খাবার নিয়ে মানুষের বাছ-বিচারের শেষ নেই। বেঁচে থাকার তাগিদেই মানুষ খায়। কিন্তু বিষয় যখন খাবার তখন বিখ্যাত অনেক মানুষেরই বিচিত্র রুচি ও খাবারের তালিকা রয়েছে। তাদের খাবারের নির্দিষ্ট সময়সূচি আছে, আছে বৈচিত্র্যতা। তাছাড়া এখন অনেকেই খাদ্য অভ্যাস, ডায়েট ও শরীর চর্চা নিয়ে সচেতন হওয়ায় অনেক কিছু বাদ রাখেন খাবার তালিকা থেকে। এছাড়া বিখ্যাত ব্যক্তিদের কারো কারো রয়েছে অদ্ভুত সব খাবারের তালিকা।
তাহলে জেনে নিই বিখ্যাত দশ ব্যক্তির উদ্ভট খাদ্য অভ্যাস-
এক. ওয়ারেন বাফেট
ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে ওয়ারেন বাফেট-কে জীবন্ত কিংবদন্তি বলা চলে। তার জীবনের কৌশল, আদর্শ, সাফল্য নিয়ে লিখে ও বলে শেষ করা যাবে না। শেয়ার ব্যবসা করে তিনি আজ বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম ধনী। তার সম্পদের বর্তমান মূল্য প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা! ৮৬ বছর বয়সী ওই ধনকুবের বিচিত্র এক অভ্যাস রয়েছে। তার নাশতায় পেটভরে আইসক্রিম খান। এমনকি তার খাবারের ঘর সব সময় ওরিও এবং ভেলভেট মাখন দিয়ে পূর্ণ থাকে। এছাড়া কোক অনেক পছন্দ করেন।
দুই. কার্ল লেগারফিল্ড
জার্মানির নাগরিক ৮৪ বছর বয়সী কার্ল লেগারফেল্ড ১৯৯৮৩ সাল থেকে বিশ্ব বিখ্যাত ব্র্যান্ড ‘শ্যানেল’-এর সঙ্গে আছেন। শ্যানেল-এর উদ্ভাবনী ওই পরিচালকের খাদ্য তালিকার প্রায় সব খাবারই তরল। শুধু নাশতায় সিদ্ধ আপেল ছাড়া আর কোনো শক্ত খাবার গ্রহণ করেন না। তাছাড়া সব সময় ডায়েট কোক পান করেন।
তিন. স্টিভ জবস
বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে প্রভাবশালী, প্রতিভাবান আর সফল প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ভাবনার অধিকারী ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোক্তা ও প্রযুক্তি উদ্ভাবক স্টিভ জবস। বিশ্ব বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান অ্যাপল-এর ওই প্রতিষ্ঠাতা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এক উদ্ভট খাদ্য অভ্যাসের মধ্যে ছিলেন। তার একমাত্র খাবার ছিল গাজর! লেখক ওয়ালটার ইসাকসন-এর মতে, স্টিভ জবস এত গাজর খেতেন যে, এর প্রভাবেই এক সময় তার গায়ের রঙ কমলা হয়ে যায়।
চার. হেনরি ফোর্ড
বিশ্ব বিখ্যাত ‘ফোর্ড’ গাড়ির কথা কে না শুনেছেন। আমেরিকার শিল্পপতি হেনরি ফোর্ড ‘ফোর্ড মোটর কোম্পানি’র প্রতিষ্ঠাতা মোটরগাড়ির আবিষ্কারক না হলেও তিনিই প্রথম মোটরগাড়ির বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করেন। গাড়ির মোটরের পাশাপাশি নিজের শরীরটিকেও যন্ত্র মনে করতেন। তিনি মনে করতেন, গাড়ির মতাে মানুষের শরীরেও প্রাকৃতিক জ্বালানির প্রয়োজন। তাই রাস্তার পাশের সবুজ ঘাস তুলে স্যুপ বা স্যান্ডুইচ-এর সঙ্গে খেয়ে ফেলতেন অনেক সময়।
পাঁচ. অ্যালবার্ট আইনস্টাইন
বিজ্ঞান জগতের এক অনন্য স্রষ্টা ও সংস্কারক অ্যালবার্ট আইনস্টাইন। নোবেল জয়ী ওই বিজ্ঞানীর এক অদ্ভুত অভ্যাস ছিল। মাশরুম ও ডিম ছাড়াও তার আরেকটা পছন্দের খাবার ছিল ঘাসফড়িং। একবার ঘাসফড়িং খাওয়ার সময় তার ড্রাইভারের চোখে পড়ে যান আইনস্টাইন। অদ্ভুত! তাই নয় কি?
