‘এ সিরিজটি আমার চোখ খুলে দিয়েছে। আমি এখন তুর্কি ইতিহাস ও ধর্ম নিয়ে প্রচণ্ড আগ্রহী। আমার ধারণা, আজিন আলতান লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিয়-কেও হার মানিয়ে যাবে’ –মার্গারেট সার্ভা।
‘আমি ও আমার পরিবার ইটালি থেকে আসা আমেরিকায় জন্ম নেয়া রোমান ক্যাথোলিক। অন্যদের মতাে আমিও ঘটনাক্রমে নেটফ্লিক্সে দিরিলিস সিরিজটি আবিষ্কার করি। ওই সিরিজ আমাকে তুর্কি ইতিহাস ও ইসালম ধর্ম সম্পর্কে জানতে বাধ্য করেছে। আমেরিকায় কখনোই ইসলাম সম্পর্কে ভালো কিছু শেখানো হয় না। তবে ওই সিরিজ সত্যিকার অর্থেই আমার চোখ খুলে দিয়েছে…’ –বেনি পি।
এই হলাে ইতিহাসভিত্তিক তুর্কি টিভি সিরিয়াল ‘দিরিলিস আরতুগ্রুল’ সম্পর্কে পশ্চিমি দুই দর্শকের মূল্যায়ন। দিরিলিস সম্পর্কে এ রকম শত শত কমেন্ট পাওয়া যাবে। পশ্চিমিদের ওইসব মূল্যায়নই বলে দেয় সিরিয়ালটি নির্মাণের উদ্দেশ্য কতটা সফল হয়েছে। কিন্তু এর বিশেষত্ব এখানেই সীমাবদ্ধ নয়, ধারণা করা হচ্ছে, তুর্কিদের ‘বাপের নাম’ ভুলিয়ে দিতে ভূমিকা রাখতে পারে। ত্রয়োদশ শতাব্দীর ইতিহাস নিয়ে নির্মিত হলেও একবিংশ শতাব্দীর বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য সিরিজটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিরোনাম নিয়ে আলোচনায় যাওয়ার আগে আরো বিষয়ে আলোচনা করা যাক।
ফিরে আসা অসম্ভব
আপনি যদি কষ্ট করে টানা ১০ মিনিট মনােযোগ দিয়ে দেখেন তাহলে নির্দ্বিধায় ২০০ ঘণ্টা কাটিয়ে দিতেও রাজি হবেন। আপনার ঘুম, খাওয়া-দাওয়াও বন্ধ হয়ে যেতে পারে। আমিসহ এ পর্যন্ত যতজন ওই সিরিজ দেখতে শুরু করেছেন, প্রত্যেকের ক্ষেত্রে একই ঘটনা ঘটেছিল। ইন্টারনেট জগতের সবার প্রতিক্রিয়া প্রায় একই। তাই এটি মোটামুটি নিশ্চিত, একবার শুরু করলে সম্পূর্ণটা না দেখে ফিরে আসাটা মুশকিলই হবে।
সাবলীল উপস্থাপনা
সিরিজটি নির্মাণ করতে অনেক কিছুর প্রতি লক্ষ্য রাখতে হয়েছে। চরিত্র নির্বাচন থেকে লোকেশন, আবহাওয়া থেকে মেকআপ। ইতিহাস ঐতিহ্য, ধর্ম ও সংস্কৃতি- প্রতিটি বিষয়ের সমন্বয় করা অত্যন্ত কঠিন কাজ হলেও সবকিছুর উপস্থাপনা খুবই সাবলীল ও নিখুঁত। কোনাে অসঙ্গতিই আপনার চোখে পড়বে না। একবার দেখা শুরু করলে আপনার মনে হবে, আপনিই ওই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছেন। এটি যে অভিনয় সেটি আপনি একেবারেই ভুলে যাবেন।
নারী চরিত্রের অসাধারণ চিত্রায়ণ
