২২ গজ থেকে রাজনীতির ময়দানে সফল যারা

২২ গজ থেকে রাজনীতির ময়দানে সফল যারা

ক্রিকেটের সবুজ গালিচায় তারা ছিলেন সফল। দীর্ঘ ক্যারিয়ার কেটেছে দোর্দণ্ড প্রতাপে। তাদের কেউ কেউ ছিলেন নেতা, নেতার মতন সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতেন দলকে। খেলাটা একসময় ছাড়তে হয়। ছাড়েনও তারা। থেকে যায় নেতৃত্বের গুন যা পরিণত হয় নেশায়। সে নেশার ঘোরে পা রাখেন রাজনীতির মাঠে। ক্রিকেটের সবুজ গালিচা যতটা মসৃণ, ততটাই খড়খড়ে রাজনীতির প্রতিযোগিতাপূর্ণ ময়দান। সবাই সফল হয় না। আবার অনেকে ছাড়িয়ে যান নিজেকেই। উপমহাদেশের তেমন পাঁচজন তারকা যারা বনে গেছেন ‘ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিবিদ’ তাদের নিয়েই এই আয়োজন।

 

৫. নভোজোৎ সিং সিধু

তার প্রতিভার যেন শেষ নাই। ছিলেন জাতীয় দলের ওপেনার, টিভি চ্যানেলের কমেডিয়ান এবং ২০০৪ সাল থেকে একজন সক্রিয় রাজনীতিবিদ। ৫১ টেস্ট এবং ১৩৬ টি ওডিআই খেলা ভারতের সাবেক এই ওপেনার বর্তমানে আসীন আছেন পাঞ্জাবের স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর চেয়ারে। এ মন্ত্রণালয়ের অধীনে রয়েছে পর্যটন, সামাজিক যোগাযোগ এবং মিউজিয়ামের দায়িত্ব। ২০০৪ সালে বিজেপির হয়ে অমৃতসর থেকে মনোনীত হয়ে সাংসদ হবার মর্যাদা অর্জন করেন এবং ২০১৪ সাল পর্যন্ত সে তার পদ ধরে রাখেন। সফলতা দেখে ২০১৬ সালে তাকে পাঞ্জাবের রাজ্যসভার জন্য মনোয়ন দেয়া হয় কিন্ত তিনি তার পদ থেকে পদত্যাগ করেন এবং সেই বছরই তিনি বিজেপি ছেড়ে দেন। ২০১৭ সালে তিনি জাতীয় কংগ্রেসে যোগ দেন এবং পূর্ব অমৃতসরের জাতীয় বিধান সভার সদস্য নির্বাচিত হন।

 

৪. আজহারউদ্দিন

একজন জুনিয়র ব্যাংক অফিসার থেকে ক্রিকেটার; ক্রিকেটের ময়দান থেকে আসেন রাজনীতির ময়দানে। বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের শুরুই করেন পরপর তিনটি টেস্ট শতক দিয়ে। কিন্ত এত খ্যাতি, ঐশ্বর্য সব ধুলোয় মিশে যখন ১৯৯৬ বিশ্বকাপের একটি খেলায় অভিযুক্ত হন ম্যাচ পাতানোর অভিযোগে। ক্রিকেট থেকে বহিষ্কৃত হন আজীবনের জন্যে। প্রায় ১০ বছর পর দিক পরিবর্তনের জন্যে ২০০৯ সালে শখের বশেই যোগ দেন কংগ্রেসে। সে বছরই পেয়ে যান রাজ্যসভার টিকেট। উত্তর প্রদেশের ছোট শহর মুরাদাবাদের সাংসদের দায়িত্ব ভারতের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আজহারউদ্দীন পালন করেন ২০০৯ এর মে থেকে ২০১৪ সালের মে মাস পর্যন্ত। তার আগে লোকসভায় হারিয়েছেন বিজেপির প্রার্থী শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী সারভেশ কুমারকে। ৫৫ বছর বয়সী এই রাজনীতিবিদ এখনো আছেন জাতীয় কংগ্রেসের সাথে। ক্রিকেট থেকে বহিষ্কার হওয়ার আগে তার শেষ টেস্ট খেলেন ২০০০ সালে। শেষ টেস্টেও শতক হাকিয়েই মাঠ ছেড়েছিলেন ২২ গজের রাজ্যে মিডল-অর্ডারের এই ডানহাতি অতন্দ্র প্রহরী।

 

