পঞ্চাশতম টেস্ট ম্যাচ, অাগস্ট ২৭ থেকে অাগস্ট ৩০, এ চারটে দিন তিনি মনে রাখবেন অামৃত্যু। এর অাগেও একবার এক ম্যাচে দশ উইকেট পেয়েছেন। ঢাকা টেস্ট শুরুর অাগে পাঁচ উইকেট প্রাপ্তির ভেলায় ভেসেছেন পনেরবার। ব্যাট উঁচিয়ে ফিফটির করতালির জবাব দিয়েছেন একুশবার। তবু, সে চারদিনে বহু প্রথমের সাক্ষী হলেন যে! অজিদের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্ট, প্রথম পাঁচ উইকেট, প্রথম দশ উইকেট, প্রথম জয়। প্রথমের ধারাবাহিকতায় দলকে টেনেছেন প্রথম থেকেই! ম্যাচ প্রেজেন্টেশনে সবাই ইংলিশেই কথা বলে। তিনিও পারতেন ইংরেজিতে বলতে। গ্যালারির সবকটা মানুষ যে বাঙালিয়ানার ধারক, সেখানে ইংরেজি খাটে কি? খাটে না বলেই বাংলায় বললেল। প্রেজেন্টশন সিরিমোনিতেও মানুষ চিৎকার করতে পারে? অজিরা হয়তো সেটিই ভেবেছিল। কিন্তু মাইক হাতে ব্যক্তিটা সাকিব, অজিরা এটা ভুলবে না নিশ্চয়ই।
বলছিলাম সাকিব আল হাসান ফয়সালের কথা। বলছিলাম অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের প্রথম জয়ের নেপথ্য নায়ক ভক্তদের ময়নার কথা। একজন সাকিব অাল হাসান। পরিণত, মার্জিত, বিনয়ী। খেলার মাঠের চরম ঔদ্ধত্য, সাহসী। তিনি বাঙালিকে স্বপ্ন দেখাতেই শেখাননি কেবল, বুনে দিয়েছেন স্বপ্ন বাস্তবায়নের উচ্চাশা। আমাদের ক্রিকেটের প্রথম হিরো কে? দেশকে প্রথম আইসিসি ট্রফি জেতাতে শেষ বলে ছক্কা হাঁকানো খালেদ মাসুদ পাইলট? নাকি প্রথম ম্যান অব দ্য ম্যাচ আতহার আলী খান? এরা কেউ নন! সম্ভবত আশরাফুল। তিনি পথ দেখিয়েছেন, সাকিব তা ধরে বহুদূর গেছেন। বহুদূর মানে সুদূর, তারচেয়ে দূর, আরো দূর। যেখানে শুধু সাকিবই গেছেন, তার পিছু পিছু টিম বাংলাদেশ অনেকটা পথ পাড়ি দিয়েছে।
একজন দলপতি কেমন হওয়া চাই? এই তো ক’দিন আগের নিদাহাস ট্রফির ফাইনালের সাকিবের মতন হয়তোবা। একেবারের ডরহীন। ডরালে কি আর সম্ভব হত ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটেই অলরাউন্ডারদের বস হবার! কতজন কতবার হয়, আসে যায়, সাকিব রয়ে যায়। ফারাকটা ওখানেই। এই যেমন বাংলাদেশের প্রতিনিধি হয়ে তিনি বনে গেছেন ক্রিকেটের ফেরিওয়ালা। সাকিব, টেস্টে বাংলাদেশের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ইনিংসের অধিকারী। সাকিবের রেকর্ড নিয়ে এগুতে গেলে কূল পাওয়া যাবে না। সে পথ না মাড়ানোই শ্রেয়।
বরঞ্চ সাকিব বন্দনা বিশ্বে যেমন চলে আমরাও তেমন চালাই। অবশ্য আম্পায়ারকে রক্তচক্ষু প্রদর্শন, স্ত্রীকে কটুক্তি করায় গ্যালারিতে দর্শক পেটাতে যাওয়া সাকিবের প্রতিবিম্বই আমাদের সামনে ভাসে। এসবই অলক্ষ্যে নির্ভরতা বাড়ায়। সাকিব এখন পরিণত। যার সুফল বাংলাদেশ পাচ্ছে, রোজ রোজ। পুরনো সাকিব চাঁদের কলঙ্ক নয়, নতুন সাকিব বরং কলঙ্ক পাশ কাটিয়ে চাঁদের সৌরভ। যে সৌরভ পৃথিবী প্রথম আলোকিত করেছে ৩১ বছর আগে মাগুরায়, ২৪শে মার্চ ১৯৮৭ সালে।
শুভ জন্মদিন মিরাকল অব মাগুরা।