তিন ডজন প্রশ্নের মুখোমুখি বলিউড বাদশাহ

তিন ডজন প্রশ্নের মুখোমুখি বলিউড বাদশাহ

বলিউডের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় তারকার আসন যে তার এটি অনায়াসেই বলা যায়। বলিউড বাদশাহখ্যাত শাহরুখ খান আকাশচুম্বী সফলতা ও তারকাখ্যাতির পরও নম্রতার সঙ্গে মাটিতে পা রেখে চলেন অনবদ্য। এখন পর্যন্ত নিজের গুরুত্ব রাখা ওই জীবনটাই যেন এক ঐতিহাসিক অভিযান। নিঃসন্দেহে ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে তার নাম। কিংবদন্তি ওই অভিনেতা এ পর্যন্ত মিডিয়ায় সাক্ষাৎকার খুব কমই দিয়েছেন। ২০০৩ সালে ‘ফিল্ম ফেয়ার’-এ দেয়া দীর্ঘ সাক্ষাৎকারটি বেশ পুরনো হলেও গুরুত্ব বিবেচনায় ‘জবান’-এর পাঠকদের জন্য প্রকাশ করা হচ্ছে।

আজ আপনার মানসিক অবস্থা কেমন?

শাহরুখ খান : প্রতিদিনের মতােই। মনে হচ্ছে, আমি ভাসছি এবং প্রতিদিনের করণীয় কাজ করছি। অনেক বড় একটা ছুটির পর আবার কাজে ফিরেছি। আমার দিনের প্রতিটি সময় রুটিন অনুযায়ী চলে– ঘুম থেকে ওঠা, শুটে যাওয়া, একটা শো করা, কিছু উদ্বোধন করা। মানসিকভাবে এখন একটু স্বাচ্ছন্দ্যে আছি। গত কয়েক মাসে নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত। এখন বাইরের জগতের সঙ্গে যোগাযোগ কম রাখার চেষ্টা করি। জানি না কেন, হয়তাে আমার সন্তানদের কারণে অথবা আমার বয়স হয়ে গেছে!

স্কুলে আপনার ডাকনাম কী ছিল?

শাহরুখ : ‘মেইল গাড্ডা’। কারণ আমি খুব দ্রুত ভাগতাম, এক্সপ্রেস ট্রেইনের মতাে। এছাড়া আমার চুল কপালে এসে পড়ে থাকতাে।

আপনার সবচেয়ে দুষ্টুমিপূর্ণ স্মৃতি কী?

শাহরুখ : অভাব নেই। আমার অনেক শিক্ষককে উত্ত্যক্ত করেছি। একবার আমার রসায়নের শিক্ষককে বলি, ‘আমি আপনার ছেলের মতাে’ এবং রাজি করাই আমাকে বেশি নাম্বার দিতে। প্রায়ই ক্লাসে অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার ভান করে থাকতাম এবং শিক্ষক তখন জুতা খুলে আমার নাকের সামনে ধরে রাখতেন। একবার নতুন এক শিক্ষক আসার পর ক্লাসে অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকি আর আমার সব বন্ধু মিলে শিক্ষককে বলে, যদি এখনই আমাকে তার চামড়ার জুতা না দেয়া হয় তাহলে আমি মারা যাবো। তিনি তখন তার চামড়ার জুতা খুলে দিয়ে বাকি দিন খালি পায়ে হাঁটেন।

আপনার সম্পর্কে তিনটি তথ্য?

শাহরুখ : আমার শরীরে অনেক তিল রয়েছে। কিন্তু শুধু ডান দিকে। পানি নয়, শুধু পেপসি পান করি। স্লিপার পরতে অপছন্দ করি। কখনো পরি না।

যদি কারো কাছে ক্ষমা চাইতে হয় তাহলে কার কাছে চাইবেন?

শাহরুখ : সব মানুষের কাছে যাদের ভালোবাসি কিন্তু সময় দিতে পারি না। তবে আশা করি, আমার সন্তানদের কাছে কখনো সময় না দেয়ার জন্য ক্ষমা চাইতে হবে না।

আপনাকে যদি প্রশ্ন করা হয় ভালোবাসার চারটি অপরিহার্য উপাদান কী তাহলে আপনার উত্তর কী হবে?

