নারীদের পর্দা ফ্রান্সে নিষিদ্ধ, সৌদি আরবে বাধ্যতামূলক আবার ইন্দোনেশিয়ার একটি ফ্যাশন হিসাবে বিবেচিত। মুসলিম মহিলাদের জন্য বিভিন্ন আকার, ধরণ ও রংয়ের পর্দা রয়েছে- এবং বিভিন্ন পরিস্থিতিতে, বিভিন্ন জায়গার এর পরিভাষা আলাদা হতে পারে।
পবিত্র কোরআনে সরাসরি ‘হিজাব’-এর কথা বলা হয়নি যা সরাসরি পোশাকের নিবন্ধে উল্লেখ করা যায়। কিন্তু পর্দা বা ‘আলাদা থাকা’র বিষয়টি আলোচনা করা হয়েছে যা নারীদের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করে। এখানে দেখানো হচ্ছে, সমগ্র মুসলিম বিশ্বে এটা কীভাবে পরা হয়।
আবায়া
আবায়া হচ্ছে নারীদের পুরো শরীর আবৃত করে রাখার পোশাক বিশেষ যা সৌদি আরব, আরব উপদ্বীপ ও আফ্রিকার উত্তর অঞ্চলে পরতে দেখা যায়। সাধারণত এটা কালো রঙের হয়ে থাকে। এই পোশাক তৈরি হয় আলগা গড়ন, ঢিলেঢালা হাতা ও পুরো শরীর ঢেকে রাখার মাধ্যম হিসেবে। তবে চেহারা, দু’হাত ও পাদ্বয় আবৃত রাখতে হয় না।
বোরখা
তালেবান স্বীকৃত পোশাক যা প্রধানত আফগানিস্তানে পরা হয়। এটি পুরো চেহারা ঢেকে রাখে, চোখের ওপর জালের মতো বোনা একটি কাপড় আবৃত থাকে। ১৯৮৮ সালে ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’ প্রথমবার যখন বোরখার কথা তুলে ধরে তখন এটিকে ‘তাঁবু-সদৃশ’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়। কাবুলের অধিকাংশ বোরখা নীল রঙের হয়ে থাকে। কিন্তু আফগানিস্তানের অন্যান্য অঞ্চল এবং পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশে বাদামি, সবুজ বা সাদা রঙের বোরখা পরতে দেখা যায়।
চাদর
চলতি শতাব্দীতে ইরানের নারীরা মাথার ওপর অর্ধবৃত্ত আকারের কাপড় পরে যা অনেকটা শালের মতো। চাদরে শরীর দৃঢ়ভাবে আবদ্ধ করে রাখতে হয় না। এটি দিয়ে ঘাড় থেকে হাত পর্যন্ত ঢেকে রাখতে হয়। অধিকাংশের পছন্দের রঙ কালো। তবে অনেক সময় নারীরা বাসা বা মসজিদে রঙিন চাদর পরে থাকেন।
হিজাব
পশ্চিমি বিশ্বে ইসলামি পর্দা প্রথা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হওয়ার পর থেকে মুসলিম নারীদের পর্দা বলতে হিজাব নামটিকেই ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কিন্তু এটি প্রধানত মাথার স্কার্ফকে বোঝায়। এর ধরন শুধু স্থানের বিভিন্নতার কারণে পরিবর্তিত হয় না, বরং ফ্যাশনের চলমান প্রবণতার কারণেও যেতে পারে।
জিলবাব
এটি কোরআনেও উল্লেখ করা হয়েছে, ওই পরিভাষা দ্বারা সাধারণত নিরাপত্তামূলক পোশাককে বোঝায়, নির্দিষ্ট কোনো পোশাককে নয়। ইন্দোনেশিয়ায় জিলবাব দ্বারা বোঝায় মাথা থেকে পা পর্যন্ত এক ধরনের বিনয়ী পোশাক, বিশেষত মাথার স্কার্ফ। কিন্তু উত্তর আফ্রিকা ও আরব উপদ্বীপে এটি দিয়ে সাধারণত লম্বা পোশাক বা ঝুলে থাকা বিশেষ পোশাককে বোঝায়।
খিমার
এটি হিজাব ও জিলবাব-এর মতোই তৃতীয় আরেকটি পোশাক। এটি কোরআনে উল্লেখিত আছে। সম্মিলিতভাবে এটি ধর্মীয় পর্দার পরিপূর্ণতা প্রদান করে। ঐতিহাসিকভাবে খিমার দ্বারা নারীদের বিনয়ী, জননেন্দ্রিয় ও বুক আবৃত করে রাখা পোশাক বিশেষকে বোঝায়। তা তাদের গায়রে মুহরিম পুরুষ থেকে আড়ালে রাখে। কিছু দেশে এটি দিয়ে পর্দা বা মাথার স্কার্ফ কিংবা হিজাব-সদৃশ যে কোনো পোশাককেই বোঝায়।
নিকাব
নিকাব; Illustration Source: Antonio de Luca/New York Timesএটি পর্দার এমন ধরন যেখানে নারীদের চোখ ছাড়া পুরো চেহারা আবৃত থাকে। সৌদি আরবে এমনটি বাধ্যতামূলক না হলেও এটি সচরাচর সৌদি নারীরা মানুষের সামনে আসতে হলে পরে থাকেন। পৃথিবীর অনেক জায়গা, বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়া ও উত্তর আফ্রিকার প্রায় সব নারী অর্ধনিকাব পরেন। একটি চারকোণা কাপড় অথবা চোখের নিচে একটি পট্টি বেঁধে এটি পরা হয়।
নিউ ইয়র্ক টাইমস অবলম্বনে