ঢাকা থেকে নেপালগামী একটি বিমান নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত হয়ে অন্তত ৫০ জন নিহত হয়েছেন। সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্রের বরাত দিয়ে এ তথ্য দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। বেসরকারি বিমান সংস্থা ইউএস-বাংলার বিমান বোমবার্ডার ড্যাশ ৮ কিউ ৪০০ সোমবার সকালে বাংলাদেশের ঢাকা থেকে নেপালের উদ্দেশে রওনা হয়। বিমান প্রতিষ্ঠানটির জেনারেল ম্যানেজার কামরুল হাসান জানিয়েছেন, বিমানটিতে ৩২ বাংলাদেশি, ৩৩ নেপালি এবং ১ জন করে চীনা ও মালদ্বীপসহ মোট ৬৭ যাত্রী এবং ৪ বিমান ক্রু ছিলেন।
দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে একে অপরকে দোষারোপ করছে বাংলাদেশি কোম্পানি ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স ও নেপালের একমাত্র আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।
কাঠমান্ডুতে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের প্লেন বিধ্বস্ত হওয়ার কারণ হিসেবে সেখানকার বিমানবন্দরের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল রুমের (এটিসি) গাফেলতিকে সন্দেহ করছে এয়ারলাইন্সটির কর্তৃপক্ষ।
১২ মার্চ সন্ধ্যায় রাজধানীর বারিধারায় ইউএস-বাংলার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এ সন্দেহ প্রকাশ করেন এয়ারলাইন্সটির সিইও ইমরান আসিফ।
অন্যদিকে পাইলটের দোষে এমনটি ঘটেছে বলে দাবি করেন ত্রিভুবন বিমানবন্দরের কর্মকর্তা রাজকুমার চেট্টেরি। গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘বিমানটির পাইলট নিয়ন্ত্রণকক্ষের (এটিসি) নির্দেশনা না মানায় দুর্ঘটনা ঘটেছে।’
নেপালের আকাশপথ ও বিমানবন্দরের নিরাপত্তাহীনতা নিয়ে এর আগে নানান সময়ে প্রশ্ন উঠেছে। নানা সময়েই সেখানে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বিমান নিয়ে সংকট তৈরি হয়। ১৯৯২ সালে থাইল্যান্ডের ব্যাংকক থেকে আসা একটি বিমান অবতরণের ঠিক আগেই বিধ্বস্ত হয়। সর্বশেষ ২০১৬ সালে নেপালের পাহাড়ি এলাকায় টুইন টার্বোপ্রপ উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হলে দুই বৈমানিকসহ প্রায় ২৩ জনের প্রাণহানি ঘটে।
হিমালয় টাইমস জানায়, সুযোগ-সুবিধা ও নিরাপত্তার দিক বিবেচনায় নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পৃথিবীর সবচেয়ে জঘন্যতম। ২০১৬ সালে নেয়া স্লিপিং ইন এয়ারপোর্টস ডটনেট-এ যাত্রীদের মতামত জরিপে এমন তথ্য উঠে আসে।
বিমানবন্দরটিতে বিধ্বস্ত ইউএস-বাংলা বিমানে যাত্রী ও ক্রুসহ মোট ৭১ জনের মধ্যে মাত্র মাত্র ১ জনের বেঁচে থাকার খবর পাওয়া গেছে। নেপালি ওই যাত্রী স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। কাঠমান্ডু পোস্টকে তিনি জানান, অবতরণের সময় থেকেই বিমানটি অস্বাভাবিক ঝাঁকুনি দিতে থাকে। এক পর্যায়ে আগুন ধরে গেলে তিনি জানালার কাচ ভেঙে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন।
নিহত বাংলাদেশি যাত্রীদের মধ্যে ২ জন সরকারি কর্মকর্তা রয়েছেন বলে জানা গেছে। তাদের মধ্যে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা উম্মে সালিমা ছিলেন। তিনি ৩ দিনের সরকারি সফরে নেপাল ভ্রমণে যান। অন্যজনের নাম জানা যায়নি।
যাত্রীদের মধ্যে ছিলেন সিলেটের জালালাবাদ রাগীব রাবেয়া মেডিক্যাল কলেজের ১৩ শিক্ষার্থী। তারা সবাই নেপালি বংশোদ্ভূত। এমবিবিএস ফাইনাল পরীক্ষা শেষে তারা বাড়ি যাচ্ছিলেন। কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মো. আবেদ হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তবে দুর্ঘটনার পর ওই শিক্ষার্থীদের অবস্থা বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
নেপালের বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের পরিচালক সনজিব গৌতম বলেন, রানওয়েতে অবতরণের সময় বিমানটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। এটি দক্ষিণ দিকে নামার কথা থাকলেও উত্তর দিক দিয়ে নামে। তিনি বলেন, ‘কারিগরি ত্রুটির কারণে এমনটি হয়ে থাকতে পারে। আমরা বিধ্বস্ত হওয়ার প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি।’
নেপালের সেনাবাহিনীর মুখপাত্র গোকুল ভান্ডারি জানান, তারা বিদ্ধস্ত বিমান থেকে ৫০ জনের লাশ উদ্ধার করেছেন। তাদের মধ্যে ৮ জন হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। বাকিদের ব্যাপারে এখনই কিছু বলতে পারছে না বলে জানান তিনি।
মূলত ত্রিভুবন বিমানবন্দর ঘেঁষা ফুটবল মাঠে ওই বেসরকারি বিমানটি বিধ্বস্ত হলে ব্যাপক আগুনের ফুলকি দেখা যায় বলে জানায় প্রত্যক্ষদর্শী। প্রত্যক্ষদর্শী এক নারী আমান্ডা সামার্স জানান, বিমানটি এত নিচ দিয়ে যাচ্ছিল যে, মনে হচ্ছিল বিমানটি পাহাড়ের সঙ্গে ধাক্কা খাবে। এরপর হঠাৎ বিমানটিতে বিস্ফোরণ হয়। একটু পর আবার বিস্ফোরণ হয় বলে জানান তিনি।
বিমান ট্র্যাকিং ওয়েবসাইট ফ্লাইটরাডার টােয়েন্টিফোর ডটকম-এর তথ্য মতে, ইউএস-বাংলার ওই বিমানটির বয়স প্রায় ১৭ বছর এবং বিমানটি প্রায় ৬ হাজার ৬০০ ফুট উচ্চতায় উঠেছিল।
বাংলাদেশ সরকারের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত দল পাঠানোর কথা জানিয়েছে সংস্থাটির চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম নাইম হাসান। এই দুর্ঘটনায় নেপালের একমাত্র আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি চালু হলেই এই তদন্ত দল সেখানে পৌঁছাবে।
এ নিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি পৃথকভাবে শোক প্রকাশ করেছেন।