শাহরুখ : এক সঙ্গে সময় ব্যয় করা, আবেগ ও উচ্ছ্বাস। আমার ভালোবাসার মানুষজনের ওপর বিশ্বাস ও আস্থা রয়েছে। এরপরও ঈর্ষান্বিত হই এবং নিরাপত্তাহীনয়তায় ভুগি। তাই ঈর্ষা ও অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে চাওয়াটিও যোগ করবাে এর সঙ্গে।

আপনার স্ত্রী গৌরি সম্পর্কে তিনটি অজানা তথ্য শেয়ার করবেন?

শাহরুখ : গৌরি খুব ভালো আঁকতো। কিন্তু এখন আঁকে না। খুব ভালো নাচে। সাধারণ মধ্যবিত্ত পাঞ্জাবি নারী সে।

কোনো অদ্ভুদ কিছুর স্বাদ নিয়েছেন কখনো?

শাহরুখ : ‘কাভি হা কাভি না’ সিনেমা-র একটা দৃশ্যে শেভিং ফোম মুখে দিয়েছিলাম। ওই দৃশ্যে আইসক্রিম মুখে দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু মুখের মধ্যে আইসক্রিম গলে যাবে। তাই এর বদলে শেভিং ফোম ব্যবহার করি। এ ছাড়া আরিয়ান ও সুহানা-র সঙ্গে খেলাচ্ছলে প্রায়ই মুখে পোকা নিয়ে ভয় দেখাতাম। তারা ভাবত খেয়ে ফেলছি পোকা। গিলে ফেলতাম না অবশ্যই, ফেলে দিতাম মুখ থেকে।

এমন কিছু আছে যা আপনার কাছে সবচেয়ে বেশি আরাধ্য?

শাহরুখ : এখন আর আমার নতুন করে কিছু চাওয়ার নেই। যথেষ্ট পেয়েছি। এখন দিতে চাই। কিন্তু জানি না কীভাবে তা সম্ভব! তাই নিজের মতো করে চেষ্টা করে যাই। সবাইকে খুশি রাখতে চাই। খুব হতাশ হয়ে যাই যদি কেউ কষ্ট পায় আমার কারণে।

স্ত্রী গৌরির সবচেয়ে স্মরণীয় টেলিফোন কলের কথা বললে কোনটা বলবেন?

শাহরুখ : দুঃখজনকভাবে যেই কলটি মনে রেখেছি সেটি ছিল হাসপাতাল থেকে। বাবা মারা যাওয়ার পর কল করে জানানো হয়। অবশ্য তখনো জানতাম না বাবা আর নেই। কারণ আমাকে বলা হয়েছিল, আমাকে তিনি দেখতে চান এবং ভোর ৪টায় হাসপাতালে গিয়ে দেখি বাবা মারা গেছেন।

শেষ কবে মেজাজ হারিয়েছিলেন?

শাহরুখ : আমার শেষ মেজাজ খুব চড়েছিল ছয় মাস আগে। আমার মেজাজ খুবই খারাপ। কিন্তু এর উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে শিখেছি। কারণ আমার ভয় হয়, মেজাজ হারিয়ে ফেললে কী না কী করে ফেলি! হয়তো খুনও করে ফেলতে পারবাে তখন। তাই সব সময় শান্ত থাকার চেষ্টা করি।

সবচেয়ে বেশি পড়া হয় কোন বই?

শাহরুখ : অনেক বই রয়েছে এমন। বিশেষ করে আড্রিয়ান মোল ও উডি এলেন-এর বই। বিল কসবি-র ‘ফাদারহুড অ্যান্ড পেরেন্টহুড’। ডাউগলাস এডাম-এর দি হিচহাইকারস ‘গাইড টু গ্যালাক্সি’।

কোন গানের লিরিকস যা আপনাকে নাড়া দেয়?

শাহরুখ : ‘আভি না যাও ছোড়কার,/কে দিল আভি ভারা নাহি।/আভি আভি তোহ আয়ি হও,/বাহার বানকে ছায়িহো,/নাজার যারা বেহাক তোহ লে,/ইয়ে শাম ঢাল তো লে যারা,/ইয়ে দিল সামহাল তো লে যারা…’। ‘হাম দোনো’ সিনেমার এ গানটি খুবই রোমান্টিক। হয়তো কোনো একদিন কোনো সিনেমায় গানটি গাইবাে।

উত্তরাধিকার সূত্রে কী পেলে খুশি হতেন বেশি?

