• ছয় উইকেটের বড় পরাজয় দিয়ে নিদাহাসের মিশন শুরু বাংলাদেশের
• ব্যাটসম্যানদের নিদারুন ব্যার্থতায় ইনিংস শেষ ১৩৯ রানেই
• ইনিংস সর্বোচ্চ ৩৪; লিটন দাসের
• ভারতের জয় ৭ উইকেটে
• শিখর ধাওয়ানের টানা দ্বিতীয় অর্ধশতক
• ম্যান অফ দ্য ম্যাচ : বিজয় শংকর
২০১৫ বিশ্বকাপে ভারত কতৃক ম্যাচ ডাকাতির পর থেকেই ভারত-বাংলাদেশ মুখোমুখি হওয়া মানেই একটা অলিখিত যুদ্ধের দামামা। নিদাহাস ট্রফিতে ভারত নিজেদের বি টিম নিয়ে আসলেও এবার বাংলাদেশি খেলোয়াড়দের শরীরের ভাষায় সে যুদ্ধের ছিফেছোটাও নেই। বরং, তলানিতে ঠেকা আত্মবিশ্বাস নিয়ে শ্রীলঙ্কা সফরে যাওয়া বাংলাদেশ বড় পরাজয় উপহার দিয়েই নিদাহাসে নিজেদের খুঁজে পেল ভারত। আরো একটি পরাজয়ে গ্লানি সংগে নিয়ে মাঠ ছাড়লো বেঙ্গল টাইগাররা।
পাওয়ার প্লেতেই পথহারা বাংলাদেশ
প্রথম ওভারের শেষ বলেই বেঁচে গিয়েছিলেন সৌম্য। থার্ড ম্যানে ওঠা ক্যাচটি কে নেবেন সে দ্বিধায় কেউই না ধরায় বেঁচে যাওয়া সৌম্য টিকলেন মাত্র ১২ বল। উন্দাকান্তকে চমৎকার এক ফ্লিকে ছয় মেরে আশা জাগিয়েছিলেন প্রাপ্ত সুযোগটাকে কাজে লাগানোর। কিন্তু, শর্মার চতুরায় বদলে যাওয়া ফিল্ডিংয়ে সে ফ্লিক করতে গিয়ে একই ওভারে ধরা পরলেন শর্ট ফাইন লেগে চাহালের হাতে। দলের রান তখন সবে ২০ আর সৌম্যের ১৪। হাথুরুর পথে না হেটে লিটনকে টপ অর্ডারে নামালেন ওয়ালশ। গতম্যাচেই শার্দুলকে ঠাকুরের নাম জপতে বাধ্য করেছিলেন পেরেরা। অথচ, সেই শার্দুলই দুর্বধ্য ঠেকলেন তামিমের কাছে। এলবির একটি আবেদনে সাড়া দিয়ে আম্পায়ার আঙ্গুল তুলে দিলে রিভিও নিয়ে বেঁচে যাওয়া তামিম পরপর দু বলে চার মেরে আরো একটি কালো রাতই যেন উপহার দিতে চেয়েছিলেন ঠাকুরকে। কিন্তু, উল্টো তিনিই হায়ে গেলেন হাসির পাত্র। শর্ট পিচকে বাউন্ডারিছাড়া করতে গিয়ে ক্যাচ যেনো প্র্যাক্টিস করালেন উন্দাকান্তকে। আউট হওয়ার অাগে তামিম করেন ১৬ বলে ১৫ রান। পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর মুহুর্তটা উপহার দিয়েছেন মুশফিক। আলোচনার তুঙ্গে থাকা চাহালকে প্রথমে রিভার্স এবং পরে স্লগ সুইপ এ চমৎকার দুটি চার মেরে শেষ করেন পাওয়ার প্লে। ছয় ওভারে আসে ২ উইকেটে ৪৪ রান।
তলানিতে ঠেকা আত্মবিশ্বাস
গ্রাউন্ড ফিল্ডিং বলুন বা ক্যাচিং; দুটোতেই ভারতের দূর্বলতা ছিলো স্পষ্ট। শংকরের এক ওভারেই রায়না এবং সুন্দেরর হাত থেকে পড়েছে দুটি ক্যাচ। কিন্তু প্রাপ্য সুযোগ কাজে লাগানোর মতো সামান্য আত্মবিশ্বাসও যেন ছিলো বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের। দুবারই ভাগ্যবান ব্যাটসম্যানের নাম লিটন। এমন দুটো সুযোগ পাওয়ার পরেও যতটা আক্রমণাত্বক হবার কথা তার অর্ধেকও হতে পারেননি এই ব্যাটসম্যান। বরং ফ্রি হিটটাকে যেভাবে হিট করেছেন তাতে মনে হয়েছে বলটি সীমানাছাড়া করলে বোধয় পাপই হবে। মুশফিক-মাহমুদুল্লাহ; দলের এই অবস্থায় যে দুজনের ব্যাটের দিকে তাকিয়ে ছিলো বাংলাদেশ তারা দুজনই আউট হয়েছেন প্রি ডিটারমাইন্ড শট খেলে। শংকরের বলে ছয় মারার ঠিক পরের বলেই এগিয়ে এসে চার্জ করতে গিয়ে মুশফিকের আউট হওয়াটা ছিলো দৃষ্টিকটু। তারচেয়ে দৃষ্টিকটু ছিলো অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহর আউটটি। দল যখন ৭২ রানেই চার উইকেট হারিয়ে ফেলেছে তখন অমন হাফ হার্টেড শট আর যাই হোক অধিনায়কের কাছে আশা করা যায় না। জায়গায় দাড়িয়ে কাভারে ক্যাচ তুলে দিয়ে শংকরকে যেন নিজের উইকেটটিই উপহার দিয়ে আসলেন তিনি।
