স্ট্যালিন সম্পর্কে ১৫টি বিশেষ তথ্য

স্ট্যালিন সম্পর্কে ১৫টি বিশেষ তথ্য

আমরা স্ট্যালিনকে সোভিয়েতের অন্যতম বিখ্যাত রাষ্ট্রনেতা হিসেবে চিনি। কিন্তু জানেন কি, তাঁর আগে স্ট্যালিনের পেশা কি ছিল। তিনি জীবনের শুরুতে আবহাওয়া দপ্তরে চাকরি করতেন। তাঁর বিশেষ কাজ ছিল, বৃষ্টি এবং পারিপার্শ্বিক চাপ ঠিকঠাক মাপা।

 স্ট্যালিন মুভি দেখতে খুব পছন্দ করতেন। যে কারণে তার প্রতিটি বাড়িতে একটি করে সিনেমা দেখার থিয়েটার আছে।

 স্ট্যালিনের আসল নাম মূলত লোসেব বেসারিওনিস জ্যা যুগাশভিলি। কিন্তু পরে তিনি নিজের নাম বদলে রাখলেন স্টালিন। যার অর্থ লোহার মানুষ।

 যদিও বলা হয়ে থাকে, লাখ লাখ সাধারণ জনতাকে হত্যার পেছনে আদেশদাতা ছিলেন স্ট্যালিন। কিন্তু অবাককর তথ্য হচ্ছে, স্ট্যালিনকে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়েছিল। তাও একবার নয়, দুই দুইবার। প্রথমবার ১৯৪৫ সালে, পরেরবার ১৯৪৮।

 স্ট্যালিন এর জন্মই রাশিয়ায় নয়, তিনি মূলত জন্মেছিলেন জর্জিয়ার গোরি নামক শহরে। তখন অবশ্য সেটি রাশিয়া সাম্রাজ্যের অধীনে ছিলেন।

 স্ট্যালিনের আগ্রহ শুধু সিনেমাতেই সীমাবদ্ধ ছিল না। তিনি কবিতাও খুব পছন্দ করতেন। একসময়ে তিনি ‘সোসেলো’ নামে কবিতার চর্চাও করতেন। তিনি এক ডজনের বেশি কবিতা লেখেন এবং তা প্রকাশও করেন।

• তিনি বিশ লাখের বেশি রাশিয়ান নাগরিককে হত্যা করেছেন। যেখানে তার চেয়ে বেশি নাগরিক তার সময়ে নানা কারণে কারাবরণ, অত্যাচারিত হয়েছেন। বিশেষত তারা স্ট্যালিনের চিন্তার বিরোধী ছিলেন।

 স্ট্যালিনের নামে অনেক উক্তি প্রচলিত আছে যা আসলে স্ট্যালিন কখনও বলেছেন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, “একটি মৃত্যু বেশ দুঃখজনক, কিন্তু লাখ লাখ মৃত্যু কেবলই সংখ্যা।” যেটি স্ট্যালিনের নামে চালু চালু থাকলেও ঐতিহাসিকরা তা প্রমাণ করতে সক্ষম হননি।

 ধর্ম বিষয়ে স্ট্যালিনের রাশিয়ায় তেমন স্বাধীনতা ছিল না তা সবারই জানা। কিন্তু অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে, স্ট্যালিন তরুণ সময়ে চার্চের পাদ্রী হতে চেয়েছিলেন। তাই তাঁর স্বপ্ন পূরণে তিনি বৃত্তি গ্রহণ করে জর্জিয়ান অর্থডক্স চার্চে কাজ করেছিলেন।

 একবার স্ট্যালিনকে সাইবেরিয়ায় নির্বাসন দিলে তিনি মাত্র ১৩ বছর বয়সী এক কিশোরীর প্রেমে পড়েন। তখন স্ট্যালিন ত্রিশোর্ধ ব্যক্তি হিসেবে দুজন প্রেম বহুদিন গড়ায়। যদিও স্ট্যালিন রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়ার পর এই প্রেমের সব তথ্য-প্রমাণ মুছে দিতে সকল চেষ্টা করেন। কিন্তু এখন তাঁর সবকিছুই ইতিহাসবেত্তারা বের করেছেন। সেই নারীর নাম ছিল লিদিয়া পেরেপরাইজিনা, এবং প্রেমের একসময়ে সেই মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বাও হয়ে পড়ে।

 তিনি ২য় বিশ্বযুদ্ধের পর রাশিয়ার একটি যুদ্ধ-ময়দানকে নিজের নামে প্রতিষ্ঠিত করেন, নাম দেন স্ট্যালিনগ্রাদ।

 ২য় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে স্ট্যালিন ঘোষণা দেন, যুদ্ধ ময়দানকে কেউ পালিয়ে আসলে তাঁর শাস্তি মৃত্যুদন্ড। ফলস্বরুপ, ১৯৪১-৪২ এর এক বছরেই প্রায় দেড় লক্ষ সৈনিককে মৃত্যুদণ্ডের দন্ডিত করে স্টালিনের রাশিয়া।

 স্ট্যালিনের মৃত্যুকে কেউ কেউ সাধারণ মৃত্যু আকারে দেখেন না। ঐতিহাসিকদের অনেকের দাবি, দলের কেউই হয়ত তাকে ওয়েফারিন খাবারের সাথে বিষ মিশিয়ে হত্যা করেছিল। ওয়েফারিন মূলত ইঁদুরের বিষ।

 হিটলারের নাজি বাহিনী একবার স্ট্যালিনের পুত্রকে ধরে নিয়ে যায়, এবং স্ট্যালিনের কাছে মুক্তিপণ চায়। লৌহমানব স্ট্যালিন কোন ধরণের মুক্তিপণ দিতে নাকচ করে দেন। এতে তার পুত্রকে নাজিদের ‘কনসেন্ট্রশন ক্যাম্প’ এ অত্যাচারের মুখে জীবন দিতে হয়।

 স্ট্যালিনের মৃত্যু ৫ই মার্চ, ১৯৫৩ সালে। তাঁর মমি ১৯৬১ সাল পর্যন্ত মস্কোর রেড স্কয়ারে সযত্নে রাখা হয়েছিল। কিন্তু ১৯৬১ সালে স্টালিনের সকল চিহ্ন মুছে দেওয়ার প্রবল ক্রোধ থেকে তাঁর মমি ক্রেমলিনে মাটিচাপা দেওয়া হয়।

 তিনি সরকারি প্রচারমাধ্যম চালু করেছিলেন যেখানে শুধু স্ট্যালিনকেই সারাক্ষণ মহান এবং বিরাট জ্ঞানী আকারে উপস্থাপন করা হতো। তিনি যা করতেন, সেটিকেই ‘রাশিয়ার জন্যে বর্তমান এবং ভবিষ্যতের জন্য অবশ্য করণীয়” বলে সারাক্ষণ প্রচার করা হতো।