অনেকটা আচমকাই ম্যাচটার গায়ে লেগে গিয়েছিল বড় ম্যাচের তকমা। স্প্যানিশ গণমাধ্যম ‘মার্কা’ তো এক ধাপ এগিয়ে ম্যাচটিকে ঘোষণা করলো ‘দি মাদার অফ অল গেমস’ নামেই। বাস্তবে যা ঘটলো তা হলো, লিওনেল মেসির আরো একটি অতি মানবীয় ফ্রি কিকে ক্যাম্প ন্যু থেকে ফিলিপে লুইসরা ফিরলেন বিরস বদনে। এক মেসিই মুখতালিফ গড়ে দিয়েছেন দু’দলের মধ্যে।
প্রথমার্ধ থেকেই বোঝা যাচ্ছিল যারা জমজমাট এক লড়াই দেখার প্রত্যাশায় প্রহর গুনছেন তাদের তাভাকু পূরণের সামর্থ্য অ্যাথলেটিকোর নেই। গা-জোয়ারি ফুটবল খেলে অভ্যস্ত সিমিওনি শিষ্যদের বধের জন্য চমৎকার তাবদির খুঁজে নিয়েছেন ভালভার্দে। বল বেশিক্ষণ পায়ে রেখে প্রতিপক্ষকে নিজেদের ওপর চওড়া হওয়ার সুযোগ না দিয়ে ছোট ছোট পাসে ব্যতিব্যস্ত রেখেছিলেন এটিএমকে। ম্যাচ-পূর্ব বিশ্লেষণে ‘জবান’ বলেছিল, অযাচিত ট্যাকল করে বিপদ ডেকে আনার বদ অভ্যাস রয়েছে অ্যান্তোনিও গ্রিজম্যানদের। বল দখলে ব্যর্থ হয়ে হতাশা থেকেই ডি-বক্সের ঠিক বাইরেই মেসিকে যেন গোল করার সুযোগই উপহার দিল অ্যাথলেটিকো। বক্সের বাইরে থেকে পাওয়া ফ্রি কিককে পেনাল্টজ্ঞান করতে শুরু করা মেসিই বা ওই সুযোগ হারাবেন কেন? চমৎকার বাঁকানো ফ্রি কিকটি যখন জালে প্রবেশ করে তখনই যেন ফয়সালা হয়ে যায় ম্যাচের ফল। পুরো প্রথমার্ধে গোল করার মতাে পরিষ্কার সুযোগ তো দূর, বলার মতাে একটি আক্রমণও করতে পারেনি অ্যাথলেটিকো। সত্যি বলতে কী, প্রথমার্ধে তাদের পরিকল্পনাটাই ঠিক পরিষ্কার ছিল না। না দেখা গেছে বল দখলে রেখে আক্রমণের কোনো প্রচেষ্টা, না পিলে চমকানো কোনো প্রতি আক্রমণ। এ ম্যাচের পর এটুকু নিশ্চিত করেই বলা যায়, সিমিওনির ট্যাকটিস নিয়ে অনেক বোদ্ধা প্রশংসায় পঞ্চমুখ থাকলেও এত চেষ্টার পরও বার্সা বধের কোনো কার্যকর পরিকল্পনা তিনি বের করতে পারেননি। প্রথমার্ধের ৩৬ মিনিটে হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটে পড়ে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন বার্সা অধিনায়ক আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা।
