ভাল ফলন আসছে জিরো বাজেট ন্যাচারাল ফার্মিংয়ে

ভাল ফলন আসছে জিরো বাজেট ন্যাচারাল ফার্মিংয়ে

ভারতের হিমাচল প্রদেশের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে জিরো বাজেট ন্যাচারাল ফার্মিং (জেডবিএনএফ) নামে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক বিহীন চাষ পদ্ধতিতে সফলতার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে খবরে জানিয়েছে দ্যা স্টেটসম্যান। হিমাচল প্রদেশের ননী গ্রামে অবস্থিত ড. ওয়াইএস পার্মার ইউনিভার্সিটি অফ হর্টিকালচার এন্ড ফরেস্ট্রি (ইউএইচএফ) ক্যাম্পাসে উক্ত পদ্ধতিতে মটরশুটির চাষ করা হয়। এবং এতে বেশ ভাল ফলন পাওয়া গিয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষিবিজ্ঞানীরা।

ইউএইচটি’র এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, “প্রথম বারে প্রতি একরে সাড়ে বারো মণ করে মটরদানা উঠানো হয়েছে। আরো তিন বার মটরদানা ওঠানো যেতে পারে। এমন ফলাফলে আমরা আশাবাদী।”

তিনি জানান, গবেষকদল ১৫ দিনের ব্যবধানে দুই জাতের মটরশুটি বুনেছিল। বীজগুলোকে ‘বিজামৃত’ নামক বিশেষ পদ্ধতিতে সংরক্ষণের পর ক্ষেতে বোনা হয়। ১৫ দিন পর ফসলে ‘জীবামৃত’ প্রয়োগ করা হয়।

তিনি আরো জানান, উৎপাদিত ফসল স্থানীয়দের মাঝে বিক্রি করা হবে এবং তাদের থেকে এ ব্যাপারে মতামত নেয়া হবে।

রাজ্যের গভর্ণর ও বিশ্ববিদ্যালয়টির আচার্য্য দেব ব্রত-এর উদ্যোগে জেবিএনএফ পদ্ধতিটি পরীক্ষামূলক চাষের উদ্যোগ নেয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়টি গবেষণার অংশ হিসেবে মটরশুটি ছাড়াও ফুলকপি, পেয়াজ ও মেথি চাষ করছে।

সমগ্র ভারতে লাখ লাখ কৃষক কৃষিবিদ সুভাস পালেকার এর উদ্ভাবিত এই পদ্ধতি অবলম্বন করে চাষবাস করছেন বলে জানা যায়। বাংলাদেশেও এই চাষ পদ্ধতির ব্যবহার করা হচ্ছে।

ঢাকার কেরাণীগঞ্জের কলাতিয়ার কৃষি উদ্যোক্তা রেহমাত শহিদুল ইসলাম ভারতে গিয়ে সরাসরি সুভাস পালেকারের নিকট হতে প্রশিক্ষণ নিয়ে এসে চাষবাস শুরু করেছেন। শহিদুল ইসলাম জানান, প্রশিক্ষণ নিয়ে এসে তিনি এ পর্যন্ত ধান, গম ও নানা রকমের সবজি চাষ করেছেন।

তিনি বলেন, সবাই মনে করেন প্রাকৃতিক উপায়ে চাষ করলে ফলন কম হয়, ফলে লোকসানের মুখে পড়তে হয়। কিন্তু জেডবিএনএফ প্রেমাণ করেছে, ব্যাপারটি সত্য নয়।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা’র (এফএও) ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্যমতে, ভারতীয় অর্থনীতির উদারনীতিকরণের ফলে সেদেশের ক্ষুদ্র কৃষকদের মধ্যে বিশাল সংকটময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বীজ, সার থেকে শুরু করে পুরো বাজার ব্যবস্থায় কৃষকদের প্রবেশাধিকার অত্যন্ত সীমিত হয়ে গিয়েছে। ভারতীয় কৃষকরা চাষাবাদে লোকসান, ঋণের উচ্চহারে সুদ, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি  ও ফসলের বাজারমুল্যের অস্থিতিশীলতায় কঠিন বিপদজনক সময় পার করছেন। এমন পরিস্থিতিতে ‘জিরো বাজেট’ চাষ পদ্ধতি কৃষকদের উৎপাদন খরচ মেটাতে ঋণের জালে আবদ্ধ হওয়া থেকে মুক্তির উপায় বাতলে দিয়েছে।

সুভাস পালেকার জেডবিএনএফ পদ্ধতি প্রচলনের স্বীকৃতিস্বরুপ ২০১৬ সালে ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ পুরস্কার পদ্রশ্রী’তে ভূষিত হন। নাগপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃষিবিজ্ঞানে বিএসসি পাশ করা এই কৃষিবিদ কৃষিসহ সমাজের নানাবিধ বিষয় নিয়ে লেখালেখিও করেন। এ বছরের জানুয়ারিতে চেন্নাইয়ে প্রাকৃতিক কৃষিপদ্ধতি নিয়ে একদল যুবককে প্রশিক্ষণ দেন। সেখানে উপস্থিত টাইমস অফ ইন্ডিয়ার সাংবাদিককে তিনি বলেন, আধা একর জায়গা হলেই যে কেউ প্রাকৃতিক উপায়ে চাষবাস শুরু করতে পারেন।