মুশফিক জবাব দেন এভাবেই

মুশফিক জবাব দেন এভাবেই

মেরে দুখ তো মেরে রাব কে পাতা হ্যায়
তুমনে তো সির্ফ মেরি হাসি দেখি হ্যায়

বাক্য দুটি এখন সবচেয়ে বেশি মানানসই এক আদমির জন্যই- হাথুরুসিংহে। নিকট অতীতে বাংলাদেশ-শ্রীলংকা মুখোমুখি হলেই না চাইতেও যেন হাথুরুর নামটি চলে আসছে বার বার। যাদের এক সময় ব্রাত্য ঘোষণা করে বাদ দিয়ে নিজের রাজত্ব পাকাপোক্ত করার বন্দোবস্ত করেছিলেন, একেক করে প্রত্যেকেই যেন নিদারুণ নিষ্ঠুরতায় দিচ্ছেন উপেক্ষার জওয়াব। মুমিনুলের জোড়া সেঞ্চুরি, মাহমুদুল্লাহর ম্যাচ বাঁচানো ইনিংসগুলো বুকে শেলের মতো বিঁধলেও এটুকুই সান্ত্বনা ছিল যে, দল তো জিতছে। ওই সুকুনটুকুও কাল কেড়ে নিলেন মুশফিক। ২১৪ রানের পাহাড় গড়ে নিশ্চিত মনে যখন গোঁফে তা দেয়ার কথা তার তখন আফতাব হয়ে জ্বলে নাজাকাতের সঙ্গে যে ভঙ্গিমায় লংকান বোলারদের ফানা করলেন মুশফিক এতে ঠোঁটে পেশাদার হাসি ধরে রাখলেও হাথুরুর কাছে পুরো রাতটাই লাগার কথা অসহনীয়।

গত বছরের প্রটিয়া সিরিজের মধ্যপথে ওই মুশফিকের বয়ানেই স্পষ্ট হয়ে যায় সিনিয়র ক্রিকেটার সঙ্গে হাথুরুর সম্পর্কটা কোন তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। সংবাদ সম্মেলনে বলা কথাগুলোর ওয়াকিফ কী হতে পারে তা সম্পর্কে পূর্ণ সচেতন থাকার পরও মুখে লাগাম টানেননি মুশফিক। এক প্রকার যেন স্বেচ্ছায়ই মুক্তি চাইছিলেন। তা তিনি পেয়েছেনও। সিরিজ শেষে কেড়ে নেয়া হয় তার অধিনায়কত্ব। হিসাব-কিতাব বেশ জমে গিয়েছিল। চুকানোর একটা চেষ্টা তিনি করেছিলেন সদ্য সমাপ্ত টি-২০ সিরিজেই অসাধারণ এক অর্ধশতক করে। কিন্তু সেটি বৃথা যায় বোলারদের নিদারুণ ব্যর্থতায়। তবে এবার আর কারো আশায় বসে থাকলেন না মুশফিক। বেঙ্গালুরু-র ইবরাত থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেই এখতেলাফ গড়ে দিলেন ম্যাচের। অসহায় চান্দিমাল চেয়ে চেয়ে দেখলেন বাংলার ওই গৌহরের উজ্জ্বলতার কাছে কী করে নিভে যাচ্ছে তার আশার প্রদীপ।

যখন মাঠে নামেন তখন সেট হওয়ার জন্য যে কিছু বল খেলে দেখবেন ওই সুযোগটুকু ছিল না- আস্কিং রেট যে তাড়া করছে নাছোড়বান্দার মতো। টাইগার হয়ে যার জন্ম, আস্কিং রেটের কী সাধ্যি তাকে তাড়া করে দমাবার? কী পেস, কী স্পিন- সবাইকে সমানতালে উপহার দিয়েছেন নিদারুণ সব শট। তা কখনো গ্যালারিতে আছড়ে পড়েছে, কখনো বা অবাক বিস্ময়ে স্থানুর মতো ফিল্ডার দাঁড়িয়ে দেখেছে। গত ম্যাচেই সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছিলেন প্রিডিটারমাইন্ড শট খেলে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসার কারণে। কলম্বোর রাতটিকে যেন বেছে নিলেন সব সমালোচকের করুণার পাত্রে পরিণত করার জন্য।

সামনে হয়তো এর চেয়েও বেশি রান তাড়া করে জিতবে বাংলাদেশ। কিন্তু মুশফিকের ওই ইনিংসটি বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে থাকবে অক্ষয় হয়ে। ২১৪ তাড়া করতে নেমে যে আজামাতের সঙ্গে কঠিন সমীকরণটি ছেলেখেলায় পরিণত করলেন তা চোখে লেগে থাকতে বাধ্য। এমন সব ইনিংসে ভাগ্যের সহায়তা লাগে। অথচ মুশফিক খেলেছেন শতভাগ নিখুঁত এক ইনিংস। আর এমন সময় এ রকম নিখুঁত ইনিংস যিনি খেলতে পারেন তাকে যে ব্রাত্য ঘোষণা করার চেষ্টা করে প্রশ্ন জাগে তার ক্রিকেটজ্ঞান নিয়েই।

মুশফিক হচ্ছেন রিয়াল টাইগার। মাঝে হয়তো নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। কিন্তু এ ইনিংসটি দিয়েই সবাইকে যেন জানিয়ে দিলেন টাইগার জিন্দা হ্যায়…।