আজ রাতে মুখোমুখি বার্সা-অ্যাথলেটিকো

আজ রাতে মুখোমুখি বার্সা-অ্যাথলেটিকো

ক্যাম্প ন্যু-তে আজ বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা ১৫ মিনিটে মুখোমুখি হচ্ছে বার্সেলোনা ও অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ। গত মাসের শুরুর দিক বিবেচনায় যে ম্যাচটি হওয়ার কথা ছিল নিছকই আনুষ্ঠানিকতা রক্ষার, অবস্থাদৃষ্টে এটিই পরিণত হয়েছে লিগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে। বার্সা যদি জেতে তাহলে লিগ অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে যাবে ভালভার্দের শিষ্যদের। কিন্তু ফল সামান্য পাল্টে গেলেই শুরুতেই বার্সার আধিপত্যে আবেদন হারানো লিগ হয়ে পড়বে উন্মুক্ত। আচমকাই এই বদলে যাওয়া পরিস্থিতির কৃতিত্ব দুই দল দাবি করতে পারে দু’ভাবে। শেষ পাঁচ ম্যাচে তুলনামূলক সহজ দলগুলোর বিপক্ষে পয়েন্ট খুঁইয়েছে বার্সা। অন্যদিকে বার্সার ওই অপ্রত্যাশিত উদারতার পূর্ণ ফায়দা নিয়ে শেষ ৯ ম্যাচের ৮টিতেই জিতে পয়েন্ট ব্যবধান মাত্র পাঁচে নামিয়ে এনেছে লা রোজা ব্লাংকোসরা।

বার্সা যেখানে দুর্বল 

বার্সার জন্য ম্যাচটি কঠিন করে তোলার জন্য সম্ভাব্য সবই করবেন সিমিওনি- এটা তো অনুমিতই। কিন্তু তিনি কিছু করার আগে ভালভার্দেকেই খুঁজে বের করতে হবে উড়তে থাকা বার্সা আচমকাই মাটিতে নেমে এলো কেন সেটি। প্রতিপক্ষ যখনই দ্রুতগতির শরীর নির্ভর ফুটবল খেলছে তখনই এর উত্তর খুঁজে বের করতে হিমশিম খেতে দেখা যাচ্ছে কাতালানদের। মেসি-সুয়ারেজ ব্যর্থ হলেই পয়েন্ট খোয়াচ্ছে বার্সা অর্থাৎ গোলের জন্য ওই দু’জনের বাইরে কারো ওপরই সেভাবে ভরসা করতে পারছেন না ভালভার্দে। তৃতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা পাওলিনহো ধীরে ধীরে হারাতে বসেছেন তার প্রথম দিকের ম্যাজিক। তাই এ ধারা যদি এ ম্যাচেও অব্যাহত থাকে তাহলে বার্সার জন্য রাতটা সুখকর হবে না। নেইমারের প্রাথমিক বিকল্প হিসেবে আসা হান্ড্রেড মিলিওন ম্যান ওসমান ডেম্বেলেও হয়ে উঠেছেন মাথা ব্যথার আরেক কারণ। উচ্চমূল্যে কেনার কারণে তাকে যেমন টানা বসিয়ে রাখা যাচ্ছে না আবার ডেম্বেলেও এখানের বার্সার ধরনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারছেন না। একই সঙ্গে রয়েছে ইনজুরিজনিত সমস্যা। বার্সার চিন্তায় রয়েছে রক্ষণও। মূল ডিফেন্ডার পিকে এখনো পুরো ফিট নন। জিরোনার বিপক্ষের অমার্জনীয় ভুল করা উমতিতকে নিয়েও কিছুটা দুশ্চিন্তা থাকবে ভালভার্দের। রক্ষণে সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার নাম মার্কো আন্দ্রে টার স্টেগেন। অ্যাথলেটিকোর বিপক্ষে আটবার মুখোমুখি হয়ে সাতবারই ক্লিনশিট রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। কস্তা ও গ্রিজম্যানের দারুণ ফর্মের সামনে টার স্টেগেনের ওই রেকর্ড যে ভালভার্দেকে খুশি করবে না তা হলফ করেই বলে দেয়া যায়।
 