ছয়. নোভাক জকোভিচ
সার্বিয়া-র টেনিস জগতের নক্ষত্র জকোভিচ। ক্যারিয়ারে শিরোপা জেতার পাশাপাশি আরো একটা অভ্যাস রয়েছে বর্তমান র্যাংকিংয়ের শীর্ষ ওই টেনিস তারকার। অনেক আগে থেকেই সুনাম রয়েছে শুধু গ্লুটেনমুক্ত খাবার খাওয়ার। কিন্তু ২০১১ সালে উইম্বলডন জেতার পর তাকে সেন্টার কোর্টের ঘাস খেতে দেখা যায়।
সাত. হিলারি ক্লিনটন
যুক্তরাষ্ট্রের ডেমক্রেটিক পার্টির সদস্য, সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন প্রতিদিন একটি করে তাজা হালাপেনো খান। তিনি একবার একটি আর্টিকল-এ দেখেন হালাপেনো শরীরের রোগ সক্ষমতা ব্যবস্থা শক্তিশালী করে। এরপর থেকেই প্রতিদিন হালাপেনো খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলেন তিনি। উল্লেখ্য, হালাপেনো হলো মেক্সিকো-র এক প্রজাতির মরিচ।
আট. মার্ক জাকারবার্গ
ইন্টারনেট-এর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক-এর প্রতিষ্ঠাতা ও বিশ্বের চতুর্থ ধনী মার্ক জাকারবার্গ অনেক কিছুর জন্যই বিশ্বব্যাপী পরিচিত। কিন্তু তার একটি অদ্ভুত শখের কথা অনেকেই জানেন না। তিনি শিকার করতে পছন্দ করেন। আর এ জন্যই ২০১১ সালে শপথ নেন নিজের শিকার করা খাবার ছাড়া আর কিছুই গ্রহণ করবেন না। যেই কথা সেই কাজ। পুরো এক বছর শপথ অনুযায়ী নিজের শিকার করা ছাগল, শূকর, মুরগি ইত্যাদি গ্রহণ করেন খাবারের জন্য। যাহোক, এরপরের বছরই শিকার করা ছেড়ে দেন তিনি।
নয়. শাহরুখ খান
বিমানের খাবার অনেকেই খেতে পারেন না। বিমানের ভেতরে বদ্ধ পরিবেশে খাবারের স্বাদ বােঝা যায় না। এ জন্য খাবারও বিস্বাদ লাগে। কিন্তু ব্যতিক্রম বলিউড বাদশা শাহরুখ খান। বিমানের খাবার তার পছন্দ। এছাড়া বলিউড ইতিহাসের সেরা ওই অভিনেতা আইসক্রিম খেতেও পছন্দ করেন না। এমনকি পছন্দ করেন না খাওয়ার সময় ছবি তুলতে। বিরক্ত হন যদি কেউ খাবারের সময় তার ছবি তােলে।
দশ. স্টিফেন কিং
বর্তমান বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় ও সফল ভৌতিক গল্প লেখক স্টিফেন কিং। বিশ্বব্যাপী তার বইয়ের জনপ্রিয়তাও তো রয়েছে। তাছাড়া তার অনেক বিখ্যাত গল্পই সিনেমায় রূপান্তরিত করা হয়েছে। কীভাবে এত সফল হলেন তিনি? আপনাদের সবার জন্য তার তরফ থেকে একটি টোটকা। তা হলাে, তিনি প্রতিবার লেখা শুরুর আগে এক খণ্ড চিজ-কেক খেয়ে লিখতে বসেন। কে জানে হয়তাে এটিই তার সফলতার কারণ!