পিএসজি ম্যাচের আগে ছন্দে ফিরল রিয়াল

পিএসজি ম্যাচের আগে ছন্দে ফিরল রিয়াল

অনুধাবনে কি বড্ড বেশি সময় নিয়ে ফেললেন জিদান? বার্সার বিপক্ষে ক্লাসিকোতে বিধ্বস্ত হবার পর রিয়ালের লিগ জয়ের আশা কার্যত শেষ হয়ে যায়। বার্সার উড়ন্ত ফর্ম,সাথে পয়েন্টের ব্যবধান মিলিয়ে লিগ জয়ের আশা পরিণত হয় স্বপ্নে। মাঝে কোপাতে লেগানেসের বিপক্ষে লজ্জাজনক পরাজয়ের কোপে কোপা থেকেও বিদায়। সবেধন নীলমনি হয়ে টিকে থাকা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের প্রথম লেগে পিএসজিকে বিধ্বস্ত করা; এবং প্রায় পুরো মাস জুড়েই দারুন ফর্মে থাকা রিয়াল অন্তত কাগজে কলমে লিগ জয়ের রেসে টিকে থাকার লড়াইটা চালাতে পারত। কারণ, শেষ ক’ ম্যাচে বার্সা বেশ কবারই হোঁচট খেয়েছে, আর টানা আট ম্যাচ জিতে বার্সার ঘারে নিঃশ্বাস ফেলতে শুরু করেছে অ্যাথলেটিকো। এমন অবস্থায় রিয়ালের জয়রথ অবশ্যই বার্সার মনঃস্তত্ত্বে বেশ ভালে প্রভাব ফেলতো। কিন্তু এস্পানিওলের বিপক্ষে অতীত রেকর্ডে অনুপ্রাণিত হয়ে মূল একাদশে ব্যাপক পরিবর্তন এনে পয়েন্ট খুঁইয়ে নিজের কপাল নিজেই চাপড়াচ্ছেন জিদান।
ছবিঃএএফপি
এস্পানিওলের চেয়ে গেটাফের বিপক্ষে রেকর্ড আরো ভালো থাকলেও এবার আর অযাচিত পরীক্ষার পথে হাটেননি জিদান। শুরু থেকেই ছিলো বিবিসিসহ প্রায় পুরো শক্তির দল। ফলাফল? ৩-১ গোলের সহজ জয়, রোনালদোর আরো একবার ব্রেস। প্রথমার্ধ বলুন কিংবা দ্বিতীয়ার্ধ; পুরোটা সময়ই ডমিনেট করে খেলেছে রিয়াল। আর, এ বিষয়টি আরো সহজ করে দেন গেটাফে স্ট্রাইকার রেমি, নাচোকে অহেতুক ফাউল করে দ্বিতীয় হলুদ সমেত মাঠ ছাড়লে। বার্নাব্যুতে ২-০ গোলে পিছিয়ে থেকে দশ নিয়ে জয় বা ড্রয়ের স্বপ্নকে অলীক স্বপ্নই বলা যায়। সেটায় কিছুটা রঙ্গ লেগেছিলো রেফারির ভূল সিদ্ধান্তে পাওয়া পেনাল্টি থেকে পার্তিলো ব্যবধান কমালে। কিন্তু ওইটুকুই। ইনজুরি ফেরত মার্সেলোর চমৎকার ক্রসে মাথা ছুঁইয়ে দলের তৃতীয় এবং নিজের দ্বিতীয় গোলটি করে গেটাফের ম্যাচে ফেরার শেষ আশাটুকুও শেষ করে দেন পর্তুগিজ যুবরাজ।
ছবিঃএএফপি
এ ম্যাচেও বেনজেমা রোনালদো রসায়ন ছিলো দেখার মতো। রোনালদোর প্রথম গোলটির নেপথ্য কারিগর তিনিই। চমৎকার ছিলেন বেলও। যে বিষয়টি বেশ ভালোভাবেই চোখে পড়েছে, সেটি হলো বিবিসির সাথে লুকাস যতটা স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে খেলতে পারেন ইস্কো ততটা না। একক নৈপুণ্যে নিঃসন্দেহে ইস্কো বেহতার। কিন্তু বিষয়টা যখন দলীয় রসায়নের তখন আরো গভীর ভাবে ভাবার সুযোগ রয়েছে জিদানের সামনে। এ ম্যাচটি ছিলো পিএসজির বিপক্ষের ম্যাচের ড্রেস রিহার্সেলও। তাতে বেশ ভালেভাবেই উৎরে গিয়েছেন থিও এবং লরিয়েন্তে। প্রয়োজনে বিকল্প হিসাবে এ দুজনের নাম যে জিদানের মনের শুরুর দিকেই থাকবে তা সহজেই বলে দেয়া যায়।
বেনজেমার বাড়ানো বল থেকে করা প্রথম গোলটি দিয়ে রোনালদো গড়েছেন নতুন ইতিহাস। লা লিগায় এটি ছিলো তার তিনশ তম গোল। যা করার জন্য খেলেছেন মাত্র ২৮৬ টি ম্যাচ এবং যেটি করতে নিকটতম প্রতিদ্বন্দি মেসির চেয়ে খেলেছেন ৪৮ টি ম্যাচ কম। এটুকু বাদ দিলে এ ম্যাচ নিয়ে বলার মতো আসলে কিছুই নেই। হ্যা, রিয়াল সমর্থকরা একটা আফসোস করতে পারেন; বড় অসময়ে পরীক্ষা নিরিক্ষার খেসারত দিয়ে অন্তত মনস্তাস্ত্বিক হিসাবে হলেও লড়াই থেকে ছিটকে যাবার ভুলটা নিয়ে, এস্পানিওলের বিপক্ষে নেতিবাচকের বদলে ভিন্ন কোনে রেজাল্ট হয়তো বার্সাকে এখনই ছিটকে দিতো না, কিন্তু চমৎকার একটা চাপ তৈরী হতে পারতো।
ছবিঃএএফপি
লিগের আশা শেষ, এই চিন্তাটা ভূলে রিয়ালের এখন উচিত প্রত্যেকটা ম্যাচই ফাইনাল মনে করে খেলা। কৌতিনহের আগমনে কাগজে কলমে শক্তি বাড়লেও সঠিক কম্বিনেশনটা খুঁজে বার করতে খাবি খাচ্ছেন ভালভার্দে। পরের ম্যাচে এটিএম এটির সুযোগ নিতে পারলে বহু কিছুই বদলে যেতে পারে। তাই, জিদানের উচিত লিগ এখনো শেষ হয়ে যায়নি বাক্যটি মুখে না, বরং বাস্তবেই বিশ্বাস করা। অবিশ্বাস্য বিস্ময়ের জন্ম দেয় বলেই তো ফুটবল এতটা আবেদনময়।