লংকানদের ভারত বধ

লংকানদের ভারত বধ

অহমিকার নিদারুণ পতন দিয়ে শুরু হলো নিদাহাস ট্রফি। খর্ব শক্তির বাংলাদেশ এবং বহুদিন ধরেই পথ হারিয়ে খোঁজা লংকানদের বিপক্ষে ত্রিদেশীয় ওই টুর্নামেন্ট খেলতে ভারত এসেছেন দলের মূল মুখগুলোকে ছাড়াই। হাথুরুর হাত ধরে বদলাতে শুরু করা লংকানদেরও যে ভারত ততটা আমলে নেয়নি এর কারণ বোধহয় সিরিজটি বাংলাদেশের বিপক্ষে হওয়ায়। কিন্তু ওই তাকাব্বুরের জওয়াব যে এমন চপোটাঘাতের মাধ্যমেই দেবে থিসারারা এমনটি বোধহয় ভাবেননি শাস্ত্রী অ্যান্ড কোং।

টসে জিতে ভারতকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানানো শ্রীলংকাকে শুরুতেই সাফল্য এনে দেন পেসার দুশমন্ত চামিরা। ভারতীয় দলপতি রোহিত শর্মাকে শরম দিয়ে শূন্যতেই প্যাভিলিয়নের পথ ধরান তিনি। এরপরও যে ভারত ১৭৪ রানের শক্ত ভিত্তি পেয়েছে তা মূলত শিখর ধাওয়ানের ক্যারিয়ার সেরা ৪৯ বলে করা ৯০ রানের কল্যাণে। এছাড়া ছোট্ট কিন্তু কার্যকর তিনটি ইনিংস উপহার দিয়েছেন মনিষ পান্ডে, রিষাভ পান্ত ও দিনেশ কার্তিক। ১২তম ওভারে ১০০ ছোঁয়া ভারত শেষ ৮ ওভারে তুলেছে ৭৪ রান। লংকানদের প্রায় সব বোলারই কমবেশি মার ভাগাভাগি করে নিলেও এদিক দিয়ে কৃপণ ছিলেন গুনাথিলাকা। ৩ ওভারে মাত্র ১৬ রান দিয়েছেন তিনি। বোনাস হিসেবে ছিল ধাওয়ানের উইকেটটি।

স্কোর বোর্ডে বড় সংগ্রহের স্বস্তি নিয়ে হাসিমুখে মাঠে নামা ভারতের জন্য হন্তারক রূপে আবির্ভূত হন কুশল পেরেরা। ২২ বলে ফিফটি হাঁকান তিনি। বাঁহাতি ওই ব্যাটসম্যান নাকের পানি চোখের পানি এক করে ছেড়েছেন ভারতীয় বোলারদের। একটা সময় তো মনে হচ্ছিল, পেরেরাকে থামাতে প্রার্থনা ছাড়া কোনো গতি নেই। তার ভয়াল রূপের সামনে সবচেয়ে অসহায় ছিলেন শার্দুল ঠাকুর। মহারাষ্ট্রের ওই বোলারের এক ওভারে পাঁচটি চার ও একটি ছক্কাসহ নিয়েছেন ২৭ রান। তার ওই ঝড়ে শ্রীলংকা দলীয় ৫০ ছোঁয় মাত্র ৩ ওভার ৪ বলে। যদিও পেরেরা ঝড় ওঠার আগে মেন্ডিসকে ফিরিয়ে দিয়ে রোহিত শর্মার সুন্দর একটি মুহূর্ত উপহার দিয়েছিলেন ওয়াশিংটন সুন্দর তবুও অমন ইনিংসের পর কে-ই বা মনে রাখে শুরুর কাহিনী। আফ্রিকা বধে বড় ভূমিকা রাখা আত্মবিশ্বাসে টইটুম্বর চাহাল আর সুন্দর অবশ্য চেষ্টা চালিয়েছিলেন ভারতকে ম্যাচে ফেরানোর। দ্রুতই চান্দিমাল, পেরেরা, থারাঙ্গার বিদায়ে বিজয়ে যে সুবাসটা পাওয়া শুরু করেছিল ভারত তা যে নেহাত লংকানদের মুলো ঝোলানো টোপ তা বুঝতে বিশেষ বেগ পেতে হয়নি। কারণ তখনো ক্রিজে ফিনিশারখ্যাত থিসারা। ম্যাচটি যখন কাগজ-কলমে কঠিন হয়ে উঠছে তখন মাত্র দুটি বল নিলেন থিসারা ফল নির্ধারণ করে দিতে। উন্দাকান্তের করা ১৭ ওভারের পঞ্চম বলটিকে অবলীলায় লং অফ দিয়ে পাঠালেন মাঠের বাইরে। দিশাহীন উন্দাকান্তকে কাঁদিয়ে ছাড়লেন পরের বলেই আরো একটি চার মেরে। বাকি আনুষ্ঠানিকতাটা পরের ওভারেই সেরেছেন তিনি। শেষটা করেছেন ঠাকুরের বলে চার মেরে।

নিদাহাসে শেষ হাঁসিটা কে হাসবে সেটি সময়ই বলে দেবে। তবে অহমিকার যে জবাবটা লংকানরা দিল তা লা জওয়াব ছিল বলতেই হয়। ১৭৫ তাড়া করতে নেমে এত অনায়াস জয় বহুদিন পর পেল লংকানরা। নায়ক? তা যে কে এটি ঠাকুরের চেহারার দিকে তাকালেই বোঝা যাবে। বহুকাল তার ঘুমে খলনায়ক রূপে আবির্ভূত হবেন পেরেরা।