টেসলা ও স্পেস এক্স-এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী এলন মাস্কও অবশেষে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট মুছে ফেলেছেন। একই সঙ্গে নিজের কোম্পানি দুটির অফিসিয়াল ফেসবুক পাতাও মুছে ফেলেন প্রযুক্তি খাতের ওই পরাশক্তিধর ব্যবসায়ী। ‘টেকক্রাঞ্চ’-এর খবরে বলা হয়, দুটি কোম্পানির ফেসবুক পাতায় ২৬ লাখেরও বেশি লাইক ও ফলোয়ার ছিল।
টুইটারে এক বার্তায় হোয়াটসঅ্যাপ-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ব্রায়ান অ্যাক্টর তার অনুসারীদের উদ্দেশে ‘এখনই সময়’ লিখে সবার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট মুছে ফেলার আহ্বন জানান। ব্রায়ান-এর টুইটের পর পরই এলন ব্যঙ্গ করে জানতে চান, ‘ফেসবুক আবার কী?’
ব্যবহারকারীদের তথ্যগত গোপনীয়তা রক্ষায় ব্যর্থতার অভিযোগে দুনিয়ার সবচেয়ে বড় সামাজিক মাধ্যম ফেসবুক বেশ বেকায়দায় রয়েছে- এমন খবরে উদ্যোক্তা মার্ক জাকারবার্গ-এর কপালের ভাঁজ আরো বাড়বেই বলা যায়। টুইটারে শুরু হওয়া ‘হ্যাশট্যাগ ডিলিট ফেসবুক’ আন্দোলনে সাড়া দিতে শুরু করেছে খোদ মার্কিন দুনিয়ার রাঘববোয়ালরা।
এর আগে ‘সেডারস প্রফাইল’ নামে এক টুইটার ব্যবহারকারী মাস্ক-কে প্ররোচিত করে টুইট করে বলেন, ‘তুমি যদি ব্যাটা হয়ে থাকো তাহলে স্পেস এক্সের ফেসবুক পাতা মুছে দেখাও।’ জবাবে মাস্ক বলেন, ‘আচ্ছা, ভাবিনি তো, করছি।’
It is time. #deletefacebook
— Brian Acton (@brianacton) March 20, 2018
I didn’t realize there was one. Will do.
— Elon Musk (@elonmusk) March 23, 2018
সামাজিক যোগাযোগের সর্বোচ্চ জনপ্রিয় মাধ্যম ফেসবুক তাদের ব্যবহারকারীদের না জানিয়েই ৫০ মিলিয়ন গ্রাহকের তথ্য বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে রাজনৈতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা-কে সরবরহ করেছে। লন্ডনভিত্তিক ব্রিটিশ রাজনৈতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা-র বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, প্রতিষ্ঠানটি ফেসবুকের কাছ থেকে তাদের গ্রাহকদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে তা যুক্তরাষ্ট্রে ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করতে ব্যবহার করেছিল।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে ওই খবরটি প্রকাশ হওয়ার পর পরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘হ্যাশট্যাগ ডিলিট ফেসবুক’ বা ‘হ্যাশট্যাগ বয়কট ফেসবুক’ প্রচারণা শুরু হয়েছে।
ওই বিষয়টি ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ নিজেদের ভুল স্বীকার করে নিয়েছেন। গ্রাহকদের তথ্য বেহাত হওয়ার ওই ঘটনাটিকে ‘গ্রাহকদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা’ করার শামিল বলে ফেসবুকে দেয়া বিৃবতিতে মন্তব্য করেছেন তিনি।
ফেসবুকের সিইও মার্ক জাকারবার্গ গ্রাহকদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘আপনার তথ্যের নিরাপত্তা দেয়া আমাদের দায়িত্ব। কিন্তু সেটি দিতে ব্যর্থ হলে আমাদের সেবা দেয়ার অধিকারও থাকবে না।’
জাকারবার্গ বলেন, ‘আমি ফেসবুক শুরু করেছি এবং দিন শেষে ওই প্ল্যাটফর্মে যাই ঘটুক না কেন, এর দায়ও আমার।’
যুক্তরাষ্ট্রে ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ২০১৫ ও ২০১৪ সালে ওকমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের রুশ-আমেরিকান মনোবিজ্ঞানী আলেকজান্ডার কোগান ফেসবুকের তৈরি করা ‘দিস ইজ মাই ডিজিটাল লাইফ’ নামে একটি অ্যাপ্লিকেশন দিয়ে ফেসবুক তার ব্যবহারকারীদের ওপর একটি জরিপ চালায়। এটি ছিল মূলত একটি কুইজভিত্তিক অ্যাপ। ফেসবুক ওই কুইজে অংশগ্রহণকারীদের ব্যক্তিত্বের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করে এবং শেষ পর্যন্ত এর সবই গবেষণা প্রতিষ্ঠান কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার কাছে দিয়ে দেয়। ওই সময় প্রায় ৩ লাখ ২০ হাজার ফেসবুক ব্যবহারকারী ওই কুইজে অংশ নেন। ফলে তারা ও তাদের বন্ধু মিলিয়ে প্রায় ৫০ মিলিয়ন বা ৫ কোটি ফেসবুক ব্যবহারকারীর তথ্য কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার হাতে চলে আসে। এছাড়া ওই তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই ভোটারের ব্যক্তিত্ব বুঝে তাদের জন্য বিজ্ঞাপন তৈরি করে তাদের কাছে পাঠানো হয়। যুক্তরাজ্যের চ্যানেল ফোর-এর একদল ছদ্মবেশী সাংবাদিকের কাছে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী আলেকজান্ডার নিক্সই ওইসব তথ্য ফাঁস করেন।
এদিকে ওই ঘটনার পর পরই কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার প্রধান নির্বাহী আলেকজান্ডার নিক্স বরখাস্ত হন। এছাড়া ফেসবুকের প্রধান মার্ক জাকারবার্গের পাশাপাশি ফেসবুকের চিফ অপারেটিং অফিসার শেরিল স্যান্ডবার্গসহ ফেসবুকের অনেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ওই ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
ওই কেলেঙ্কারি ফাঁস হওয়ার পর ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে যাচ্ছে ফেসবুক। শেয়ারবাজারেও ফেসবুকের দরপতন শুরু হয়েছে। ওই কেলেঙ্কারির জেরে চলতি সপ্তাহে শেয়ারবাজারে ৫০ বিলিয়ন ডলার খুইয়েছে ফেসবুক। একই সঙ্গে আইনি জটিলতার মধ্যেও পড়তে পারে যোগাযোগ মাধ্যমটি। নিউ ইয়র্ক ও ম্যাসাচুসেটস-এর অ্যাটর্নি জেনারেলরা ফেসবুকের বিরুদ্ধে তদন্তও শুরু করেছেন।