২০১৭ সাল ছিল বিমান উড্ডয়নের ইতিহাসে সবচেয়ে নিরাপদ বছর। বড় ধরনের কোনাে দুর্ঘটনা না ঘটায় বাণিজ্যিক বিমানের ইতিহাসে ২০১৭ সালকে বলা যায় সফল বছর। এ তথ্য শুধু বাণিজ্যিক বিমানের জন্যই সুখবর ছিল না, বিমানযাত্রীদের মনেও স্বস্তি এনে দিয়েছিল। কিন্তু চলতি বছরের প্রথম আড়াই মাসেই ৩৬৩টি ছোট–বড় বিমান দুর্ঘটনা ঘটে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এবং গতকালই নেপালে ঘটে গেল ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের বিমান দুর্ঘটনা।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গতকাল দুপুর ১২:৫২ মিনিটে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের ড্যাশ ৮ কিউ ৪০০ বিমানটি উড্ডয়ন করে। নেপালের স্থানীয় সময় বেলা সোয়া ২টার দিকে কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দরে অবতরণের সময় বিধ্বস্ত হয় বিমানটি। ৭১ আরোহীর মধ্যে যাত্রী ছিলেন ৬৭ জন। তাদের মধ্যে বাংলাদেশি ছিলেন ৩২ জন। ৪৯ জন নিহতের মধ্যে বেশিরভাগ ছিল বাংলাদেশি- ২৬ জন। বিমান দুর্ঘটনায় এক সঙ্গে এত বাংলাদেশি যাত্রীর মৃত্যু ঘটে এর আগে একবারই। ৩৪ বছর আগে ১৯৮৪ সালে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার একটা অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট দুর্ঘটনায় এক সঙ্গে ৪৯ বাংলাদেশি নিহত হন।
১৯৮৪ সালের ৫ আগস্ট চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার উদ্দেশে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফকার এফ–২৭ তৎকালীন জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের (শাহজালাল আন্তর্জাতিক বমানবন্দর) কাছে বিধ্বস্ত হলে প্রাণ হারান ৪৯ আরোহীদের সবাই। বিমানটিতে ৪৪ যাত্রী ও ৫ ক্রু ছিলেন। যাত্রীদের মধ্যে ৪২ জন ছিলেন বাংলাদেশি এবং এক জাপানিজ ও এক ব্রিটিশ।
এটিই ছিল বাংলাদেশের এবং বিমান বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে মারাত্মক বিমান দুর্ঘটনা। দুর্ঘটনাটি ঘটে ঢাকায় ১৯৮৪ সালের ৫ আগস্ট। বিমানটা চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসছিল। ঢাকায় প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছিল এবং প্রায় কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। এটিই ছিল দুর্ঘটনার মূল কারণ।
ফকার এফ-২৭ বিমানটির পাইলট ছিলেন বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রথম মহিলা পাইলট- ক্যাপ্টেন কানিজ ফাতেমা। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে তিনি বাইরের কিছুই দেখতে পারছিলেন না। এমনকি রানওয়ে পর্যন্ত তার দৃষ্টিগোচর ছিল না। তিনি বিমান অবতরণের যথাসাধ্য চেষ্টা করেন। প্রথমে তিনি ২৩ নম্বর রানওয়েতে ল্যান্ড করানোর চেষ্টা করেন এবং ব্যর্থ হন। কারণ তিনি রানওয়ে দেখতে পারছিলেন না এবং শেষ মুহূর্তে বুঝতে পারেন ভুল দিকে অগ্রসর হচ্ছেন। এরপর তিনি রেডিও বিম ট্রান্সমিটার (যা বিমানের দিকনির্দেশনা দেয়)-এর মাধ্যমে ১৪ নম্বর রানওয়েতে ল্যান্ড করাতে চান। কিন্তু এবারও ব্যর্থ হন।। তৃতীয়বার অবতরণ করানোর প্রচেষ্টা করেন। এবারও রানওয়ে দেখতে পাননি। তবে অবতরণ করান রানওয়ে থেকে ৫০০ মিটার আগে একটা ডোবায় এবং বিমানটি বিদ্ধস্ত হয়ে যায়। ফলে বিমানের মোট ৪৯ জন আরোহী ও ৪ জন ক্রু নিহত হন।

বিমানটি চট্টগ্রামের পতেঙ্গা বিমানবন্দর থেকে জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পূর্বনির্ধারিত অভ্যন্তরীণ যাত্রী ফ্লাইট পরিচালনা করছিল। ফকার এফ-২৭ বিমানটি ছিল ১৯৭১ সালে নির্মিত। নির্মাণের এক বছর পর ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সে চলা বিমানটি ১৯৭২ সালে ভারতের পক্ষ থেকে স্বাধীনতা-পরবর্তী উপহার হিসেবে পায় বাংলাদেশ।