অস্ট্রেলিয়ার স্বনামধন্য আইনজীবীরা মানবতাবিরোধী অপরাধে যুক্ত থাকার অভিযোগে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চির বিরুদ্ধে অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে মামলা করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছেন। অস্ট্রেলিয়ার প্রচলিত আইন অনুযায়ী বিদেশি কোনো নাগরিকের বিরুদ্ধে মামলা করতে হলে অবশ্যই অ্যার্টনি জেনারেলের অনুমতি নিতে হয়ে। খবর দি গার্ডিয়ান।
গতকাল শুক্রবার মেলবোর্ন-এর ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি প্রাইভেট প্রসিকিউশন আবেদন করেছেন দেশটির অস্ট্রেলিয়ার কয়েক আইনজীবী। সু চির অস্ট্রেলিয়া সফর সামনে রেখেই ওই আবেদন করা হয়। আবেদনে বলা হয়, সু চির ব্যর্থতার সুযোগেই মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর নিরাপত্তা বাহিনীর কর্তৃক পদ্ধতিগত (সিস্টেমেটিক) নিপীড়ন করা হয়েছে বা মূলত সু চির ইন্ধনেই সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের জোর করে তাদের ঘরবাড়ি থেকে বিতাড়িত করেছে।
গত বছরের আগস্ট থেকেই মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও উগ্র বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর হামলার মুখে ছয় লক্ষাধিক রোহিঙ্গা নিজ ভূমি ছেড়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। ওই জাতিগত নিপীড়নের ঘটনার পর উপযুক্ত ব্যবস্থা না নিয়ে বরং সেনাবাহিনীর পক্ষ অবলম্বনের অভিযোগে দেশ-বিদেশে প্রবল সমলোচনার মুখে পড়েছেন অং সান সু চি। এর আগে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি এবং দেশটির সেনাপ্রধানসহ অন্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতা বিরোধী অপরাধের অভিযোগে একটি আন্তর্জাতিক গণআদালতে বিচার হয়েছে। মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালা লামপুরের মালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদে পারমানেন্ট পিপলস ট্রাইব্যুনাল (পিপিটি) নামে ওই আদালতে অনুষ্ঠিত শুনানিতে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিশেষজ্ঞ একটি প্যানেল অংশ নিয়েছিল। অবশ্য ওই আদলতের রায় বাস্তবায়নের কোনো আইনি বাধ্যবাধকতা ছিল না।
এদিকে শুক্রবার সাবেক ফেডারেল কোর্ট জজ ব্যারিস্টার রন মর্কেল কিউসি, আন্তর্জাতিক আইনজীবী ম্যারিওন ইসাবেল, সিডনির মানবাধিকার কর্মী ও আইনজীবী অ্যাালিসন বেট্টিসনসহ বেশ কয়েক খ্যাতিমান আইনজীবী মেলবোর্ন ম্যাজিট্রেট কোর্টে অং সান সু চির বিরুদ্ধে প্রাইভেট প্রসিকিউশনের আবেদন চাওয়ার প্রসঙ্গে বলেন, ‘এটা পরিষ্কার, সু চি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীদের রক্ষায় তার ক্ষমতা ব্যবহারে ব্যর্থ হয়েছেন। তা আসলে দেশটির সেনাবাহিনীকে রোহিঙ্গাদের ঘরছাড়তে বাধ্য করা সুযোগই করে দিয়েছে।’
অবশ্য সু চির বিচার দাবির প্রক্রিয়ায় অগ্রসর হতে হলে অবশ্যই অস্ট্রেলিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল ক্রিশ্চিয়ান পর্টার-এর সম্মতি প্রয়োজন হবে।
অন্যদিতে ‘দি গার্ডিয়ন’-এর বরাতে বার্তা সংস্থা হাফপোস্ট জানিয়েছে, ওই আবেদনে ক্রিশ্চিয়ান পর্টার সম্মতি না দেয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
উল্লেখ্য, চলতি সপ্তাহে আসিয়ানের বিশেষ সম্মেলনে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে যাওয়ার কথা রয়েছে সু চির। অস্ট্রেলিয়া সরকারই তাকে ওই সম্মেলনে আমন্ত্রণের অনুরোধ জানিয়েছে। এমন পরিস্থিতে সু চি-কে দেশটির সরকার কোনো ঝামেলার মুখোমুখি করতে চাইবে না বলেই ধারণা করা হচ্ছে।