নারী সংসার করে, নেতৃত্ব দেয় এবং প্রয়োজনে যুদ্ধও করে। স্থান-কাল-পাত্রভেদে নারীর চরিত্রগুলো অসাধারণ ভাবে ফুটে ওঠে এতে। দীর্ঘ ওই সিরিয়ালে অনেক নারী চরিত্র আছে। এর মধ্যে শক্তিশালী চরিত্র হচ্ছে সুলেমান শাহের স্ত্রী হায়মা প্রধান চরিত্র। ওই চরিত্রটি শুধু নারীদের মধ্যেই গুরুত্বপূর্ণ নয়, চারটি প্রধান চরিত্রের মধ্যে একটি। সুলেমান শাহের মৃত্যুর পর ওই নারীর হাতে গোত্রের নেতৃত্ব এসে পড়লে তার বিচক্ষণ নেতৃত্বের মাধ্যমে গোত্রকে ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করে সে। আবার মমতাময়ী মা হিসেবে আগলে রাখে সবাইকে। বসতির বিশাল সংখ্যক নারীর নেতৃত্ব তার হাতেই থাকে। সময়ের প্রয়োজনে পুরো গোত্রের নেতৃত্বও কিছু সময় তার হাতে থাকে।
হায়মা-র পর দ্বিতীয় প্রধান নারী চরিত্র আরতুগ্রুল-এর স্ত্রী হালিমা হাতুন। প্রথমে প্রেমিকা এবং পরে স্ত্রী ও মা হিসেবে তার অসাধারণ ভূমিকা রয়েছে। আরতুগ্রুলের স্ত্রী হওয়ার কারণে তাকে বার বার বিপদের মুখে পড়তে হয়। কিন্তু কখনোই সে ভেঙে পড়েন না। তার জীবনে সব থেকে কঠিনতম দিনটি আসে যখন তার প্রাণের স্বামী আরতুগ্রুল মারা যায়। তখন সে ভেঙে না পড়ে সবাইকে ধৈর্যধারণ করতে অনুরোধ করে বলে, তার স্বামী মৃত্যবরণ করেনি, সত্য ও ন্যায়ের পথে শহীদ হয়েছে।
তুর্কি সংস্কৃতি ও ইসলামি ঐতিহ্যের সমন্বয়
সিরিয়ালটির অন্যতম আকর্ষণীয় দিক হলাে, ইসলামি ঐতিহ্য ও তুর্কি সংস্কৃতির সমন্বয়। আপনি একটি নতুন সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হবেন যার মধ্যে ইসলামি ঐতিহ্যের চমৎকার সমন্বয় রয়েছে। একদিক থেকে মঙ্গল, অন্যদিকে ক্রুসেডারদের মুহুর্মুহু আক্রমণে জর্জরিত তুর্কিরা বাস করে অস্থায়ী বস্তিতে। প্রতিকূল আবহাওয়ার সঙ্গেও তাদের লড়াই করে বেঁচে থাকতে হয়। এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে হয়। ছোট তাঁবু বানিয়ে এর মধ্যে তারা থাকে। কিন্তু ওই তাঁবুগুলো আকৃতি ও নকশাগুলো খুবই চমৎকার। এর আকৃতিতে নতুনত্ব রয়েছে। সৃষ্টিশীলতায় অনন্য। সব তাঁবুর চেহারা একই রকম হওয়ায় দেখতে দারুণ লাগে। ওই তাঁবুগুলোর গায়ের আকা নকশাগুলো আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করবেই। এছাড়া একটা ইউনিক বিষয় হলাে, গোত্রের লোকজন কোনাে দাওয়াতে গেলে পকেটে করে সবাই একটি করে কাঠের চামচ নিয়ে যায়। খাওয়ার আগে প্রধান মেহমান বিসমিল্লাহ বলে দু’হাত প্রসারিত করে শুরু করতে বললে সবাই নিজ নিজ পকেট থেকে চামচ বের করে খাওয়া শুরু করে। আরেকটি ইউনিক বিষয় হলাে, খাওয়ার সময় পরিবার বা দাওয়াতের প্রধান তার থালা থেকে বড় এক টুকরা মাংস অথবা রুটি ছিঁড়ে তার ডানপাশের জনকে দেবেন। তিনি তার ডানপাশের জনকে দেবেন- এভাবে সবার কাছে পৌঁছে যাবে। এছাড়া তুর্কি সংস্কৃতির অসংখ্য অনন্য বৈশিষ্ট্য আপনার চোখে পড়বে।