দ্বিতীয়ার্ধে অ্যাথলেটিকোর মধ্যে কিছুটা প্রচেষ্টা দেখা যায় ম্যাচে ফেরার। চতুর ভালভার্দে ওই আর্ধে নামেন নতুন পরিকল্পনা নিয়ে। অ্যাথলেটিকোর গা-জোয়ারি ফুটবল থেকে নিজের খেলোয়াড়দের রক্ষার্থে আক্রমণের বদলে অ্যাথলেটিকোকে পায় বল রাখার সুযোগ দিয়ে নিজেরা চালিয়েছেন পাল্টা আক্রমণের প্রচেষ্টা। এতে কোনো গোল না এলেও অবস্থাদৃষ্টিতে এটি ছিল চমৎকার একটি পরিকল্পনা। ট্রেবল জয়ের সম্ভাবনা বাস্তবে রূপ দিতে অ্যাথলেটিকোর শরীর নির্ভর ফুটবলে নিজেদের সঁপে দিয়ে সামনের ম্যাচগুলোর জন্য কোনো খেলোয়াড়কে হারাতে চাননি তিনি। এতেও খুব একটা লাভ হয়নি। বার্সার খেলোয়াড়দের বলজ্ঞান করে তাদের ওপরই মোট ২০ বার চওড়া হয়েছে সিমিওনি শিষ্যরা। ৮৬ মিনিটে অ্যাথলেটিকো ম্যাচে নিজেদের একমাত্র পরিষ্কার সুযোগটি পেয়েছিল। কিন্তু কস্তা অফসাইডে থাকায় গামেরিওর গোলটি গােনায় ধরেননি রেফারি। সত্যি কথা বলতে, পুরো ম্যাচে একবারের জন্যও মনে হয়নি অ্যাথলেটিকো ম্যাচটি জিততে বা ড্র করতে পারে। এর পেছনে কারণগুলো ম্যাচ-পূর্ব বিশ্লেষণেই বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
আরো একবার বড় ম্যাচে ব্যর্থ গ্রিজম্যান। পুরো ম্যাচে তাকে চিনতে হয়েছে জার্সি ও পেছনে থাকা নাম দেখে। বার্সার রক্ষণ নিয়ে দুশ্চিন্তা থাকলেও যেটি বলা হয়েছিল, বড় ম্যাচের অভিজ্ঞতা পিকেকে সাহায্য করবে এটিএম-এর দুর্দান্ত ফর্মে থাকা আক্রমণভাগের ধার ভোঁতা করে দিতে। বাস্তবেও ঘটেছে তা-ই। তার নেতৃত্বে বার্সার রক্ষণ ছিল উত্তর মেরুর জমাট বাঁধা বরফের মতােই শক্ত। বিপরীতে অর্ধেক ফর্মের মেসিকেই বলা হয়েছিল ম্যাচের পার্থক্য গড়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। ৮ ধশমিক ৫ রেটিং পয়েন্ট বলে দিচ্ছে মেসি অর্ধেক নয়, পুরো ফর্মেই ছিলেন। আর এমন ফর্মের মেসিকে আটকানোর মাশিয়াত যদি আপনার থাকে তাহলে পথ একটিই- প্রার্থনা করা।

ম্যাচটি ম্যাড়ম্যাড়ে হলেও রেফারি পুরোটা সময় ছিলেন চাপে। একপাশে সুয়ারেজ, অন্যপাশে কস্তা। ডাইভিংয়ে ওস্তাদ দু’জনকে সর্বক্ষণ নজরে রাখার মতো কঠিন কাজটি বেশ সাফল্যের সঙ্গেই সম্পাদন করেছেন রেফারি হেসাস গিল। ম্যাচের সবচেয়ে আকর্ষণীয় মুহূর্ত ছিল, ডাইভিংয়ের জন্য বিখ্যাত উমতিতি ও কস্তার নাটকটা। দু’জনের ভঙ্গিমায় যে কেউই দ্বিধায় পড়তে বাধ্য ছিলেন, জীবনটা কার যাচ্ছে!
যাহোক, মেসি নামক আফতাবের রােশনীতে উজ্জ্বল আরো একটি রাত পার করা বার্সা এগিয়ে গেল শিরোপার আরো এক ধাপ আগে। কৃতিত্ব পাবেন ভালভার্দেও। যে চমৎকার দক্ষতায় খেলোয়াড়দের রক্ষা করে ফলটি নিজেদের অনুকূলে নিয়ে এসেছেন সেটি সত্যিই প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য।