শ্রীলংকায় ফেসবুক টুইটার বন্ধ

শ্রীলংকায় ফেসবুক টুইটার বন্ধ

শ্রীলংকায় সংখ্যালঘু মুসলিমদের ওপর উগ্র বৌদ্ধদের ধারাবাহিক হামলার ঘটনায় বুধবার থেকে দেশজুড়ে ফেসবুক-টুইটারসহ সব সামাজিক মাধ্যম তিন দিনের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সহিংসতা উসকে দিতে এসব মাধ্যমে যাতে ছবি ও তথ্য ছড়িয়ে পড়তে না পারে এ কারণে এমনটি করা হয়েছে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

কয়েক বছর ধরেই ওই দুটি ধর্মীয় গোষ্ঠীর মধ্যে তীব্র বিবাদ চলছে। বৌদ্ধদের দাবি, বৌদ্ধপ্রধান দেশে মুসলিমরা বৌদ্ধদের ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করার জন্য বাধ্য করছে। এছাড়া মুসলিমরা বৌদ্ধ ধর্মের নানান পুরাকীর্তি ধ্বংস করছে বলেও অভিযোগ বৌদ্ধদের। তবে মুসলিমরা এসব অস্বীকার করে আসছে।

বেশকিছু বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদী শ্রীলংকা রোহিঙ্গা মুসলিমদের আশ্রয়দানেরও বিরোধিতা করেছে। দুঃখজনক হলেও সত্য, মিয়ানমারের বৌদ্ধদের মতো তারাও উগ্র জাতীয়তাবাদের দিকে ধাবিত হচ্ছে।

গত বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টা থেকে ক্যান্ডি জেলায় কারফিউ জারি করে সেখানকার পুলিশ বিভাগ। মূলত ওই অঞ্চলেই কয়েক মুসলিমের সঙ্গে এক বৌদ্ধ তরুণের সংঘাতের জেরে ওই তরুণ মারা গেলে প্রথম বিশৃঙ্খলা শুরু হয়।

পরে বৌদ্ধরা সেখানকার মসজিদ ও মুসলিমদের দোকানপাটে ব্যাপক হামলা চালায়। এরপরই শ্রীলংকার রাষ্ট্রপতি মায়থ্রিপালা সিরিসেনা ওই সংঘাত নিয়ন্ত্রণে সারা দেশে ১০ দিনের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করেন। তিনি অবশ্য এটিকে সাত দিনে কমিয়ে আনার কথাও বলেছেন।

পুলিশের এক মুখপাত্র রুয়ান গুনাসেকারা জানান, মঙ্গলবার রাত থেকেই সেখানে নানান অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে। মূলত আক্রান্ত এলাকাটি চা চাষ ও পাহাড়ি সৌন্দর্যের জন্য বেশ বিখ্যাত।

গণমাধ্যমকে গুনাসেকারা জানান, পুলিশ সাতজনকে গ্রেফতার করেছে। তিন পুলিশ ওই ঘটনায় আহত হয়েছেন। তবে ওই হামলা-পাল্টা হামলায় কী পরিমাণ জানমালের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা জানাতে পারেননি তিনি।

কলোম্বোর মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় ওই বৌদ্ধ তরুণের খণ্ডিত মস্তক পাওয়া গেলে উত্তেজনা বেড়ে যায়। স্থানীয়রা জানায়, পুলিশ তদন্ত করছে। কলম্বোর মুসলিমরা জানান, তাদের আত্মীয়দের যারা ক্যান্ডিতে রয়েছেন তাদের ব্যাপারে তারা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত।

একটি সাবান ফ্যাক্টরি শ্রমিক মোহাম্মদ খান (৭১) জানান, তাদের অনেক আত্মীয় ক্যান্ডিতে রয়েছেন। তারা আত্মরক্ষায় লুকিয়ে আছেন। তবে সেনাবাহিনী ও পুলিশ ততটা তৎপর নয় বলে অভিযোগ করেন তিনি।

বিশৃঙ্খলার বার্তা সহজে ফেসবুকে ছড়িয়ে গেলে মুসলিমদের ওপর আরো হামলা হতে পারে বলে সব সামাজিক মাধ্যম তিন দিনের জন্যে বন্ধ রাখা হয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, হামলাকারীরা মুসলিমদের বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করছে। কারণ সিংহলিরা মনে করে, মুসলিম সংখ্যালঘুরা অসামঞ্জস্য অর্থনৈতিক শক্তি অর্জন করে ফেলেছে।

দীর্ঘ ২৬ বছর ধরে তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন কেন্দ্র করে চলা গৃহযুদ্ধের ঘা শুকাতে শুরু করেছে সবেমাত্র। গৃহযুদ্ধের অবসান হয় ২০০৯ সালে।

বৌদ্ধ সিংহলিরা ওই দেশের জনসংখ্যার অনুপাতে প্রায় ৭০, হিন্দু প্রায় ১৩ এবং মুসলিম মাত্র ৯ শতাংশ। দেশটির মোট জনসংখ্যা ২ কোটি ১৪ লাখের কিছু বেশি।

জাতিসংঘের মানবাধিকার কর্মী জায়েদ রাদ জানান, নৃতাত্ত্বিক ও ধর্মীয় সংখ্যাগুরুর হামলার খবরাবরের ব্যাপারে তাকে প্রতিনিয়ত জানানো হচ্ছিল।

জেনিভায় আয়োজিত জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের এক বক্তব্যে রাদ বলেন, ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কাউকে ছাড় দেয়া উচিত না। উত্তেজনা সৃষ্টিকারী ও হামলাকারী- কাউকেই নয়।

অন্যদিকে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট-এর এক বিবৃতিতে ওই দেশের নাগরিকদের ক্যান্ডি ভ্রমণে বিশেষ সতর্কতা জারি করেছে।

বলা হয়ে থাকে, ওই শহরের এক মন্দিরে নাকি বৌদ্ধের দাঁত সংরক্ষিত রয়েছে। মূলত পর্যটন খাত শ্রীলংকার অন্যতম বৈদেশিক মুদ্রা রফতানি অর্জনকারী খাত। কিন্তু এসব ধারাবাহিক নেতিবাচক ঘটনা ওই খাতে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে বলে আশঙ্কা অনেকের।

কলম্বোর এক সাংবাদিকের কাছে সিনিয়র এক মন্ত্রী সারাথ আমানুগামা দাবি করেন, শ্রীলংকার ওইসব ঘটনার পেছনে সংগঠিত ষড়যন্ত্র কাজ করছে।

ভারত মহাসাগরের কেন্দ্রে পাহাড়ি চা চাষের জন্য বিখ্যাত ক্যান্ডি। তবে এক চা ব্যবসায়ী মত দিয়েছেন, জরুরি অবস্থা চা ব্যবসায়ে কোনো প্রভাব ফেলবে না।

জরুরি অবস্থার মেয়াদ মাত্র ১০ দিন। এ জন্য অবশ্য কিছু চায়ের চালান পাঠাতে বিলম্ব হবে। কিন্তু বিশ্ববাজারে এতে দামের হেরফের হবে না। কেনিয়া ও ভারতের ব্যাপক জোগান এসব পুষিয়ে দেবে। তবে ওই অচল অবস্থা যদি এক মাস ধরে থাকে এতে দাম বেড়ে যেতে পারে বলে জানান পূর্ব কলকাতার এক চা আমদানিকারক।

উল্লেখ্য, শ্রীলংকা বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম চা রফতানিকারক দেশ।