তুর্কিদের সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে মিশে আছে ইসলামি বিধি-বিধান ও ঐতিহ্য। জানাজা, জুমার নামাজ ও খুৎবা এবং আজান, অজু ও নামাজ অত্যন্ত চমৎকারভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। কােরআন তেলাওয়াত এবং নবী-রাসূল ও সাহাবিদের অত্যন্ত সম্মানের সঙ্গে স্মরণ করা হয়। নারীর সামাজিক সব ভূমিকা থাকলেও তারা কখনোই বেপর্দা হয় না। নারীদের পোশাকেও রয়েছে বৈচিত্র। তাদের পোশাক মূলত পর্দা ও তুর্কি সংস্কৃতির এক অনন্য সমন্বয়। ওই সিরিজের কস্টিউম আপনাকে আকর্ষণ করবেই।
ইবনুল আরাবি
অনেক সিনেমাতেই আধ্যাত্মিক চরিত্র থাকে। কিন্তু ‘দিরিলিস’-এর আধ্যাত্মিক চরিত্রটি একেবারেই ব্যতিক্রম। দিরিলিসের আধ্যাত্মিক চরিত্রটি ইতিহাস থেকে নেয়া। স্পেনের আন্দালুসিয়া-য় জন্ম নেয়া আলেম ও দার্শনিক শাইখ ইবনুল আরাবি। তার পুরো নাম মহিউদ্দিন ইবনুল আরাবি যে ‘শাইখুল আকবার’ হিসেবে পরিচিত। শরিয়ত ও মারফতের যে ন্যারেটিভ প্রচলিত আছে এর একটি মেদহীন উদাহরণ এখানে পাওয়া যায়। সে কোথায় থাকে, কোথা থেকে আসে, কোথায় যায়- কিছুই জানা যায় না। কাহিনী দেখলে মনে হয়, আরতুগ্রুল-কে নেতা হিসেবে তৈরি করাই তার মিশন। দেখা যায় তার শিষ্যদের নিয়ে এক নেতার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আলোচনা করছে। আরতুগ্রুল বিপদে দোয়ার মাধ্যমে সাহায্য করছে। অন্যদিকে ইবনুল আরাবিকে খুঁজে বেড়াচ্ছে ক্রুসেডারদের রাজনৈতিক শাখার নেতা উস্তাদ-ই-আজম, প্যাট্রিসিয়া ও পোপের প্রতিনিধি কার্ডিনাল থমাস। ইবনুল আরাবি মূলত এক নেতাকে খুঁজে ফিরছিল যে মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ করে বাইজানটাইন সম্রাজ্যের পতন ঘটাবে। রাসূল (সা.)-এর ভবিষ্যৎ বাণী ছিল, মুসলমানরা বাইজানটাই সম্রাজ্যের পতন ঘটিয়ে ইসলামের প্রসার ঘটাবে। আপাতদৃষ্টিতে ইবনে আরাবি ওই নেতাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। এখানে একটা কথা বলে রাখা দরকার, ইবনে আরাবি সাধারণ কোনাে দরবেশ য়ে। একাধারে চিকিৎসক, যোদ্ধা, দার্শনিক ও আধ্যাতিক নেতা যে আরতুগ্রুলকে অনেক বিপদ থেকে রক্ষায় সহায়তা করে। ইঙ্গিতের মাধমে নির্দেশনা প্রদান করে ও প্রধান কর্তব্যগুলো বাতলে দেয়।