শাহরুখ : তারকাখ্যাতি পাওয়ার পর সবাই বলা শুরু করে, আমি দেখতে সুদর্শন। কিন্তু আফসোস করি, আমার বাবার চেহারা পাইনি। বাবা ছিলেন লম্বায় ছয় ফিট এবং দেখতেও সুদর্শন। আমি একটুও আমার বাবার মতো নই। আমার মাও খুব সুন্দরী ছিলেন।

কোন পোশাকে আপনার ব্যক্তিত্ব ফুটে উঠেছে?

শাহরুখ : শার্ট, অর্ধেক গোজা ও অর্ধেক বের করে রাখা। আমি পর্দার পেছনে সব সময় এভাবেই শার্ট পরতাম। পর্দার সামনেও ডিডিএলজি-তে এভাবেই শার্ট পরি যা পরে আমার ট্রেডমার্ক হয়ে যায়।

ইংরেজি ভাষার সবচেয়ে আবেদনময়ী শব্দ কোনটা?

শাহরুখ : ‘সুইট হার্ট’। এ শব্দের অনেক অপপ্রয়োগ হলেও আমার কাছে এটির খুবই আবেদন রয়েছে। শশী কাপুর খুব সুন্দর বলতেন…। আমি মনে করি, নিজেও মিষ্টিভাবে বলতে পারি এটি। অনেককেই ‘সুইট হার্ট’ বলি।

আপনাকে নিয়ে বলা সবচেয়ে বাজে মন্তব্য কার?

শাহরুখ : আশোক বাঙ্কার একবার বলেছিলেন, আমাকে মুম্বাই থেকে সরিয়ে দেয়া উচিত। কারণ আমরা অভিনেতারা মুম্বাইয়ের নাগরিকদের জন্য বিপজ্জনক। এর পেছনে কারণ হিসেবে তিনি বলেছিলেন, আমাদের সঙ্গে কথিত আন্ডারওয়ার্ল্ড-এর মানুষজনের লেনদেন রয়েছে। কখনো আমাদের ওপর আন্ডারওয়ার্ল্ডের আক্রমণ হতে পারে এবং ওই আক্রমণের ফলে হয়তাে রাস্তার কোনো নিরীহ মানুষের প্রাণ যাবে। হয়তাে এটি সবচেয়ে বাজে মন্তব্য ছিল না। তবে ওই পুরো বক্তব্যটি আমার কাছে খুব নির্বুদ্ধিতা লেগেছে। কে কোথায় থাকবে- এটা বলে দেয়ার অধিকার কারো নেই। কেউ আমাকে বলতে পারনে না মুম্বাই ছাড়তে, বিশেষ করে এত টাকা খরচ করে বাংলো নির্মাণের পর।

নিজের শরীরে কোনো কিছু পরিবর্তন করার সুযোগ থাকলে কী করবেন?

শাহরুখ : যদি সৌন্দর্য বৃদ্ধি বা অলঙ্কৃত করতে হয় তাহলে কিছুই পরিবর্তন করতে চাই না। কিন্তু যদি চিকিৎসার জন্য হয় তাহলে আমার ঘাড়ের ডিস্ক, হাঁটু ও গোড়ালি। ব্যথার কমানোর জন্য এগুলো পরিবর্তন করতে চাই।

কোথায় ও কখন আপনি সবচেয়ে বেশি বিব্রতকর পরিস্থিতে পড়েছিলেন?

শাহরুখ : বিব্রতকর পরিস্থিতিতে খুব একটা পড়িনি। কিন্তু একবার ‘দেবদাস’ সিনেমায় মাতালের দৃশ্যের পর অজান্তেই পুরো ইউনিটের সামনে পোশাক বদল করি। অবশ্য এটাকে বিব্রতকর মনে করি না। হ্যাঁ, ফরিদা জালাল যখন বলেন, আমার ডিম্পল আকর্ষণীয় তখন বিব্রত হয়ে পড়ি। লজ্জায় আমার চেহারা লাল হয়ে যায়।

আপনার কোন বৈশিষ্ট্যের জন্য সবাই আপনাকে মনে রাখলে আতঙ্কিত হবেন?

