শ্রীলংকা সফরের ভালো-মন্দ

শ্রীলংকা সফরের ভালো-মন্দ

শ্রীলংকা-ভারত ম্যাচ গিয়ে শুরু হয়ে গেল শ্রীলংকার স্বাধীনতার ৭০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত হিরো নিদহাস ত্রিদেশীয় ট্রফি ২০১৮। ওই সিরিজে অংশ নিতে ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন কোচ ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তি কোর্টনি ওয়ালশের নেতৃত্বে লংকায় অবস্থান করছেন বেঙ্গল টাইগাররা। ফাইনাল খেলার অভিপ্রায় জানিয়ে ওয়ালশ দেশ ছাড়লেও আমরা একটু গভীরে গিয়ে দেখতে চাই সম্ভাবনা ও শঙ্কার দিকগুলো।

ইতিবাচক দিক

• বিষয়টা একটু অদ্ভুত শোনালেও ওই সিরিজে প্রথমেই যে ইতিবাচক দিকটি বিশ্লেষকদের নজরে এসেছে তা হলো নির্দিষ্টি এক কোচ পাওয়া। হোক তা অন্তর্বর্তীকালীন। সর্বশেষ সিরিজেই কোচবিহীন একটি দলকে টেকনিকাল ডিরেক্টর নামের অদ্ভুত পদ সৃষ্টি করে তার হাতে তুলে দেয়ার পর দলের হালত কীরূপ হয়েছিল তা আমরা দেখেছি। তাই নির্দিষ্ট একজনের অধীন দলের দায়িত্ব সঁপে দেয়াটা ড্রেসিংরুমে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরিয়ে আনবে।

• প্রথমে ত্রিদেশীয় সিরিজ, এরপর টেস্ট সিরিজ হয়ে টি-২০ সিরিজের মধ্য দিয়ে খেলার মধ্যেই আছেন খেলোয়াড়রা। একই সঙ্গে চলমান ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ এবং পিসিএল-এ তামিম-মোস্তাফিজ-সাব্বির-রিয়াদের অংশগ্রহণটাও ইতিবাচক। নেট প্র্যাকটিস আর ম্যাচ প্র্যাকটিসে বহু তফাত। তাই খেলোয়াড়রা নিয়মিত মাঠে থাকায় প্রস্তুতিটা বেশ ভালোই হয়েছে বলা যায়।

• লংকান কন্ডিশন অনেকটা বাংলাদেশের মতোই। তাই কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেয়া নিয়ে খুব একটা সমস্যা হবে না। এর সঙ্গে গত বছরের লংকা সিরিজ নিয়ে মিশ্র অনুভূতি থাকলেও সিরিজের ফল বাংলাদেশকে বেশ উজ্জীবিতই করতে পারে।

• টানা খেলার ক্লান্তি থেকে বিশ্রাম দিতে ভারত এসেছে অনেকটাই তরুণ একটি দল নিয়ে। আর মাত্রই লংকানদের সঙ্গে সিরিজ শেষ হওয়ায় লংকানদের শক্তি দুর্বলতা সম্পর্কে বেশ ভালোই ধারণা আছে বাংলাদেশ দলের। ভারতের অনভিজ্ঞতা আর লংকানদের সম্পর্কে খুঁটিনাটি জানা থাকায় বাংলাদেশ নিজেদের স্বাভাবিক খেলাটা খেলতে পারলে ভালো একটি ফল আশা করাই যায়।

• পিএসএলে পরিণত তামিম এবং ছন্দে ফেরা মোস্তাফিজ হতে পারে মাহমুদুল্লাহর অন্যতম প্রধান অস্ত্র। দু’জনের সামর্থ্য রয়েছে যে কোনো প্রতিপক্ষের হাত থেকে ম্যাচ বেড় করে নেয়ার।

• আবু হায়দার, আবু জায়েদ, নুরুল ইসলাম, নাজমুল ইসলাম, আরিফুল হকদের মতাে তরুণদের জন্য এটি একটি বড় সুযোগ নিজেদের প্রমাণ করার। যেহেতু টি-২০ বিশ্বকাপ সামনে এগিয়ে আসছে সেহেতু প্রাপ্ত প্রতিটি সুযোগই শেষ সুযোগ ধরে খেলে ওই তরুণদের উচিত দলে জায়গা পোক্ত করার চেষ্টা করা। এটা তারা করতে পারলে আখেরে লাভ বাংলাদেশেরই।