ইবনে আরাবির চরিত্রের মধ্য থেকে এটি উপলব্ধি করা যায়, আধ্যাত্মিকতা মানে দুনিয়াদারিবিমুখ হয়ে বন-জঙ্গলে ঘুরে বেড়ানো নয়, দুনিয়ায় ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও মুসলমানদের ইমান পরিশুদ্ধ করার বহুবিধ চেষ্টাও আধ্যাত্মিক সাধনারই অংশ।
গণিমতের মাল
দিরিলিস-এ অসংখ্য যুদ্ধ সংঘটিত হয়। যুদ্ধে মুসলমানরা জয়ী হলে বিজিতদের সম্পদ গণিমত হিসেবে নিজেদের মধ্যে বণ্টন করে নেয়া হয়। গণিমত বণ্টনের নিয়ম রয়েছে। ওই সিরিজটিতে নবীজি (সা.)-এর সময়কার যুদ্ধে গণিমত সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
রাজনৈতিক কৌশল
ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে ইটালিয়ান দার্শনিক ম্যাকিয়াভেলি-র মতে, ‘রাজনীতিতে প্রতারণা বলতে কিছু নেই। যা থাকে তা হলাে রাজনৈতিক কৌশল।’ সেকুলার রাজনীতিতে বহুল ব্যবহৃত ওই তত্ত্ব ইসলামে একেবারেই নিষিদ্ধ। রাসূলের যুগে মক্কা ও মদিনায় কখনোই ওই ধরনের রাজনীতি হয়নি। চার খলিফা-পরবর্তী মুসলিম সাম্রাজ্যগুলােয় ক্ষমতা পাকাপোক্ত বা কাউকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করতে ওই দর্শন ব্যবহার হলে তা ছিল ব্যক্তিস্বার্থে। ইসলামের মূলনীতির বিরুদ্ধে গিয়ে বহু শাসক এসব করেছেও। আসলে প্রতারণার পথ হলাে খলনায়কের, ন্যায়ের পথ নায়কের। মঙ্গলদের আক্রমণ, নাইটদের বহুবিধ চক্রান্ত ও সেলজুক আমিরদের ষড়যন্ত্র থেকে মজলুম জনগণের পক্ষে যুদ্ধই ছিল অটোমান সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার ভিত্তি। নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা ও ন্যায় প্রতিষ্ঠাই ছিল অটোমানদের মূল উদ্দেশ্য।
অবশ্য ইতিহাসের পাঠ সবার কাছে এক রকম নয়। ইতিহাসের পাঠ নির্ভর করে দৃষ্টিভঙ্গি, পর্যবেক্ষণের ক্ষমতা ও লব্ধ জ্ঞানের ওপর। একজন ধর্মবিদ্বেষী ‘ইসলামের ইতিহাস’কে যেভাবে দেখবেন একজন পরহেজগার মুসলমান সেভাবে দেখবেন না। যাহোক, ইতিহাসকে যখন বাস্তব জীবনের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হয় তখন তার যথার্থতা নিরূপণ সম্ভব হয়। দিরিলিস আরতুগ্রুল-এ আমরা বাস্তবতার নিরিখে একটি সাম্রাজ্যের গোড়াপত্তন হতে দেখি, ক্ষমতা কুক্ষিগত হতে নয়।
আরতুগ্রুল আসলে কার ছায়া
তুর্কি ইতিহাসে সুলেমান শাহের সন্তান ও অটোমান সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ওসমান-এর পিতা হিসেবে আরতুগ্রুলের নাম রয়েছে। সেলজুক সাম্রাজের রাজকন্যার সঙ্গে তার বিয়ে হয়েছিল কি না তা জানা যায়নি। সেলজুক রাজকন্যার সঙ্গে তার প্রণয় এবং পরিণয়ের কেসসা বাদ দিলে ওই সিরিয়াল কমবেশি নির্ভরযোগ্য ইতিহাসের ওপর ভিত্তি করে নির্মাণ করা