শাহরুখ : ‘একজন মাঝারিমানের অভিনেতা’। আমি ভয় পাই, ৩০ বছর পর মানুষ হয়তো বলবে, ‘শাহরুখ ছিলেন মাঝারিমানের- বেশি ভালোও নন, বেশি মন্দও নন।’ এছাড়া সবাই আমার ডিম্পল নিয়ে কথা বলেন। খুবই আশাহত হবাে যদি মানুষ আমাকে আমার ডিম্পল-এর জন্য মনে রাখে।

কী কিনতে গেলে কখনোই ক্লান্ত হবেন না?

শাহরুখ : খেলনা। সব সময় খেলনা কিনতে ভালোবাসি। অনেক বই আর কম্পিউটারের সরঞ্জাম কিনি। এগুলােই পছন্দ করি।

আপনি ভালো অভিনয় কোথায় করেন- পর্দার সামনে, নাকি পেছনে?

শাহরুখ : অবশ্যই পর্দার পেছনে। কারণ আপনি যখন ক্যামেরার সামনে থাকেন তখন ক্যামেরার জন্য অনেক কিছু করতে হয়। কিন্তু আপনার প্রকৃত রূপ তো ক্যামেরার বাইরে।

শেষ কখন নিজেকে প্রচণ্ড তাৎপর্যহীন মনে হয়েছে?

শাহরুখ : যদি বাস্তব জগতে বৃহৎ চিত্রে দেখতে চান তাহলে প্রায় প্রতিদিনই। কিন্তু আমার সফলতার কথা বললে, কখনোই না। আমার সঙ্গে সব সময়ই ভালো আচরণ করা হয়েছে, সব সময়। হ্যাঁ, একবার মরিশাস-এ একটা শোয়ের পর মাধুরি দিক্ষিত-কে ভিড়ের মধ্য থেকে বের করে নিয়ে আসছিলাম এবং নিরাপত্তা কর্মীরা মাধুরিকে যেতে দিলেও আমাকে আটকে দেয়। সত্যি বলতে, আমাকে এত মানুষ ভালোবাসে যে, চাইলেও কখনো নিজেকে নগণ্য ভাবতে পারবাে না। বিশেষ করে গত পাঁচ বছরে কখনোই আমার একবারের জন্যও নিজেকে সামান্য মনে হয়নি।

সংকটকালীন সময়ে আপনাকে প্রেরণা জোগায় কী?

শাহরুখ : আমি সব সময় আরো একবার চেষ্টা করায় বিশ্বাসী। আমি বিশ্বাস ও আশা করি, আরেকবার চেষ্টা করলে সমস্যার সমাধান হবে। যদি আপনি দরজায় সজোরে মাথা ঠুকতে থাকেন তাহলে এক সময় দরজা ভেঙে পড়বেই। মনোবল রাখি, পড়ে গেলেও আরেকবার উঠে চেষ্টা করার। তাই চেষ্টা করে যাই। সব সময় শেষ চেষ্টা করি।

বিদায় জানানোর সবচেয়ে ভালো উপায় কী?

শাহরুখ : ‘এখনই যেয়ো না ছেড়ে’ বলে জড়িয়ে ধরুন ভালোবাসার সঙ্গে।

ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন?

শাহরুখ : সম্পূর্ণরূপে ঈশ্বরে বিশ্বাস করি। খুব কম মানুষেরই আল্লাহর ওপর এমন বিশ্বাস আছে যতটা আমার রয়েছে। আমার সন্তানদেরও আল্লাহর অস্তিত্ব সম্পর্কে শেখানোর চেষ্টা করেছি। সব সময় সবকিছুর জন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া করি। আমি ধার্মিক নিজের মতো করে। এখন আল্লাহর কাছে আমার জন্য কিছু চাই না। প্রার্থনা করি সবার জন্য। নিজের জন্য তখনই কিছু চাইবাে যখন আমার প্রার্থনা করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।

আপনার কাছে একটি পারফেক্ট দিনের সংজ্ঞা কী?

