• ১৫ মার্চ সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ অষ্টম বছর পার করতে যাচ্ছে।
• শতাব্দীর অন্যতম ভয়াবহ এই যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৪ লাখ ৬৫ হাজারের বেশি মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে।
• আহতের সংখ্যা দশ লাখ ছাড়িয়েছে।
• বাস্তুচ্যুত হয়েছে দেশটির অর্ধেকের বেশি নাগরিক।
একনজরে দেখে নেয়া যাক ওই গৃহযুদ্ধের শুরু, আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সম্পৃক্ততা, একে ঘিরে প্রক্সি যুদ্ধ এবং এই যুদ্ধের সর্বশেষ অবস্থা।
বিদ্রোহের শুরু
অর্থনৈতিক দুর্দশা ও স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপের কারণে জনগণের গণতান্ত্রিক আন্দোলন অব্যাহত ছিল ২০১১ পর্যন্ত। কিন্তু সিরিয়ার সরকার ওই আন্দোলনের ওপর ক্র্যাকডাউন চালালে জনতার মধ্যে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে। আন্দোলনে রাস্তায় নামে সিরিয়ানরা।
আরব বসন্ত
একই সময়ে আরব বসন্তের ফলে তিউনিসিয়া ও মিসরে সরকার পতন হয়। ওই ঘটনা গণতন্ত্রের জন্য লড়ে যাওয়া আন্দোলনকারীদের মনে আশার সঞ্চার করে। বাশার আল আসাদ শক্ত হাতে ওই আন্দোলনকে দমন করার চেষ্টা করেন। কিন্তু তা করতে গিয়ে শত মানুষকে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মাধ্যমে হত্যা করতে হয় এবং অসংখ্য মানুষ বিনা বিচারে বন্দি হয়।
ফ্রি সিরিয়ান আর্মি
২০১১ সালের জুলাইয়ে সেনাবাহিনীর একটি গ্রুপ বিদ্রোহ করে ‘ফ্রি সিরিয়ান আর্মি’ গঠন করে। তাদের লক্ষ্য ছিল প্রধানত সরকার পতন। তখন থেকেই মূলত গৃহযুদ্ধের শুরু।
আন্তর্জাতিক সম্পৃক্ততা
সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের দীর্ঘায়িত হওয়ার পেছনে আন্তর্জাতিক মোড়লদের ভূমিকা ব্যাপক। রাশিয়া ২০১৫ সাল থেকে আসাদ সরকারের মিত্র হিসেবে পরিচিত। আসাদের পক্ষ নেয় শিয়া অধ্যুষিত ইরান, ইরাক ও লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন ‘হিজবুল্লাহ’ যেখানে তুরস্ক, কাতার ও সৌদি আরব সমর্থন দিয়েছিল বিদ্রোহী গ্রুপকে।
আইএসের বিরুদ্ধে ২০১৬ সাল থেকে তুরস্ক অনেক অপারেশন চালায়। একই সঙ্গে ‘কুর্দিশ’ গ্রুপ-এর বিরুদ্ধেও যুদ্ধ ঘোষণা করে। এখানে উল্লেখ্য, বলা হয়ে থাকে কুর্দিশদের পেছন থেকে মদদ দিচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
আমেরিকা-রাশিয়ার প্রক্সি যুদ্ধ
২০১৭ সালের এপ্রিলে আমেরিকা সরাসরি আসাদ বাহিনীর বিরুদ্ধে অপারেশনে নামে। সিরিয়ার বিমান বাহিনীর বিরুদ্ধে ৫৯টি টমাহক ক্রুজ মিসাইল ছোড়ে। অবশ্য ২০১৩ সাল থেকে বিদ্রোহী গ্রুপগুলোকে ট্রেনিং ও ফান্ড দেয়া শুরু করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা বাহিনী সিআইএ। পরে সিআইএ’র ট্রেনিং প্রোগ্রাম বন্ধ করে দেয়া হয়। কারণ মাত্র ৬০ জনকে ট্রেনিং দেয়ার জন্য তাদের খরচ হয়েছিল ৫০০ মিলিয়ন ডলার।
২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে সিরিয়া ভূখণ্ডে বোমা হামলা শুরু করে রাশিয়া। তাদের টার্গেট ছিল মূলত আইএস ও আসাদ বিরোধী বিদ্রোহীরা। আসাদ বাহিনীকে সামরিক পরামর্শও দিয়ে আসছে রাশিয়ার মিলিটারি কর্মকর্তারা। এছাড়া জাতিসংঘ নিরাপত্তা কাউন্সিলের সিরিয়া বিষয়ক প্রস্তাবে ভেটো দিয়ে আসছে চীন ও রাশিয়া।
সিরিয়ার বর্তমান অবস্থা
পূর্ব ঘৌতা: গত ফেব্রুয়ারি থেকে রাশিয়ার যুদ্ধবিমানের বোমা হামলায় শতাধিক সাধারণ নাগরিক মৃত্যুবরণ করে। পূর্ব ঘৌতা ২০১৩ সাল থেকে বিদ্রোহীদের সবচেয়ে শক্তিশালী ঘাঁটি ছিল। এটি সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক থেকে খুবই কাছে। সিরিয়া সরকারের বিরুদ্ধে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ তুলেছে আমেরিকা। তুরস্ক গত জানুয়ারি থেকে ফ্রি সিরিয়ান আর্মির পক্ষে সরাসরি অপারেশন চালিয়ে যাচ্ছে সিরিয়া ভূখণ্ডে। ইদলিব-এ ৩ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হয় যার দায় স্বীকার করে বিদ্রোহী গোষ্ঠী ‘হায়েত তাহরির আল-শাম’।
আফরিন: তুরস্ক ও ফ্রি সিরিয়ান আর্মি এ বছরের জানুয়ারিতে উত্তর-পশ্চিম সিরিয় জেলা আফরিন সংলগ্ন এলাকায় কুর্দি মিলিশিয়া বাহিনী ওয়াইপিজি নিধনে অভিযান চালায়। সিরিয়ার সরকারপন্থি এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। ফেব্রুয়ারি ২৪ তারিখে জাতিসংঘ এক মাসের যুদ্ধবিরতি আহবান করে, তবে ওই যুদ্ধবিরতির শর্তে সন্ত্রাসীগ্রুপগুলো দমনে পরিচালিত যেকোন অভিযান নিয়ে বাঁধা থাকবে না বলে উল্লেখ করা হয়।
