নির্মম অথবা নিষ্ঠুর হিসেবে পশ্চিমা গণমাধ্যমে উপস্থাপিত হয়ে থাকলেও তার একটা শখের কথা অনেকেরই অজানা। তার ঝোঁক ছিল রোমান্সের প্রতি এবং তার রচিত কয়েকটা প্রেমের উপন্যাস রয়েছে। তার লেখা ‘জাবিবাহ এন্ড দ্য কিং’ উপন্যাস গ্রন্থে যেমন সুন্দরী একজন ইরাকী নারীর সাথে একজন রাজার প্রেমের গল্প। যদিও বইটা রূপক হিসেবে রচিত কারণ উপন্যাসে দেখা যায় ইরাকী মেয়েটার ওপর তার নিষ্ঠুর স্বামীর নির্যাতনের কাহিনী। বলা হয়, গল্পটা আদতে ইরাকের ওপর আমেরিকার নির্যাতনের গল্প উপস্থাপন করে। এমন না যে তার গল্পগুলো বিখ্যাত বা বহুবিক্রিত কিন্ত এই গল্পগুলো সাদ্দামের সৃজনশীল দিক তুলে ধরে যা সম্পর্কে অনেকেই অবগত নন।
কিম জং ইল
তিনি কোরিয়ার সমাজতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল ওয়ার্কার্স পার্টির মহাসচিব ছিলেন। দলটি ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দ থেকে অদ্যাবধি উত্তর কোরিয়ায় ক্ষমতাসীন রয়েছে। গণপ্রজাতন্ত্রী কোরিয়া বা উত্তর কোরিয়ার শাসক ও প্রধান ব্যক্তিত্ব ছিলেন কিম জং ইল ছিলেন বাস্কেটবলের বিরাট ভক্ত। কিম জং ইল বাস্কেটবল এতই পছন্দ করতেন যে তার ইচ্ছা ছিল উত্তর কোরিয়াকে বাস্কেটবলের স্বর্গ করে তোলার। যদিও তার স্বপ্ন পূরণ হয়নি কিন্ত তিনি মাইকেল জর্ডান বুলস এর সাথে খেলেছে এমন সকল বাস্কেটবল খেলার রেকর্ডিং দেখেছেন। শুধু তাই নয় তিনি মাইকেল জর্ডানকে আমন্ত্রণ করেছিলেন সাক্ষাৎ করতে।
জোসেফ স্ট্যালিন
জোসেফ স্ট্যালিন ১৯২২ থেকে ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। স্ট্যালিনের শখ ছিল ছবি আঁকা। কিন্ত কী আঁকতেন স্ট্যালিন? স্টালিনের শখ ছিল উলঙ্গ পুরুষদের ছবি আঁকা। অনেক সময় তিনি ছবির নিচে মন্তব্যও লিখে দিতেন নিজের মত করে। যদিও এটা নিয়ে বিতর্ক ছিল ছবিগুলো আসলে স্ট্যালিনের আঁকা কিনা; পরবর্তীতে বিশেষজ্ঞদের গবেষণায় সত্য বের হয়ে আসে এবং তারা জানায় আসলে স্ট্যালিনই এঁকেছিলেন ছবিগুলো এবং তারা এটাও বলেন এই ছবিগুলা স্বমকামিতার প্রকাশ ছিল না।
দ্বিতীয় আবদুল্লাহ
দ্বিতীয় আবদুল্লাহ বিন আল-হুসাইন বা আবদুল্লাহ আল-সানি বিন আল-হুসাইন জর্ডানের বর্তমান বাদশাহ। হাশিমি রাজপরিবার ১৯২১ সাল থেকে জর্ডান শাসন করে আসছে। অন্য অনেক সিনেমাভক্তের মত রাজপরিবারের এই সদস্যেরও রয়েছে রয়েছে ‘স্টার ট্রেক’ এর প্রতি দুর্বলতা। কিন্ত তার দৌড় শুধু পছন্দ পর্যন্তই ছিল না, তিনি তা বাস্তবে পরিণত করেছেন। স্টার ট্রেক সিরিজের একটা ছিল স্টার ট্রেকঃভয়াজার। এই সিনেমার একটা দৃশ্যে তিনি অংশগ্রহণ করেন। দৃশ্যটাতে তার কোনো সংলাপ না থাকলেও মুহুর্তটা অবশ্যই তার জন্যে উপভোগ্য ছিল।
ভ্লাদিমির পুতিন
রাশিয়ার চারবারে রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন নিঃসন্দেহে বিশ্বের তাবৎ নেতাদের মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষনীয় চরিত্র। তার শক্তিশালী রাজনৈতিক পরিচয়ের বাইরেও তিনি মজার মানুষ বলেই গণ্য। বার বছর বয়স থেকেই তার আগ্রহে পরিণত হয় মার্শাল আর্ট। কঠিন হৃদয় এই মানুষটার শুধু পারমাণবিক অস্ত্রে মন ভরে নাই। নিজেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে তিনি জুডোতে ব্ল্যাক বেল্টও অর্জন করেন চতুর্থ বারের মতো রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচিত হওয়া এই নেতা।
বারাক ওবামা
বারাক ওবামাকে অনেকেই মজার মানুষ বলে জানেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সব সময় মানুষের ভিড়ে থাকতে চেয়েছেন; হোক সেটা বাস্কেটবল কোর্টে অথবা স্কিট শুটিং ক্যাম্পে। কিন্ত তার আরেকটা শখের কথা প্রকাশ পায় তার প্রথমদিকের শাসন আমলে। তিনি কমিক বই এর ভীষণ ভক্ত। বিশেষ করে মার্ভেলের স্পাইডারম্যান এর ভক্ত তিনি। শুধু ভক্তই নন, তিনি কমিক বই সংগ্রহও করেন।