সাব্বির-লিটনে আশার আলো
পুরো ইনিংসে বলার মতো একটিই জুটি রয়েছে। সেটি প্রবল সমালোচনার পরও দলে স্থান পাওয়া সাব্বির আর লিটনের। দুইজনের ৩৫ রানের জুটিটাই ইনিংস সর্বোচ্চ, এবং এটাই যা একটু আশার আলো দেখিয়েছিলো বাংলাদেশকে। কিন্তু রানের গতি বাড়াতে গিয়ে লিটনের বিদায়ে জুটিটি ভাঙ্গলে ১৫০ ছোঁয়ার আশারও সমাপ্তি ঘটে যায় বাংলাদেশের।
ভুল সিদ্ধান্ত আবারো
ভারতে ব্যাটিং শক্তি বিবেচনায় একজন বাড়তি বোলার নিয়ে খেলার জন্য মেহেদীকে অল-রাউন্ডার হিসাবে খেলানো। এটা সত্য যে তার ব্যাটিংয়ে সামর্থ্য রয়েছে। কিন্তু টি টোয়েন্টি যে রকম পাওয়ার হিটিং ডিমান্ড করে তিনি ঠিক সেরকম নন। আর এটাকে ভুল বলা যায় এই কারণেও যে, মাহমুদুল্লাহ-সাব্বির বা ক্ষেত্রবিশেষ সৌম্যও বল হাতে হাত ঘুরাতে জানেন। একজন বাড়তি ব্যাটসম্যানের অভাব যে বাংলাদেশ অনুভব করেছে তার স্কোর বোর্ড দেখলেই স্পষ্ট হয়ে যায়।
আবারো সেই ছন্নছাড়া বোলিং
নিদাহাস ট্রফিকে সামনে রেখে ওয়ালশের তত্ত্বাবধায়নে পেসারদের নিয়ে একটি বিশেষ ক্যাম্প দেখেছি আমরা। সেখান থেকে বোলাররা ঠিক কি শিখলেন তা ম্যাচে অন্তত পরিষ্কার কোনো ধারণা দিতে পারেনি। এটা সত্য, যে ব্যাটসম্যানরা স্কোরবোর্ডে যথেষ্ট রান জমা করতে পারেনি। কিন্তু, সেই জন্য বোলাররা লাইন লেংন্থই ঠিক রাখতে পারবেন না? মোস্তাফিজ আর রুবেল তিনটি উইকেট পেয়েছেন বটে তবে এই স্কোর ডিফেন্ড করার জন্য যেভাবে ব্যাটসম্যানদের চেঁপে ধরা প্রয়োজন ছিলো তা কেউই করতে পারেননি। প্রশ্নবিদ্ধ ফর্ম নিয়ে লঙ্কায় যাওয়া তাসকিনকে দরমুস করে ভারতীয়রা এটুকু অন্তত বুঝিয়ে দিয়েছেন ক্রিকেট বুঝতে গিয়ে কর্তাদের চুল পাকলেও বিশ্লেষকরাও ক্রিকেটটা কম বোঝেন না। একটি উইকেট যদিও তিনি পেয়েছেন, তবে সেটি ম্যাচের ফলাফল প্রায় নির্ধারিত হয়ে যাবার পরে। বোলিংয়ে ইতিবাঁচক দিক একটাই। সেটি রুবেলের বোলিং। নতুন বা পুরান, দু বলেই অন্তত কিছু করার চেষ্টা ছিলো তার মধ্যে।
একটি প্রশ্ন
বোলিং শক্তি বাড়াতে যে নাজমুল অপুকে দলে নেয়া, তাকে বোলিংয়ে আনা হলো তেরোতম ওভারে। তার আগেই এক ওভার করে বোলিং করেছেন রিয়াদ এবং সৌম্য। বিষয়টা যদি এমনই হয়, আবারো সেই প্রশ্নটিই উঠছে, মেহেদীকে অল-রাউন্ডার হিসাবে না খেলিয়ে বাড়তি আরেকজন ব্যাটসম্যান খেলানো যেত কি না?
সিরিজ শুরুর আগেই বিশ্লেষকরা শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন এই সিরিজের সম্ভাব্য ফলাফল নিয়ে। তাদের সে শঙ্কা সত্যি হবার প্রথম নমুনা দেখা গেলো এই ম্যাচে। নতুবা, ভারতের সেই ম্যাচ ডাকাতির পর এমন নিরুত্তাপ বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ নিকট অতীতে দেখা যায়নি। ১৩৯ রান ডিফেন্ড করে বাংলাদেশের বোলাররা ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ জিতিয়ে আনবেন এমনটা বোধয় কোনো খোয়াবিদা আদমিও ভাবেন না। সুতরাং, বোলারদের কঠোর সমালোচনা করার কোনো কারণ নেই। বরং, শঙ্কার বিষয় হচ্ছে, শেখা ব্যাটিংটা ব্যাটসম্যানরা যেভাবে ভুলতে বসেছেন সেটি। বোর্ড প্রধানের সার্বক্ষণিক তদারকির চেয়ে এই মুহুর্তে প্রয়োজন একজন ব্যাটিং কোচ। এই অনুধাবনটা যত দ্রুত আসে ততই মঙ্গল। নতুবা, পরাজয়ের এ গ্লানি কত ম্যাচ বইতে হবে তা কে জানে?