শেষ বিকেলের পড়ন্ত আলোয় জয়ের আভা উঁকি দিচ্ছিল অগ্রণী ব্যাংকের ডেরায়। আবাহনীর ছুঁড়ে দেয়া ২৯১ রানের লক্ষ্য থেকে মাত্র ১৩ রান দূরে তারা। বল করতে এলেন মাশরাফি। স্ট্রাইকে আবদুর রাজ্জাক। প্রথম বলে সিঙ্গল নিয়ে স্ট্রাইকিং প্রান্ত ছেড়ে দিলেন ২৬ বলে ৪৬ রানে অপরাজিত ধীমান ঘোষকে। ম্যাশ তখন কী ভাবছিলেন? নিশ্চয়ই ধীমানকে আউট করার কথা? আউট করেছেন। ২৭ বলে ৪৬ রান করে শেষ ওভারের দ্বিতীয় বলে ক্যাচ দিয়ে ম্যাচ ছেড়ে ফিরেছেন ঘোষ। দৌড়ে এবারও রাজ্জকের প্রান্তবদল। পরের বলে ক্যাচ। তিনিও আউট। এরপরের বলে শফিউল ইসলাম। ওয়ানডে দলপতিকে নিজের উইকেটের বিনিময়ে উপহার দিলেন ‘লিস্ট-এ’ ক্যারিয়ারের প্রথম হ্যাটট্রিক। হ্যাটট্রিকটা ম্যাশ সিলিব্রেট করেছেন অন্য ঢঙে। পরের বলে আরেক উইকেট। ৫০তম ওভারের ৫০ বলে অগ্রণী ব্যাংকের শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে উইকেটরক্ষক মিঠুনের হাতে ক্যাচ দিলেন ফজলে রাব্বি। শেষ ওভারে মাশরাফি-১, উইকেট, উইকেট, উইকেট, উইকেট! ৪ বল, চার শিকার! ২৭৯ রানে অলআউট অগ্রণী ব্যাংক, আবাহনী জিতল ১১ রানে।
‘লিস্ট-এ’ ম্যাচে ৪ বলে ৪ উইকেট নিয়ে সপ্তম বোলার হিসেবে ম্যাশ ঢুকে গেলেন অ্যালান ওয়ার্ড, শন পোলক, লাসিথ মালিঙ্গা, ভাসবার্ট ড্রেকস্, ডেভিড পেইন ও গ্রাহাম নেপিয়ারদের ক্লাবে। এর আগে এমন কীর্তি করে দেখিয়েছেন তারা ছয়জন। শেষ ওভারে তাণ্ডবের আগে ম্যাশ নিয়েছেন আরো দুটি উইকেট যার একটি ১২১ রান করে বিপজ্জনক হয়ে ওঠা শাহরিয়ার নাফিসের উইকেট। বাকি শিকারের নাম জাহিদ জাবেদ। ম্যাচে মাশরাফির বোলিং ফিগার ৯.৫-০-৪৪-৬।
দিনের শুরুতে টস জিতে ফতুল্লায় ব্যাটিংয়ে নামে আবাহনী। ৬৪ রানে ২ ওপেনার এনামুল ও সাইফ হাসানকে হারালেও নাজমুল হাসান শান্তর ক্যারিয়ার সেরা অপরাজিত ১৩৩ রানের ইনিংসের সঙ্গে মিঠুনের ৪৬ রানে ভর দিয়ে ৬ উইকেটে ২৯০ রানের সংগ্রহ পায় আবাহনী। শান্তর এটি ‘লিস্ট-এ’তে তৃতীয় শতক। অগ্রণী ব্যাংকের আল আমিন ও সালমান হোসেন নেন দুটি করে উইকেট। জবাব দিতে নেমে অগ্রণী ব্যাংকের শুরুটাও আবাহনীর মতাে। ৬৩ রানে নেই ২ উইকেট। হাল ধরেন শাহরিয়ার নাফিস। মাত্রই আগের ম্যাচে ৯৯ রানে থামার আক্ষেপ মেটান ১৩ বাউন্ডারি, ৩ ওভার বাউন্ডারিতে ১১৯ বলে ১২১ রানের ঝলমলে ইনিংসে।
মিরপুরে দিনের আরেক খেলায় লো স্কোরিং ম্যাচে মোহামেডানকে ২৯ রানে হারিয়েছে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স। প্রথমে ব্যাট করে ৩৫ দশমিক ৪ ওভারে সব উইকেট হারিয়ে গাজী গ্রুপ তােলে ১৩৭ রান। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩৫ রান করেন আসিফ আহমেদ। এছাড়া নাদিফ চৌধুরির ব্যাট থেকে আসে ২৮ রান। মোহামেডানের কাজী অনিক নেন ৪, মোহাম্মদ আজিম পান ৩ উইকেট। এত অল্প রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে উল্টো সাদা-কালোরা ভেঙে পড়ে তাসের ঘরের মতাে। রাব্বি, নাইম, মেহেদীদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ৩৩ দশমিক ২ ওভারে ১০৮ রানে অলআউট হয় মোহামেডান। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ২২ রান করেন রাকিবুল হাসান। এছাড়া দুই অঙ্ক ছুঁতে পারে আর মাত্র দু’জন। গাজী গ্রুপের পক্ষে রাব্বি ও নাইম হাসান নেন ৩টি করে উইকেট।
অন্যদিকে মাশরাফির দিনে ম্লান অন্য সবকিছু। বিকেলের সোনালি আভার পূর্ণদ্যুতি মাখিয়ে মাশরাফি বিন মর্তুজা হয়ে ওঠেন হিরোদের হিরো আরো একবারের মতো।
স্কোরকার্ড
আবাহনী-অগ্রণী ব্যাংক
আবাহনী ২৯০/৬ (৫০)। শান্ত ১৩৩, মিঠুন ৪৬, নাসির ২৫ (আল আমিন ৫৫/২, সালমান ৪০/২)
অগ্রণী ব্যাংক ২৭৯ (৫০)। নাফিস ১২১, রেজা আলী ৬২, ধীমান ৪৬ (মাশরাফি ৪৪/৬, আরিফুল হাসান ৫৭/২)
ফল : আবাহনী লিমিটেড ১১ রানে জয়ী।
গাজী গ্রুপ ১৩৭ (৩৫.৪)। আসিফ ৩৫, নাদিফ ২৮, শফিউল হায়াৎ ১৮ ( অনিক ২৮/৪, আজিম ৩২/৩)
মোহামেডান ১০৮ (৩৩.২)। রকিবুল ২২, শামসুর শুভ ১৯, জনি ১৫ ( রাব্বি ৩৫/৩, নাইম হাসান ২৭/৩)
ফল : গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স ২৯ রানে জয়ী।