হলিউডের একটি অলিখিত নিয়ম আছে, ‘কৃষ্ণাঙ্গদের অভিনীত ছবি ব্যবসা করতে ব্যর্থ হয়!’ সম্ভবত ওই ধারণা ভেঙে দিয়ে উল্টো প্রতিবাদের ভাষায় হাজির হচ্ছে ‘ব্ল্যাক প্যান্থার’-এর সাফল্য। হলিউড জগতে ঝড় তোলা ব্ল্যাক প্যান্থার ব্যবসায় সাফল্য পাওয়ার পাশাপাশি একটি অনন্য ইতিহাসও সৃষ্টি করেছে। তা হচ্ছে, এটাই প্রথম কোনো সুপারহিরো সিনেমা যেখানে মুখ্য চরিত্রের সবাই কৃষ্ণাঙ্গ। ব্ল্যাক প্যান্থারের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন চ্যাডউইক বোসম্যান। অন্য গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রগুলোয় আছেন মাইকেল বি. জর্ডান, ডানাই গুরিরা ও কেনিয়ার অভিনেত্রী লুপিতা নইউংগ ’ও। একই সঙ্গে এ সিনেমার পরিচালক ও লেখক রায়ান কুগলারও কৃষ্ণাঙ্গ।
গত রবিবার পর্যন্ত ছবিটি ১ দশমিক শূন্য ৭৯ বিলিয়ন ডলার আয়ের রেকর্ড গড়েছে— এমন পরিসংখ্যান দেখা যাচ্ছে IMDb-এর ওয়েবসাইটে। এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ছবিটি সর্বকালের সেরা ছবির আয়ের তালিকায় বর্তমানে নবম স্থান অর্জন করেছে। এছাড়া প্রেসিডেন্ট ডের ছুটির সপ্তাহে পুরো যুক্তরাষ্ট্রের বাজার থেকে ছবিটি ২৪২ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে।
এ প্রসঙ্গে নিউইয়র্ক টাইমসকে জ্যেষ্ঠ মিডিয়া বিশ্লেষক জেফ বক বলেন, ‘বিষয়টিকে দেয়াল ভাঙার মতো মনে হয় আমার কাছে।’ তিনি বলেন, ব্ল্যাক প্যান্থার এখন এমন এক তকমা পেল যার ফলে ভবিষ্যতে আর কেউ বলতে পারবেন না, ওহো! কালোদের ছবি ব্যবসা করে না। বিশ্বব্যাপী এর লাভও হবে সীমিত।
মাসখানেক আগে সিনেমাটির প্রিমিয়ারে সব শিল্পী, পরিচালক ও প্রযোজক এক আড্ডায় বসেছিলেন। সিনেমায় আফ্রিকান ডায়াস্পোরা-কে উপস্থাপন করার চ্যালেঞ্জ নিয়ে তারা আলোচনা করেছিলেন। কৃষ্ণাঙ্গ তারকাদের কথাতেই বোঝা গেছে, তারা এভাবে কোনো আলোচিত সিনেমায় তাদের আফ্রিকান পরিচয়কে উপস্থাপন করতে আগ্রহী ছিলেন, অপেক্ষায় ছিলেন। ডানাই গুরিরা বলেন, এতদিন আমরা সিনেমায় প্রচুর জার্মান ও রুশ ভাষার সাবটাইটেল পড়েছি। এবার আফ্রিকান ভাষায় সাবটাইটেল দেখা যাবে। বোসম্যান বলেন, এতদিন কালোদের নিয়ে যেসব সিনেমায় কাজ করেছেন সেগুলো মূলত অতীতের ইতিহাস নিয়ে। তিনি মনে করেন, ব্ল্যাক প্যান্থার সামনের দিনে কৃষ্ণাঙ্গ শিল্পীদের নিয়ে সিনেমার জন্য মঞ্চ প্রস্তুত করে দিয়েছে। ডানাই গুরিরা অনেক দিন ধরেই বড় পরিসরে আফ্রিকান বংশোদ্ভূতদের গল্প তুলে ধরতে আগ্রহী ছিলেন। এ জন্য তিনি এক সময় নাটকও লিখেছেন। তবে তার কথায়- সেগুলো কোনোটাই এবারের মার্ভেল সিনেমার মতো হয়নি। তিনি জানান, সিনেমা নিয়ে যেদিন রায়ান কুগলার তার সঙ্গে কথা বলেন সেদিন শিশুদের মতো উচ্ছ্বসিত হয়েছিলেন।
লুপিতা নইউংগ ’ও বলেন, ‘সিনেমায় প্যান-আফ্রিকানিজমের উদযাপনে আমি দারুণ আনন্দিত। ব্ল্যাক প্যান্থার-এ সমসাময়িক আফ্রিকার কথা এসেছে। সিনেমায় এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠেছে যেগুলো নিয়ে আমরা চিন্তা করি সেগুলো এতদিন ভাষা পায়নি।’ সব মিলিয়ে ব্ল্যাক প্যান্থার যেন কৃষ্ণাঙ্গ শিল্পীদের পরিচয় তুলে ধরার এক বিরাট মঞ্চ উন্মুক্ত করেছে।
মিশেল ওবামা এক টুইটে লিখেছেন, ‘পুরো ব্ল্যাক প্যান্থার দলকে অভিনন্দন! আপনাদের জন্য তরুণরা জানতে পারবে পর্দায় সত্যিকারের সুপারহিরো দেখতে তাদের মতোই হয়। ওই ছবিটি আমার খুব ভালো লেগেছে। আর আমি জানি, এটা সব মানুষের গভীরে যেতে ও নায়ক হতে সাহস খোঁজার স্পৃহা জোগাবে।’ ‘ওয়ান্ডার উইমেন’-এর পরিচালক প্যাটি জেনকিনস ‘ব্ল্যাক প্যান্থার’কে বলছেন, ‘আশ্চর্যজনক অর্থবহ সফলতা।’ তিনিও অভিনন্দন জানান ব্ল্যাক প্যান্থারের পরিচালক রায়ান কুগলার ও তার দলকে।
সামগ্রিকভাবে বলা যায়, ওই সিনেমাটি হলিউড জগতের বর্ণবাদিতার বিরুদ্ধে দর্শক ও সংশ্লিষ্ট সবার একটি জোরালো প্রতিবাদের ইতিহাস হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।
২০ কোটি ডলার বাজেটে নির্মিত ব্ল্যাক প্যান্থার পরিচালনা করেছেন রায়ান কুগলার। এতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন চ্যাডউইক বোসম্যান। তার চরিত্রের নাম কিং টি’শালা। প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত ওয়াকান্ডা রাজ্যের রাজা সে। বাবার মৃত্যুর পর নিজেদের রাজ্যটিকে এগিয়ে নেয়ার মনস্থির করে টি’শালা। কিন্তু তার সামনে বাধা হয়ে দাঁড়ায় এরিক কিলমংগার। টি’শালার বাবার ভুলের কারণে শৈশবে নিজের বাবাকে হারায় সে। এগিয়ে চলে গল্প।
সূত্র : বিবিসি, আইএমডিবি, হাফিংটন পোস্ট ও নিউইয়র্ক টাইমস