শাহরুখ : একটি পারফেক্ট দিন হয়তো দুপুর ২টায় শুরু হয়ে ভোর ৫টায় শেষ হবে। এক সময় ভাবতাম, সারা দিন অলসভাবে বসে কাটানোই হয়তাে পারফেক্ট দিন। কিন্তু এখন জানি, ভুল ভাবতাম। যদি বাইরে বৃষ্টি হয় তাহলে ঘরে আড্ডা দেয়ার মতাে ভালো সঙ্গ চাইবাে এবং সালসা সস আর নাচোস-এর সঙ্গে পেপসি খেতে খেতে একটা সিনেমা দেখবাে। এটা হতে পারে পারফেক্ট দিন।

মনকে শরীর চালিত করে, নাকি শরীরকে মন?

শাহরুখ : শরীরকে মন নিয়ন্ত্রণ করে- এ বিষয়ে আমার কোনো দ্বিমত নেই। সবচেয়ে কঠিন কাজগুলো করতে সচেষ্ট হয়েছি শুধু মনের জোরে। হোক তা কোনো সিনেমার জন্য নিজের গায়ে আগুন দেয়া অথবা কয়লা সিনেমায় কোনো সুরক্ষা ছাড়া পানির স্রোতে ঝাঁপ দেয়া, এমনকি কোনো প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা। এসবে সক্ষম হয়েছি শুধু মনের জোরেই।

কোনো অভিনেতা হওয়ার সবচেয়ে মন্দ দিক কী?

শাহরুখ : আসলে তেমন কিছুই নয়। কিন্তু মাঝে মধ্যে কোনো দৃশ্যের শুটের সময় যদি ক্যামেরার রিল শেষ হয়ে যায় তাহলে উপলদ্ধি করি, কোনোভাবেই আর ওই মুহূর্তে ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়। কোনো সিনেমায় কান্না বা মারামারির দৃশ্যের কথা বলছি না। হারিয়ে যাওয়া মুহূর্তটি র কথা বলছি যেটি হয়তাে আর থাকবে না।

এমন কিছু যা নিয়ে কখনোই ঠাট্টা করতে চাইবেন না।

শাহরুখ : অক্ষমতা। মানুষের শারীরিক বা মানসিক অক্ষমতা নিয়ে ঠাট্টা করা অনুচিত। ‘বাদশাহ’ সিনেমায় একটি দৃশ্যে অন্ধ সেজে অভিনয় করেছিলাম যেটি ভাবলে আমার খারাপ লাগে। ওই দৃশ্যটি অবশ্য ঠিক ছিল। কারণ সেটি প্রহসনের দৃশ্য ছিল।

কোনো সুপারস্টার হওয়ার সবচেয়ে ইতিবাচক দিক কী?

শাহরুখ : আনন্দিত হই যখন সিনেমার দৃশ্যে আমাকে দেখে কারো মুখে হাসি ফুটে ওঠে। মঞ্চে উঠলে আমাকে দেখে মানুষ খুশি হয়। তাদের খুশি অনুভব করি। আমার ভালো লাগে যখন কেউ গাড়ি নিয়ে আমার গাড়ির পাশ দিয়ে যায় এবং আমাকে দেখে উত্তেজিত হয় অথবা যখন হাঁটতে বের হই এবং আমার বাড়ির বাইরে মানুষ আমাকে দেখার জন্য বসে থাকে ও রোমাঞ্চিত হয় আমাকে দেখে। এটি আনন্দদায়ক যে, আমি তারকা হওয়ায় সবাই আমাকে আনন্দের সঙ্গে গ্রহণ করে। অবশ্য এমন অনেক জায়গা আছে যেখানে আমার সঙ্গে একই আচরণ করা হয় না। যেমন- মুম্বাই এয়ারপোর্ট-এর ইমিগ্রেশন কাউন্টারে আমাকে তারা থামায় এবং লাইনে দাঁড় করিয়ে রাখে। অবশ্য ওই ব্যবহার আগে করা হতো না। সম্প্রতি করা হচ্ছে এবং স্পষ্টত আমাকে লক্ষ্য করেই করে এটি। এ জন্য কর্তৃপক্ষকে দোষ দিই না। এমন না যে, আমি চাইলেই কয়েকটি কল করে ওই অবস্থা থেকে সমাধান পেতে পারি না। তবে ইচ্ছা করেই তা করি না।

