ইসলাম বিদ্বেষ ছড়ানোয় সুইডিশ নারীর ২ বছরের জেল

ইসলাম বিদ্বেষ ছড়ানোয় সুইডিশ নারীর ২ বছরের জেল

যোগাযোগ মাধ্যমে একটি চিত্র পোস্ট করায় সুইডেনের গোথেনবার্গ-এ ৩২ বছর বয়সী এক নারীকে জেলে পাঠিয়েছে সেখানকার পুলিশ। সাংস্কৃতিক বহুত্ববাদের ধারণায় বিশ্বাসী সুইডেন। দেশটির পুলিশ ওই চিত্রটিতে ‘ঢালাওভাবে মুসলিম বিদ্বেষ’ শনাক্ত করে। তাকে থানায় ডেকে ডিএনএ টেস্ট করার পর জেলে পাঠিয়ে দেয়া হয়।

ওই নারী যে চিত্রটি পোস্ট করেন এতে দেখানো হয়, এক মুসলিম ব্যক্তির মাথা থেকে মগজ সরিয়ে সেখানে আবর্জনা ভরে দেয়া হয়। এরপর মাথায় পাগড়ি পরা অবস্থায় দেখানো হয় এবং সবশেষে তাকে জঙ্গি হিসেবে চিত্রিত করা হয়।

ওই ধরনের চিত্র পোস্ট করায় মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগতে পারে। তাই চিত্রটি দেখার সঙ্গে সঙ্গে সুইডেনের পুলিশকেজোনান স্থানীয় এক সাংবাদিক।

ব্যঙ্গাত্মক এ ছবিটির কারণে সুইডিশ নারীর ২ বছরের জেল হয়েছে

ইনফোওয়ার-এর এক সাংবাদিক ওই নারীর বিস্তারিত বিবরণসহ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘এক সাংবাদিক ওই পোস্টটি দেখে পুলিশকে জানান, ভদ্রমহিলা যেভাবে ওই পোস্টটি দিয়েছেন এতে অনেকের আবেগ আহত হবে। ওই পোস্টের উপাদানগুলো মুসলিমদের জন্য পীড়াদায়ক হতে পারে। এটি সুইডেনের বহু সাংস্কৃতিক চর্চার যে নাগরিক অধিকার তা লঙ্ঘন করে।’ এরপর পুলিশ স্টেশনে ডেকে ওই নারীর ডিএনএ নেয় এবং তা ক্রিমিনাল ডেটাবেজে রাখে।
অবশ্য ওই নারী সঙ্গে সঙ্গেই ঘটনাটির জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। এছাড়া পুলিশকে জানান, তিনি ভেবেছেন, আইএসআইএস-এর কাজকে নিন্দা করার জন্য ওইসব ছবি তৈরি করা হয়েছে। তিনি জানান, তার বেস্ট ফ্রেন্ডও একজন মুসলিম। অবশ্য ওই মুসলিম বন্ধুটি জ্বরে আক্রান্ত বলে তার জন্য কোনাে সাক্ষ্য দিতে পারেননি বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

অবশ্য ওই নারীর ওই যুক্তি পুলিশকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। তার চিন্তাকে সুইডেনের বহু সাংস্কৃতিক সমাজের জন্য হুমকি বলে সাব্যস্ত করে তাকে জেলে পাঠানো হয়েছে। অন্যদিকে তিনি দাবি করেছেন, ‘আমি কেবল ইসলামিক স্টেট বা আইএসআএস-এর বিরুদ্ধে, সাধারণ মুসলিমদের বিরুদ্ধে নই।’

গোথেনবার্গ প্রসিকিউটর সারা টোরেসকোং জানান, ওই কর্মকাণ্ডকে ‘হেট স্পিচ’ হিসেবে দেখা হচ্ছে এবং তাকে ২ বছরের জন্য জেলে নেয়া হয়েছে।

মুসলিম শরণার্থীদের জন্য সুইডেন সরকার সহায়ক অনেক নীতি নিয়েছে দেখে দেশটির কট্টরবাদীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসা অসংখ্য মুসলিম এখন সুইডেনে বসবাস করছেন। তা সুইডেনের অনেক মূলনীতিতে প্রভাব ফেলছে বলে মনে করছেন অনেক কট্টরবাদী নেতা। তবে সুইডেনের এ ধরনের আচরণে ভোটের রাজনীতির হিসাব আছে বলা হলেও অনেক মুসলিম অ্যাক্টিভিস্ট ভিন্নমতের প্রতি ওই ধরনের বন্ধুত্বপূর্ণ নীতিকে স্বাগত জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য, পিউ রিসার্চ-এর ২০১৭ সালের গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য মতে, স্ক্যান্ডিনেভিয়ান ওই দেশটির মোট জনসংখ্যার ৮ দশমিক ১ শতাংশ মুসলিম। গণতান্ত্রিক চর্চায় সবচেয়ে অগ্রগামী ইউরোপিয়ান ওই দেশটির বর্তমান জনসংখ্যা ১ কোটি ১ লাখ ২০ হাজার ২৮২।