নেতিবাচক দিক

• বোর্ডপ্রধানের সার্বক্ষণিক উপস্থিতি দলকে উজ্জীবিত করার বদলে উল্টো চাপে ফেলে দিতে পারে। বিশেষ করে দলটা যখন তরুণ। পুরো ক্রিকেট ইতিহাসেই এমন নজির দ্বিতীয়টা আছে বলে মনে হয় না।

• সঠিক কম্বিনেশন খুঁজে নেয়ার ব্যর্থতাও বাংলাদেশ দলের অন্যতম দুর্বল দিক। বছরের প্রথম ত্রিদেশীয় সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে প্রতিপক্ষ ও কন্ডিশন বিবেচনায় দল সাজিয়ে সাফল্য পেলেও আচমকাই ওই পথ থেকে সরে এসে পথ হারিয়েছিল বাংলাদেশ। তাই মুখস্থ একাদশের বদলে প্রতিপক্ষ দেখে দল সাজানোই হবে শ্রেয়তর।

• সাকিবের অভাবটা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে নেতিবাচক দিকের একটি। বিশ্বের অন্যতম সেরা ওই অলরাউন্ডারের বিকল্প খুঁজে পেতে বেশ বেগ পেতে হবে বাংলাদেশকে।

• বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং লাইনআপটাও হয়ে উঠতে পারে একটি দুশ্চিন্তার বিষয়। এটিকে তো অনভিজ্ঞতা সঙ্গে হার্ড হিটারের অভাবও বেশ ভোগাতে পারে বাংলাদেশকে। ওয়ালশও যদি হাথুরুর পথ ধরে সাব্বিরকে টপ অর্ডারে খেলানোর পরিকল্পনা নিয়ে নামেন তাহলে সেটি ব্যুমেরাং হওয়ার আশঙ্কাই বেশি। টপ অর্ডারের চেয়ে বরং স্লগিংয়ের জন্য সাব্বির পারফেক্ট। সন্দেহ নেই, স্কোর বোর্ডে রান জমা করার জন্য তামিম-মুশফিক-মাহমুদুল্লাহর ওপর বাড়তি চাপ থাকবে।

• টপ অর্ডার সাজানো নিয়েও ঝামেলায় পড়তে হবে ওয়ালশকে। ওপেনিংয়ে তামিম-সৌম্য শুরু করলেও তিন নাম্বারে কে খেলবেন সেটি একটি প্রশ্ন। মুশফিক ভালো অপশন হতে পারেন। এক্ষেত্রে পরের পজিশনগুলোয় মাহমুদুল্লাহ, জাকির/সোহান, লিটন, সাব্বির ক্রমান্বয়ে আসতে পারেন। কিন্তু ইমরুলকে দিয়ে যদি তিন নাম্বার স্থান পূরণের চেষ্টা করা হয় তাহলে সেটি হবে আত্মঘাতী। কারণ দলে তার ডাক পাওয়াটাই প্রশ্নবিদ্ধ। দ্বিতীয়ত. ভারতীয় বোলিং লাইনআপ এখন যথেষ্ট গতিসম্পন্ন। এমন বোলিং লাইনআপের বিপক্ষে তার অতীতই বলে দেয়, আর যাই হোক, আস্থা রাখার মতো কোনো নাম তিনি নয়।

• বোলারদের অফ ফর্মের বিষয়টিও দেখা দিতে পারে মূল সমস্যা হয়ে। মোস্তাফিজকে ছন্দে দেখা গেলেও তাকে সমর্থন দেয়ার মতো ঠিক ওইভাবে কাউকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। দেশের বাইরে মেহেদীর নৈপুণ্য হতাশাজনক। রাহী, রনি, অপু- প্রত্যেকেই নতুন ও আনকোরা। তাসকিনও আছেন অফফর্মে। মোস্তাফিজের সঙ্গে যা একটু রুবেলই আছেন ভরসা করার মতো।

একটি আফসোস

• অগ্রণী ব্যাংকের বিপক্ষে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ডাবল হ্যাটট্রিক করে মাশরাফি বিন মুর্তজা আনন্দের বদলে জন্ম দিলেন আফসোসের। এখনো পূর্ণ সামর্থ্য থাকার পর বোর্ডের ইচ্ছা চরিতার্থে স্বেচ্ছায় টি-২০ থেকে সড়ে দাঁড়ানো মাশরাফি বুঝিয়ে দিলেন কী মিস করছে বাংলাদেশ। মাশরাফির থাকাটা দলকে শুধু শক্তিশালীই করতো না, বরং ফাইনালের যে তামান্না ওয়ালশ দেখছেন সেটি বাস্তবে রূপ নিলেও নিতে পারতো।