নিজের দেশে এমন আচরণের সম্মুখীন হলেও হিথরো এয়ারপোর্টের ঘটনা ভিন্ন। আমি বিমান থেকে নামলেই একজন এসে এক ঝটকায় আমাকে ভিআইপি লাউঞ্জ থেকে নিয়ে যান এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই আমার ব্যাগ আমার কাছে এসে পৌঁছায়। আমেরিকায় একজন আমাকে বলেছিলেন, ‘আমরা জন ট্রাভোল্টা’র জন্যও এমনটি করি না।’

কখনো প্রেম প্রস্তাব পেয়েছিলেন?

শাহরুখ : কোনো মেয়ে কখনো আমার সঙ্গে এ রকম চেষ্টা করেনি। আমি জানিও না কীভাবে করে এটি। তাই কেউ কখনো প্রস্তাব দিয়ে থাকলেও অনুধাবন করতে পারিনি। কারণ নিজেও কখনো কোনো মেয়েকে প্রস্তাব দিইনি। হয়তো পার্টিতে কেউ এসে আমাকে বলতো, ‘আমি সুদর্শন’, ‘আমাকে ভালো লাগছে’। কিন্তু কেউ কখনো জিজ্ঞাসা করেনি, ‘উইল ইউ মেরি মি?’ অথবা ‘উইল ইউ স্লিপ উইথ মি?’ যদি কোনো মেয়ে কখনো দাবি করে আমাকে প্রস্তাব দিয়েছিল তাহলে বলবাে, আসলে উপলব্ধি করিনি।

জীবনের সবচেয়ে বড় আফসোস কী?

শাহরুখ : মাঝে মধ্যে রাগ নিয়ন্ত্রণের জন্য আফসোস করি। যদি মাঝে মধ্যে নিয়ন্ত্রণ না করে প্রকাশ করতে পারতাম! আমার ধৈর্য অনেক। এ জন্য আফসোস করি।

শেষ কবে প্রশংসা শুনেছেন?

শাহরুখ : ‘দেবদাস’ দেখার পর দিপা ও কেতান মেহতা বলেছিেনি, ‘এত বছর পরও তোমার চোখে আবেগ একটুও কমেনি। তুমি কি নতুন চোখ নিয়েছ? আমরা এত বছর ধরে তোমাকে দেখছি, এখনো তোমার চোখ আমাদের নতুন লাগে। চোখে কীভাবে এখনো এত আবেগ তোমার?’

আপনাকে যদি একটা মাত্র চিঠি লেখার সুযোগ দেয়া হয় তাহলে কাকে লিখবেন এবং কী লিখবেন?

শাহরুখ : আব্রাহাম লিংকন যেমন তার ছেলের শিক্ষকের কাছে লিখেছিলেন তেমন লিখতে চাইবাে। আমার অনুপস্থিতিতে যারা আমার সন্তানদের খেয়াল রাখবনে তাদের সবার জন্য একটা চিঠি রেখে যাবাে, বিশেষ করে তাদের শিক্ষকের জন্য। আমি বলবাে, তাদের সঙ্গে যেন কর্কশ আচরণ না করে সদয় হন। তারা কিছু না পারলে বা কিছু শিখতে বেশি সময় নিলে এর অর্থ এই নয় যে, তারা শিখতে চায় না। তাদের মাথায় তখন পড়া ছাড়াও অন্য কিছু কাজ করছে। তাই সময় লাগছে। দরকার হলে তাদের প্রতি কঠোর হোক। কিন্তু যেন মার না দেন।

দেবদূত-এর অস্তিত্বে বিশ্বাস আছে আপনার?

শাহরুখ : হ্যাঁ আছে। তাদের অস্তিত্ব আছে। তারা সংখ্যায় আমাদের থেকে বেশি। তাই বলা যায়, আমাদের সবার জন্যই একজন করে নিজস্ব দেবদূত রয়েছে। আমি নিশ্চিত, আমি কারো দেবদূত অথবা কেউ দেবদূত মনে করেন আমাকে। আমিও তেমনি কাউকে আমার দেবদূত মনে করি। কিন্তু তাদের নাম বলবাে না। নাম বললে হয়তো চলে যাবে।