বার্সা যেখানে স্বাচ্ছন্দ্যে 

মৌসুমের শুরু থেকেই মেসির ফর্ম বার্সার জন্য এসেছে আশীর্বাদ হয়ে। গত ম্যাচেও ফ্রি কিক থেকে দারুণ এক গোল করা আর্জেন্টাইন জাদুকর আছেন নিজের সেরা ছন্দে। সুয়ারেজের সঙ্গে তার চমৎকার বোঝা-পড়াটাও যে কোনো দলের রক্ষণের ঘুম হারাম করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। মেসি যদি নিজের স্বাভাবিক ফর্মের অর্ধেকও ধরে রেখে খেলতে পারেন তাহলে ম্যাচটি নিজেদের অনুকূলে নেয়া কঠিন হয়ে যাবে সিমিওনির জন্য। সুয়ারেজও বড় ম্যাচের খেলোয়াড়। এমন উপলক্ষগুলোয় জ্বলে ওঠার বেশ ভালো রেকর্ডই আছে তার। তাই আক্রমণের প্রধাণ দুই মুখ নিয়ে নির্ভার কাতালানরা। মৌসুমজুড়ে ৪-৪-২-এ খেলা ভালভার্দের হাতে মধ্যমাঠেও রয়েছেন পার্থক্য গড়ে দেয়ার মতাে সব খেলোয়াড়। রাকিটিচ, ইনিয়েস্তা ও বুস্কেটসকে নিয়ে গড়া মধ্যমাঠ তো বিশ্বেরই অন্যতম সেরা। লিভারপুলের ঝলকের পুরোটা দেখাতে না পারলেও জিরোনার বিপক্ষে করা অসাধারণ গোলে কৌতিনহো এটুকু অন্তত জানান দিয়েছেন, তিনিও হুমকি হয়ে ওঠার ক্ষমতা রাখেন। রক্ষণে কিছু সমস্যা থাকলেও পিকের অভিজ্ঞতা নিঃসন্দেহে বেশ বড় একটা প্লাস পয়েন্ট কাতালানদের জন্য। যেটি বার্সার জন্য আরো স্বস্তিদায়ক খবর সেটি হলো লা লিগায় এটিএমের বিপক্ষে সর্বশেষ ১৫ ম্যাচের একটিতেও হারের মুখ দেখেনি বার্সেলোনা।

অ্যাথলেটিকোর অনুপ্রেরণা

গত মাসের শুরু আর লিগের বর্তমান অবস্থাই যথেষ্ট অ্যাথলেটিকোকে উদ্দীপ্ত করার জন্য। এ ম্যাচটা জিততে পারলেই যেহেতু লিগ অনেকটাই উন্মুক্ত হয়ে যাবে সেহেতু কোনো অবস্থাতেই এ সুযোগ হারাতে চাইবেন না সিমিওনি। সর্বশেষ ৮ ম্যাচের ৮টিতেই জিতে বার্সার ঘরে নিঃশ্বাস ফেলা অ্যাথলেটিকোকে চাইবে নিজেদের ফর্মটা ধরে রাখতে। আর এক্ষেত্রে তাদের ভরসা দুই ইনফর্ম স্ট্রাইকার কস্তা ও গ্রিজম্যান। এখনো ক্যাম্প ন্যুতে গোলের দেখা না পাওয়া গ্রিজম্যান মুখিয়ে আছেন নিজের ট্রেডমার্ক উদযাপনের জন্য। আর শারীরিক শক্তি প্রয়োগে খেলে অভ্যস্ত অ্যাথলেটিকো। এটিও তাদের জন্য একটি বাড়তি সুবিধা হতে পারে। কারণ আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, শারীরিক শক্তির প্রয়োগ করে খেলে এমন দলগুলোর বিপক্ষে বার্সাকে বেশ অসুবিধায় পড়তে দেখা যাচ্ছে নিজেদের স্বাভাবিক খেলা খেলতে।

অ্যাথলেটিকোর আশঙ্কা 

বার্সার বিপক্ষে অতীতটাই সিমিওনির মূল আশঙ্কা। এর আগেও এমন ফর্ম নিয়ে বার্সার মুখোমুখি হয়েও ফল অনুকূলে আনতে ব্যর্থ হয়েছেন সিমিওনির শিষ্যরা। আর মাত্রা অতিরিক্ত ফাউল করে খেলার প্রবণতাও বিপদ ডেকে আনতে পারে তাদের জন্য। সবচেয়ে বড় আশঙ্কা হচ্ছে যার ফর্মের ওপর ভরসা করে সিমিওনি বার্সা বধের স্বপ্ন দেখছেন সেই গ্রিজম্যান বড় ম্যাচগুলোয় এর আগেও আশানরূপ নৈপুণ্য দেখাতে পারেননি। বার্সার বিপক্ষে সিমিওনির ২২ ম্যাচে পাওয়া মাত্র দুটি জয়ও বলে দিচ্ছে বার্সা বধের ছক কষায় এখনো তিনি ততটা পোক্ত নন।

কাগজ-কলমের হিসাবের গুরুত্ব থাকে ম্যাচ শুরুর আ মুহূর্ত পর্যন্তই। কিক অফের বাঁশি বেজে গেলে ইতিহাস, ফর্ম- সবই হয়ে পড়ে গৌণ। নির্দিষ্ট দিনে প্রাপ্ত সুযোগগুলো যিনি কাজে লাগাতে পারবেন তিনিই শেষ হাসিটা হাসবেন। এখন দেখার বিষয় হচ্ছে হাসিটা কে হাসেন- আচমকাই পথ হারানো ভালভার্দে, নাকি লিগ জমিয়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দেয়া সিমিওনি?