হয়েছে। অনেকে এটিকে সেমিফিকশন হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এর মধ্য দিয়ে বিশ্ববাসীর কাছে ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ের ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। ত্রয়োদশ শতাব্দীর ঘটনার ওপর ভিত্তি করে পঞ্চম শতাব্দীর ওপর একটি রেখাপাত করা হয়েছে। ওই সিরিয়ালে এমন অনেক ঘটনা আছে যা পঞ্চম শতাব্দীর অনেক ঘটনার সঙ্গে মিলে যায়।
প্রথম সিজনে খলচরিত্র কুরতুগলু-র মধ্যে দেখতে পাবেন রাসুল (সা.)-এর যুগে মদিনার মােনাফেক আবদুল্লাহ ইবনে উবাই-এর ছায়া। ওই কুরতুগলু তার ব্যক্তিগত লিপ্সা চরিতার্থ করার জন্য কায়ি গোষ্ঠীর জনজীবন বিপর্যস্ত করে তোলে। নিজের জীবন দিয়ে বাঁচানো সুলেমান শাহ ও তার পরিবারকে হত্যার জন্য চেষ্টা করতে থাকে। তবে শেষ পর্যন্ত বিশ্বাস ঘাতক ও মােনাফেক কুরতুগলুর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়।
বাপের নাম ভুলিয়ে দেয়ার মতাে সিরিজ
কথাটা হাস্যকর শোনালেও সত্য হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বৈকি। নির্মাতাদের উদ্দেশ্য হয়তো এমনই। মোস্তফা কামাল পাশা-কে আধুনিক তুরস্কের জনক বলা হয়। ভঙ্গুর উসমানি খেলাফতের পতন-পরবর্তী সেকুলার তথা ধর্মনিরপেক্ষ তুরস্ক গঠনে কামাল পাশার শাসন ইতিহাসে উচ্চারিত হয়ে আসছে। তবে বর্তমানের তুরস্কে বইছে ভিন্ন হাওয়া। রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের ‘একে’ পার্টি ক্ষমতা নেয়ার পর থেকেই শুরু হয়েছে পুরনো ঐতিহ্যে ফেরার ঢেউ। আধুনিকতা ও ইসলামি ঐতিহ্যের সংমিশ্রণ ঘটাতে চান এরদোয়ান। প্রায় হাজার বছরের পুরনো তুর্কি সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও ত্যাগকে ছাপিয়ে তুরস্কের জাতির জনক হয়ে ওঠেন কামাল পাশা। রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে মসজিদগুলো ঘোড়ার আস্তাবলে রূপান্তর করেছিলেন। এসব কারণে তুরস্কের নতুন প্রজন্মের কাছে তিনি ‘আতাতুর্ক’ বা জাতির পিতা হিসেবে পরিচিত’ হয়ে ওঠেন। তুর্কি জনগণের একটি বড় অংশ ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী হওয়া আর একটা লম্বা সময় ধরে সামরিক শাসনের অধীন থাকায় কামাল পাশাকে অযৌক্তিকভাবে অতি মূল্যায়ন করা হয়ে থাকে। কিন্তু ইতিহাসভিত্তিক সিরিজ ও সিনেমা নির্মাণের যে প্রবণতা চালু হয়েছে তা অচিরেই তুর্কি জাতির পিতা কামাল পাশার নাম ভুলিয়ে দেবে। খুব অল্প সময়েই কামাল পাশাকে তুরস্কের জনগণ ভুলে যাবে- এমনটা বলা অবান্তর হবে বলে মনে হচ্ছে না।