মশা প্রাণীটা যত ছোটই হোক, বড় বড় মানুষকেও ভয় পাইয়ে দেয়। জিকা, ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু- এমন অনেক ভয়াবহ রোগ আছে যা ছড়ানোর দায়িত্বটা মশাই নিয়ে থাকে। ওইসব রোগ ছাড়াও রয়েছে বিরক্তিকর হামিংয়ের শব্দ ও কামড়। কত মানুষের নির্ঘুমতার কারণ যে এই মশা এর ইয়ত্তা নেই!
মশা আপনাকে বেশি কামড়ায়? তাহলে ফ্লোরিডা বিউশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল এনটোমলজির প্রফেসর জনাথন ডে-র মতে, আপনি হয়তো ওই দুর্ভাগা ২০ শতাংশ মানুষে মধ্যে একজন যারা মশাকে বেশি আকর্ষণ করে থাকে।
পোশাক পরিচ্ছেদ
মশা তার লক্ষ্যবস্তুতে আক্রমণ করতে চোখ ও ইন্দ্রিয়ের ব্যবহার করে। জনাথন ডে-র মতে, মশা দৃষ্টি শক্তির ওপর নির্ভর করে আক্রমণ করে, বিশেষ করে বিকালের পর তার দৃষ্টিশক্তির মাধ্যমে আক্রমণ করে। সাধারণত কালো, নেভি ও লাল রঙ পরলে আপনি সহজেই পরিণত হতে পারেন মশার লক্ষবস্তুতে।
রক্তের গ্রুপ
মশার মূল লক্ষই থাকে আপনার রক্ত। পুরুষ মশা যদিও নেকটারের ওপর নির্ভরশীল তবুও স্ত্রী মশা এমন নয়। এগুলো বেঁচে থাকে মানুষের রক্তের প্রোটিনের ওপর। ওই প্রোটিন প্রজননে ভূমিকা রাখে। তো মনে হতেই পারে, তাহলে মশার প্রিয় রক্তের গ্রুপ কোনটি? গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের রক্তের গ্রুপ ‘ও’ তাদের ওপর মশার হামলা বেশি হয় ‘এ’র তুলনায়। ‘বি’ রয়েছে মাঝামাঝি অবস্থানে।
কার্বন ডাই-অক্সাইডের উপস্থিতি
মশা কার্বন ডাই-অক্সাইডের উপস্থিতি টের পায় ১৬০ ফিট দূর থেকেই। তাই যারা বেশি নিঃশ্বাস ছাড়ে তাদের প্রতি মশার আকর্ষণ বেশি যেহেতু তারা বেশি কার্বন নিঃসরণ করে। অন্যদিকে যেহেতু মানুষ মুখ ও নাক দিয়ে নিঃশ্বাস ছাড়ে সেহেতু মশা আমাদের মুখমণ্ডলেই বেশি আক্রমণ করে। হ্যাঁ, এখন আমরা বুঝতে পারলাম কেন মশা সারা রাত ধরে মুখের সামনে এসেই ঘ্যান ঘ্যান করে।
তাপ ও ঘাম
কার্বন ডাই-অক্সাইডের উপস্থিতি টের পাওয়া ছাড়াও মশার আরেকটি শক্তিশালী ইন্দ্রিয় হচ্ছে নাক। মশা মানুষের শরীর থেকে নির্গত ল্যাকটিক এসিড, ইউরিক এসিড, অ্যামোনিয়া ইত্যাদির গন্ধ নির্ণয় করতে পারে। এছাড়া মশা ঘর্মাক্ত শরীর পছন্দ করে। যেহেতু কর্মঠ একটি শরীর বেশি ঘামে সেহেতু তারা মশার সহজ লক্ষ্যে পরিণত হয়।
চামড়ার বৈশিষ্ট্য
কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, চামড়ায় ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি ও ব্যাকটেরিয়ার ধরন ডেকে আনতে পারে মশা। আমাদের ত্বকের ওপরিভাগে অনেক আণুবিক জীবের অস্তিত্ব রয়েছে। এগুলআ এক ধরনের গন্ধ নিঃসৃত করে। একটা গবেষণায় দুই ধরনের অনুমান তুলে ধরা হয়। তা হলো এক ধরনের মানুষকে মশা বেশি আকর্ষণ করে এবং আরেক ধরনের মানুষকে কম আকর্ষণ করে। যাদের মশা বেশি আকর্ষণ করে ওই দলের মানুষের ত্বকে বিশেষ এক জীবাণুর অস্তিত্ব ছিল যা কম আকর্ষিতদের মধ্যে কম দেখা যায়। ব্যাকটেরিয়ার কারণে মশা পা ও পায়ের গোড়ালিতে বেশি আকর্ষণ করে। কারণ ওই অংশ হচ্ছে ব্যাকটেরিয়ার উল্লেখযোগ্য উৎস।
গর্ভাবস্থা
গর্ভবতীরা হয়তো মশা সবচেয়ে বেশি ভয় পান। কিন্তু দুঃখজনকভাবে গর্ভাবস্থাতেই নারীরা বেশি করে মশার আক্রমণের শিকার হন। আফ্রিকায় এক গবেষণায় দেখা গেছে, গর্ভাবতীরা সাধারণ নারীদের চেয়ে দ্বিগুণ বেশি আকর্ষিত হন ম্যালেরিয়া মশার দ্বারা। গবেষকদের বিশ্বাস, এর পেছনে দায়ী নিঃশ্বাস ছাড়ার সময় কার্বন ডাই-অক্সাইডের আধিক্য। কারণ গর্ভবতীরা ২১ শতাংশ বেশি নিঃশ্বাস ছাড়ে। এছাড়া দেখা গেছে, গর্ভবতীদের উদর সাধারণ নারীদের তুলনায় ১ দশমিক ২৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট বেশি উষ্ণ থাকে। আমরা আগেই বলেছি, মশা উষ্ণ শরীর পছন্দ করে।
বিয়ার
কে জানতো মশা যে বিয়ার পছন্দ করে! একটা গবেষণায় দেখা গেছে, ১২ আউন্স বিয়ার পান করার আগে ও পরে মশা শরীরে বসার পার্থক্য দেখা যায়। বিজ্ঞানীদের মতে এর কারণ হচ্ছে, বিয়ার পানকারীদের শরীরে ঘামে এথানোলের পরিমাণ বেড়ে যায়। এছাড়া বিয়ার পানের ফলে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। যদিও বিয়ার পানের সঙ্গে মশার আকর্ষণের পেছনে আসল সম্পর্ক গবেষকরা এখনো জানতে পারেননি তবুও আপাত গবেষণায় শরীর গরমের ওই কারণটির কথাই বলা হয়।