টিলারসনের বরখাস্ত হওয়া নিয়ে পাঁচ ব্যাখ্যা

ড্যানিয়েল ড্রেজনারের বিশ্লেষণ

টিলারসনের বরখাস্ত হওয়া নিয়ে পাঁচ ব্যাখ্যা

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন-কে বরখাস্ত করেছেন এবং ওই পদে অভিষিক্ত হয়েছেন ‌সিআইএ-র পরিচালক মাইক পম্পিও। দীর্ঘদিন ধরেই ট্রাম্পের সঙ্গে টিলারসন-এর সম্পর্ক খারাপ যাচ্ছিল। টুইটারে এক বার্তায় ট্রাম্প ঢিলেঢালাভাবে টিলারসনের কাজের প্রশংসা করেছেন এবং একই সঙ্গে নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী পম্পিও-কে নিয়ে নিজের আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। উল্লেখ্য, উত্তর কোরিয়া ও ইরান বিষয়ে ট্রাম্পের বিদেশনীতির বিরোধিতা করে আসছিলেন টিলারসন। অন্যদিকে সিআইএর নতুন পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন জিনা হাসপেল। সিআইএর ইতিহাসে হাসপেল প্রথম নারী পরিচালক।

টিলারসন বরখাস্ত হওয়ার পেছনে যে কারণগুলো থাকতে পারে এর একটি বিশ্লেষণ এখানে দেয়া হলো–

এক. ট্রাম্প প্রশাসনের বাজে পলিসির সঙ্গে রেক্স টিলারসন একমত হননি

ট্রাম্পের বাজে সিদ্ধান্তগুলোর ক্ষেত্রে টিলারসন ছিলেন একটি বড় বাধার নাম। প্যারিস-এর ক্লাইমেট চুক্তি থেকে নিজেদের সরিয়ে নেয়া, ইরানের নিউক্লিয়ার চুক্তি কিংবা উত্তর কোরিয়া বিষয়ে ট্রাম্পের কঠোর অবস্থান- এসব বিষয়ে বিরক্ত ছিলেন টিলারসন। বিভিন্ন সময় তার শারীরিক ভাষায় বিরক্তি ফুটে উঠতাে। টিলারসনও বুঝতে পেরেছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদে ট্রাম্প পরিবর্তন আনতে পারেন। এছাড়া উত্তর কোরিয়া বিষয়ে ট্রাম্পের অবস্থানের কারণে ট্রাম্পকে ‘গর্দভ’ বলার অভিযোগ ওঠে টিলারসনের বিরুদ্ধে।

https://twitter.com/realDonaldTrump/status/973540316656623616?ref_src=twsrc%5Etfw&ref_url=http%3A%2F%2Fbackup.jobanmagazine.com%2Farticle%2F2018%2F03%2F14%2F%25e0%25a6%259f%25e0%25a6%25bf%25e0%25a6%25b2%25e0%25a6%25be%25e0%25a6%25b0%25e0%25a6%25b8%25e0%25a6%25a8%25e0%25a7%2587%25e0%25a6%25b0-%25e0%25a6%25ac%25e0%25a6%25b0%25e0%25a6%2596%25e0%25a6%25be%25e0%25a6%25b8%25e0%25a7%258d%25e0%25a6%25a4-%25e0%25a6%25b9%25e0%25a6%2593%25e0%25a7%259f%25e0%25a6%25be-%25e0%25a6%25a8%2F

 

দুই. দরকারি একটি চাল

বর্তমানে ডিপ্লোম্যাটদের গ্রহণযোগ্যতা ধরে রাখতে হয়। রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে প্রকাশ্য বিরোধিতা পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে এক ধরনের ঝামেলা তৈরি করে। ট্রাম্পের সঙ্গে টিলারসনের ওই প্রকাশ্য বিরোধ আমেরিকার বিদেশনীতির ক্ষেত্রে ব্যর্থতা বয়ে আনতে পারতো। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, কোনো দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যদি টিলারসনের সঙ্গে বৈঠক করেন তাহলে কি টিলারসনের দেয়া প্রতিশ্রুতি ওপর তিনি ভরসা করতে পারেন?

