পাঁচ দিন হেঁটে ৩৫ হাজার কৃষক মুম্বাইয়ে

পাঁচ দিন হেঁটে ৩৫ হাজার কৃষক মুম্বাইয়ে

টানা পাঁচ দিন হেঁটে ভারতের মহারাষ্ট্র প্রদেশের ৩০ হাজার কৃষক রাজ্যশহর মুম্বাই পৌঁছেছেন। ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিআই) কৃষক সংগঠন সর্বভারতীয় কিষান সভার আহ্বানে ঋণ মওকুফ, ফসলের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করতে এবং জমি অধিগ্রহণের প্রতিবাদ কর্মসূচিতে যোগ দেন তারা। খবর এনডিটিভির।

মহারাষ্ট্রের নাসিক থেকে ৬ মার্চ যখন কৃষকরা মুম্বাইয়ের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন তখনই  তাদের সংখ্যা ছিল ১০ হাজারের বেশি। তাদের হাতে ছিল হাজারো লাল ঝাণ্ডা। মুম্বাইমুখী ওই মিছিল যতই এগিয়েছে ততই কৃষকদের সংখাটা বেড়েছে। মুম্বাই পৌঁছে ওই সংখ্যাটি ঠেকেছে ৩৪ হাজারে। সোমবার বিধানসভা ঘেরাও করার কথা রয়েছে তাদের।

ঋণ মওকুফ, ফসলের ন্যায্য দাম ও লাঙল যার জমি তার থেকে আদিবাসীদের অরণ্যের জমির ওপর অধিকারের মতো বেশকিছু দাবি নিয়ে পাঁচ দিন হেঁটে ১৮০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে মুম্বাইয়ে পৌঁছান ওই কৃষকরা।

এদিকে বিজেপি সরকার শাসিত মহারাষ্ট্র থেকেই সিপিএম-এর নেতৃত্বাধীন সর্বভারতীয় কিষান সভার এ রকম আকস্মিক আন্দোলনে নড়েচড়ে বসেছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। ফলে সোমবার মুম্বাইয়ের আজাদ ময়দানের কাছেই কৃষকদের পদযাত্রা আটকে দেয়ার পরিকল্পনা নেন তারা। ত্রিপুরা আর মেঘালয়ে বাম, কংগ্রেস-কে হটিয়ে দিয়ে এতদিন বেশ ফুরফুরে মেজাজেই ছিল বিজেপি। এমন সময় ওই কৃষক আন্দোলন রাজ্য আর কেন্দ্র- উভয় সরকারকেই চাপের মুখে ফেলে দিয়েছে। মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডনবিশ-এর সরকার ইতোমধ্যে ওই ঘটনায় কৃষক নেতাদের সঙ্গে কথা বলতে মন্ত্রী গিরিশ মহাজনকে দায়িত্ব দিয়েছেন। কৃষক নেতারা আশা করছেন সোমবারের সমাবেশে ৬০ হাজারের বেশি কৃষক উপস্থিত থাকবনি।

বিধানসভা ঘেরাওয়ের পেছনে বিভিন্ন দাবি থাকলেও মূলত জমি অধিগ্রহণ আর ঋণ মওকুফের লক্ষ্যেই আন্দোলনে নেমেছেন মহারাষ্ট্রের কৃষকরা। রাজ্যটির সরকার আগেই ৩৬ হাজার কোটি টাকার ঋণ মওকুফের ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু সরকারের ঘোষিত ওই টাকার পরিমাণ খুবই অপ্রতুল বলে জানান তারা।

কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকার খবর মতে, কৃষকরা মূলত যেসব দাবি সামনে রেখে আন্দোলন করছেন তা হলো–

  • কৃষকদের সম্পূর্ণ ঋণ মওকুফ।
  • ফসলের ন্যূনতম দাম হতে হবে চাষের পুরো খরচের দেড়গুণ।
  • অরণ্যের অধিকার আইনের সংশোধন করতে হবে।
  • নদী সংযুক্তি প্রস্তাব বাতিল করে আদিবাসীদের জমি রক্ষা করা।
  • খরাকবলিত এলাকায় জলের বন্দোবস্তকরণ।
  • আদিবাসী-চাষিদের জমি দখল বন্ধ করা।
  • লাঙল যার, জমি তার।
  • গরিব কৃষক ও ক্ষেতমজুরদের জন্য পেনশন চালু।
  • পোকামাকড় ও শিলাবৃষ্টিতে ফসলের ক্ষতিপূরণ।

আনন্দবাজার পত্রিকাকে কিষান সভার যুগ্ম সম্পাদক বিজু কৃষ্ণন বলেন, ‘সরকার এমন সব শর্ত রেখেছে যে, ঋণের খুব সামান্য টাকাই মওকুফের হবে। প্রধানমন্ত্রী ঘটা করে ফসল বীমা যোজনা ঘোষণা করেছেন। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসল নষ্ট হলেও ক্ষতিপূরণ মিলছে না।’

আবার বুলেট ট্রেন-সুপারহাইওয়ের নামে আদিবাসীদের জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধেও স্লোগান দিচ্ছেন ওই আন্দোলনে শরিক হওয়া কৃষক। এনডিটিভি-কে বিক্ষোভকারী জিদাবাই গায়কাওদ বলেন, ‘আমরা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে দাবি জানাই, আমাদের জমি যেন আমাদের নামে ফিরিয়ে দেয়া হয় যাতে আমরা কাজ করে বেঁচে থাকতে পারি।’

আন্দোলন কেন্দ্র করে সিপিএম আবারও রাজনীতিতে ফিরে আসার আভাস দিচ্ছে বলেই মনে করছেন অনেকে। কৃষক সভার সাধারণ সম্পাদক হান্নান মোল্লা জানান, তাদের উদ্যোগে রাজস্থান ও মধ্য প্রদেশের আন্দোলনে সাফল্য মিলেছে। এবার মহারাষ্ট্রের আন্দোলনে সমর্থন দিতে বাধ্য হয়েছে বিরোধী দলগুলো। এসব ঘিরে নতুন করে রাজনৈতিক সমীকরণে হাজির হচ্ছে সিপিএম। কৃষক নেতা বিজু কৃষ্ণন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা ভালো ফল করবাে কি না জানি না। কিন্তু ওই আন্দোলনে বিজেপির হারের পথ যে মসৃণ করা যাবে সেটি নিশ্চিত।’

The feet that traversed 200 kilometres from Nashik to Mumbai! Nothing can fail them! #KisanLongMarch reaches Mumbai…

Posted by Muzzammil Hamidani on Saturday, March 10, 2018