৩. সনাৎ জয়াসুরিয়া

একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে খেলোয়াড় থাকাকালীন সময়েই জড়িয়ে যান সক্রিয় রাজনীতিতে। লঙ্কান ক্রিকেট বোর্ডের বর্তমান প্রধান নির্বাচক ২০১০ সালে নির্বাচিত হন সংসদ সদস্য হিসেবে। ১৯৮৯ সালে বাইশ গজে অভিষিক্ত হন বাম হাতি এই মারকুটে ওপেনার। ১৯৯৬ বিশ্বকাপ জয়ী শ্রীলংকা দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন জয়াসুরিয়া। বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে ছুঁয়েছেন অগণিত মাইলফলক, হয়েছেন দেশের সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী ক্রিকেটার। কিন্ত শুধু ক্রিকেটেই সফল নয় জয়াসুরিয়া। ২০১০ সালের নির্বাচনে নিজ রাজ্য মাতারা থেকে রাজনৈতিক দল ইউপিএফএ বা ‘ইউনাইটেড পিপলস ফ্রিডম অ্যালিয়েন্স পার্টি’র মনোনয়ন পান এবং প্রায় ৭৪ হাজার ৩০০ ভোটে জয়লাভ করেন তিনি। পরবর্তী পাঁচ বছরে রাজাপাকসে সরকারের অধীনে তিনি দুইবার দুই মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। একটি ডাক বিভাগে অপরটি স্থানীয় সরকার ও গ্রাম উন্নয়নে। ২০১৫তে মেয়াদ শেষের পর অবশ্য আর নির্বাচনে অংশ নেননি ৪৮ বছর বয়সী এই রাজনীতিবিদ। ২০১১ সালে জাতীয় দল থেকে অবসর নেয়ার আগে ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটেই খেলেন জয়াসুরিয়া। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তিন ফরম্যাট মিলে প্রায় ২১০০০ রানের মালিক তিনি। কিন্ত শুধু বোলারদের আতঙ্কই ছিলেন না তিনি; তিন ফরম্যাটে ৪৪০টি উইকেট নিয়ে নিজের বোলিং দক্ষতারও প্রমাণ দিয়ে গেছেন মাতারা হ্যারিকেন।

 

২. অর্জুনা রানাতুঙ্গা

১৯৬৩ সালে জন্ম নেয়া এই অলরাউন্ডার শ্রীলংকাকে নেতৃত্ব দিয়ে বিশ্বকাপ জেতায় ১৯৯৬ সালে। দুই দশকের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে ৯৩টি টেস্ট ম্যাচ ও ২৬৯টি ওডিআই খেলেন বামহাতি এই মিডল-অর্ডারের ব্যাটসম্যান। বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়ে ২০০১ সালে রাজনীতিতে যোগদেন। ‘পিপলস অ্যালিয়েন্স’ নামের দল থেকে প্রথম দফায় এমপি নির্বাচিত হয়ে এমনকি পালন করেছেন পর্যটন উপমন্ত্রীর দায়িত্ব। ২০০৮ সালে পালন করেন ক্রিকেট বোর্ডের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব। ২০১০ সালে যোগ দেন “ড্যামোক্রেটিক ন্যাশনার এলায়েন্স” এ এবং ইলেকশনে জয়ী হন। পরবর্তিতে ২০১৫ সালে ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টিতে যোগ দেয়া সাবেক লঙ্কান প্রধান এখন শ্রীলংকার নৌ ও বন্দর মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন।

 

১. ইমরান খান

ক্রিকেট ছেড়ে রাজনীতিতে প্রবেশ করা সবাই দক্ষিণ এশিয়ার এবং এই সবার মধ্যে সবচেয়ে সফল এবং আলোচিত ব্যক্তিদের একজন ‘৯২তে পাকিস্তানকে বিশ্বকাপ জেতানো ফার্স্ট বোলার ইমরান খান। রাজনীতির ময়দানেও ক্রিকেটের মতই সফল সাবেক এই অধিনায়ক। ক্যারিয়ারে ৮৮ টেস্ট ও ১৭৫ ওডিআই থেকে উইকেট সংগ্রহ করেন ৫৪৬টি, সাথে রান করেন প্রায় সাড়ে সাত হাজার। একুশ বছরের বর্ণাঢ্য ক্রিকেট ক্যারিয়ারে পাকিস্তানিদের কাছে তিনি হয়ে উঠেছিলেন সত্যিকারের হিরো। রাজনীতিতেও তার ছাপ রাখেন প্রভাবশালী এই ক্রিকেটার। তার দলের নাম, ‘পাকিস্তান তেহরিক ই ইনসাফ’; এটি পাকিস্তানের প্রধান বিরোধী দল। তেহরিক-ই-ইনসাফের শুরু হয় ১৯৯৬ সালে ইমরান খানের হাত ধরেই। পরবর্তীতে পার্লামেন্টে সিট মেলে ২০০২ সালে। ইমরান খান নিয়াজী লড়ে যান দুর্নীতি এবং পাকিস্তানি রাজবংশীয় ক্ষমতায়নের বিরুদ্ধে। ২০১৩ সালের নির্বাচনে জয় না পেলেও সরকারের সাথে একাত্ম হয়ে কাজের অঙ্গীকার নেন নিজের সময়ের দুনিয়া কাঁপানো লাহোরে জন্ম নেওয়া ৬৬ বছর বয়সী এই বোলিং অলরাউন্ডার।