অন্যদিকে ট্রাম্পের প্রতি পম্পিও-র আনুগত্য ও সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা খুবই নিবিড়। ওই সম্পর্কের কারণে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে পম্পিওর গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়ে দেয়।

তিন. টিলারসন ব্যর্থ হিসেবেই পরিচিত হবেন

‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’-এ পিটার বাকের ও গার্ডিনার হ্যারিস লিখেছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে টিলারসনের ব্যর্থতা অবাক করারে মতাে। বিখ্যাত জ্বালানি কোম্পানি এক্সন মবিল-এর সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হন টিলারসন। ওই হিসেবে অনেকেই তার শাসন সংক্রান্ত যোগ্যতা নিয়ে আশাবাদী ছিলেন।

অন্যদিকে তিনি একটি দক্ষ টিম গড়ে তুলতে, সঠিক সময়ে সিদ্ধান্ত নিতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন। ওয়াশিংটনে বিশ্বনেতাদের নিয়ে তিনি একটি রুদ্ধধার বৈঠকের আয়োজন করেছিলেন। অবশ্য এর ঘোষণা দেন বৈঠকের মাত্র ৮ দিন আগে। বিভিন্ন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তার আলোচনাও ফলপ্রসূ ছিল না।

ব্রিটেন, ফ্রান্সসহ অনেক দেশের কূটনীতিকদের অভিযোগ ছিল, টিলারসন তাদের ফোন ব্যাক করেন না। কৌশলগত আলোচনার ক্ষেত্রেও টিলারসন সাফল্য আনতে পারেননি। উদাহরণস্বরূপ- পাকিস্তানের সঙ্গে পারমাণবিক অস্ত্রের আলোচনা কোনো বিশ্লেষণ ছাড়াই শেষ হয়।

৪. সফল পররাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা আছে পম্পিওর

হোয়াইট হাউস, মন্ত্রিসভা, কংগ্রেস ও আমলাদের সঙ্গে সুসম্পর্কের ওপর নির্ভর করে মন্ত্রী হিসেবে কারো সফলতা। এক্ষেত্রে পম্পিওর ভালো সম্ভাবনা আছে ইতিহাসে জায়গা করে নেয়ার। ট্রাম্পের সঙ্গে সখ্য, অতীতে কংগ্রেস ও মন্ত্রিসভায় থাকার অভিজ্ঞতা- এ দিকগুলোর কারণে তিনি নতুন পদেও মানিয়ে নিতে পারবেন। সিআইএর সাবেক পরিচালক হিসেবে এজেন্সির যোগাযোগও তার সামনের পদচাণায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

পাঁচ. যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি আরো কঠোর হতে পারে

ট্রাম্প খোলাখুলিভাবেই ইরান বিষয়ে টিলারসনের সমালোচনা করেছেন। ট্রাম্পের মতে, টিলারসনের চিন্তার সঙ্গে তার চিন্তা মেলে না। পম্পিওকে আনার বিষয়েও সমমনা চিন্তা প্রাধান্য পেয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বিদেশনীতি, বিশেষ করে ইরানের বিষয়ে টিলারসনের থেকে কঠোর দৃষ্টিভঙ্গি পম্পিওর। ট্রাম্পের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা গ্যারি কোন-এর পর এবার টিলারসনের বিদায়ের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের উদার বিদেশনীতির সমর্থক ট্রাম্প প্রশাসনে আর থাকলো না। তাই এটি নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, যুক্তরাষ্ট্র কঠোর বিদেশনীতির পক্ষেই হাঁটবে।

টিলারসন থেকে বাজে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়া পম্পিওর জন্য অসম্ভব। কিন্তু ট্রাম্পের কঠোরনীতি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে পম্পিও ভয়ঙ্কর এক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হয়ে উঠতে পারেন।

অধ্যাপক ড্যানিয়েল ডব্লিউ ড্রেজনার-এর লেখাটি গত ১৩ মার্চ ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’-এ প্রকাশ করা হয়