জন্ম মানে মৃত্যুর প্রতি অমোঘ যাত্রা, জন্মদিন মানে একটি সিঁড়ি অতিক্রম। কে জানতেন, গত ৭ জানুয়ারি ৩১ বছরে পা দেয়া ডেভিড আস্তোরি অতিক্রম করে ফেলেছেন জীবনের সর্বশেষ সিঁড়িটা? জানতেন কি, মাত্র সপ্তাহ দুয়েক আগে পিতৃত্বের স্বাদ নেওয়াটাই হয়ে রবে জীবনের শেষ প্রাপ্তি? মানুষ জানে না তার ভবিতব্য কী। জানে না বলেই ছোটে আপনতালে। ইতালির ক্লাব ফিওরেন্তিনা-র অধিনায়ক আস্তোরি-ও রোজকার নিয়ম মেনে ঘুমাচ্ছিলেন। ঘুম ভাঙলে ছক কষবেন অ্যাওয়ে ম্যাচে কীভাবে হারানো যায় উদিনেসে-কে। একটি দলের চালিকাশক্তি অধিনায়ক। আর তিনি যদি হন ছয় ফিট দুই ইঞ্চি উচ্চতার বিশালদেহী, দক্ষ ডিফেন্ডার তাহলে দলের জন্য এর চেয়ে বড় জ্বালানি কিছু হতে পারে না। কিন্তু দ্বীপ নিভে গেলে! এ প্রশ্নের উত্তর ফিওরেন্তিনা দলের কারোর কাছে আপাতত নেই কিংবা থাকলেও নেই উত্তর দেয়ার মতাে পর্যাপ্ত মানসিক শক্তি। তাদের দলপতি চলে গেছেন না ফেরার দেশে। রবিবার সকালে ঘুমের মধ্যে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন ইতালি ও ফিওরেন্তিনার ডিফেন্ডার ডেভিড আস্তোরি।
আমাদের কাছে ডেভিড আস্তোরি তেমন আহামরি কেউ নন। ফুটবলেরও তেমন বড় নাম নয়। সতীর্থদের কাছে অবশ্য তার আবেদন অনেক। একজন ভালো মানুষ হিসেবে যথেষ্ট সুনাম কুড়িয়েছেন। আন্দ্রেয়া পিরলো-র টুইটে ফুটে উঠেছে ওই চিত্রই। তিনি লিখেছেন, ‘ভালাে মানুষজন দ্রুতই স্বর্গে চলে যায়।’ সাবেক এসি মিলান মিডফিল্ডার ঘানার কেভিন প্রিন্স বোয়াটেং টুইট করেছেন, “রেস্ট ইন হ্যাভেন!’ আস্তোরির সঙ্গে রাদজা নাইংগোলান খেলেছেন ক্যাগলিয়ারি ও রোমায়। বন্ধুর প্রস্থানে তার ক্ষুদে বার্তাটা- ‘একজন দারুণ প্লেয়ার, তার চেয়ে দারুণ একজন মানুষ। আমরা একত্রে ক্যাগলিয়ারি-তে কত যে লড়াই জিতেছি তা অব্যাহত ছিল রোমেও। আমি বিশ্বাস করতে পারছি না এখনো। সব সময় তার পরিবারের পাশে আছি। ভালাে থেকো বন্ধু।’ টুইট আসছে অসংখ্য, কেবল মানুষটাই নেই।
Rest In Heaven 🙏🏼 #Astori 💜💜💜 #shocked pic.twitter.com/94HhCexEsu
— Kevin-Prince Boateng (@KPBofficial) March 4, 2018
সুপার সানডে-তে সিরি এ’র ২৭তম রাউন্ডে কাল মাঠে গড়ানোর কথা ছিল মিলান ডার্বি-র। এছাড়া আস্তোরির সাবেক ক্লাব ক্যাগলিয়ারি মোকাবেলা করত জেনোয়ার। দুই দল মাঠে নিজেদের ঝালিয়েও নিচ্ছিল। কিন্তু ম্যাচ শুরুর কিছুক্ষণ আগে মর্মস্পর্শী সংবাদে বাতিল করা এদিনের সব খেলা।
একনজরে আস্তোরি…
• জন্ম : ৭ জানয়ারি ১৯৮৭, সান জিওভান্নি বিয়ানকো, ইতালি।
• পজিশন : সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার।
• ক্যারিয়ার : স্থানীয় ক্লাব পন্তিসোলা-য় ২০০১ সালে যুব ক্যারিয়ার শুরু। একই বছরে পাড়ি জমান মিলান-এ। ২০০৬ পর্যন্ত কাটে এখানে। এরপর ২০০৬ সালে সিনিয়র ক্যারিয়ার শুরু পিজ্জিগেঠোন-এ ধারে খেলার মাধ্যমে। একে একে খেলেন ক্রেমোনেসে, ক্যাগলিয়ারি, রোমা ঘুরে ফিওরেন্তিনা-য়। ২০১৫-১৬ মৌসুম ধারে খেললেও পরের সিজনে স্থায়ী হন। পরে দায়িত্ব পান অধিনায়কের।
• জাতীয় দলে অভিষেক : ২৯ মার্চ ২০১১, বিপক্ষ ইউক্রেন। ১৪ ম্যাচ খেলে গোল করেছেন একটি।
• মৃত্যু ; ৪ মার্চ ২০১৮।
বিদায় শব্দটায় আপত্তি ঘোর, ওপারে ভালো থেকো অনন্ত প্রহর।