অগোছালো দল নিয়েই শ্রীলঙ্কা যাচ্ছে টাইগার বাহিনী

অগোছালো দল নিয়েই শ্রীলঙ্কা যাচ্ছে টাইগার বাহিনী

বোর্ডকে সাধুবাদ কোচের বিষয়টি সুরাহা করার জন্য। অবশেষে টেকনিকাল ডিরেক্টর নামক কোচের ছদ্মবেশ থেকে দলকে মুক্ত করে দায়িত্ব তুলে দেয়া হয়েছে ক্যারাবিয়ান কিংবদন্তি কোর্টনি ওয়ালশের হাতে। তবে মজার বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশের ক্রিকেট নোংরা ঠেকার পরেও ম্যানেজার পদ ছাড়েননি জনাব খালেদ মাহমুদ সুজন।

কোচের বিষয়টির সুরাহা করে বাহবা পেলেও দল নির্বাচন কিন্তু যথারীতি বিস্মিত করেছে বোদ্ধাদের। গেলো সিরিজেই ভিশন ২০২০ এর অংশ তিন তরুণ এক সিরিজ শেষেই ছিটকে পড়েছেন দল থেকে। ফের আস্থায় আনা হয়েছে মাত্রই গেলো সিরিজে বাতিলের খাতায় ফেলে দেয়া খেলোয়াড়দের। সবচেয়ে বিস্ময়কর দশেরও নিচে অ্যাভারেজের মালিক ইমরুল কায়েসের দলে থাকাটা। অকাট্য যুক্তি, অভিজ্ঞতার কারণেই শ্রীলঙ্কা সফরে দলের সঙ্গী ইমরুল। যার অভিজ্ঞতালব্ধ অ্যাভারেজ দশেরও কম, এবং সেটি যখন অমূল্য ঠেকে তখন মাহমুদের সাহেবের বয়ানটা কেমন যেন তাদেরই বিপক্ষে চলে যায়। তিনি মিডিয়াকে বলেছিলেন ফিশি। এখন যে যুক্তিতে ইমরুলের দলভুক্তি জায়েজ করা হয়েছে তাতে তো মিডিয়া না বরং ম্যানেজমেন্টকেই ফিশি ঠেকছে।

দল নির্বাচনে অস্থিরতা কতটা চরমে পৌচেছে এটি তার সামান্য একটি নমুনা। সদ্য সমাপ্ত শ্রীলঙ্কা সিরিজের দল যেখানে সাজানো হয়েছিলো আসন্ন ২০২০ বিশ্বকাপকে মাথায় রেখে তার এক মাস পেরোতেই আবারো ইমরুলদের মত পরীক্ষিত ব্যর্থদের ফিরিয়ে এনে ঠিক কি করতে চাইছেন প্রধান নির্বাচক তা স্পষ্ট না। সাব্বিরের ব্যাপারে তিনি বলেছেন সাম্প্রতিক সময়ে সাব্বির টি টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্কোরার, এবং তিনি বিদেশেও খেলছেন। বাস্তবতা হচ্ছে রান সংগ্রহের দিক দিয়ে সাব্বিরের অবস্থান ষষ্ঠ। এবং সাকিবের বদলে তিনি পিএসএল খেলতে গিয়েছেন ঠিকই কিন্তু মাঠে নামার সুযোগ পাননি একটি ম্যাচেও। কিন্তু এটিই যথেষ্ঠ প্রমাণিত হয়েছে তার দলভুক্তির ক্ষেত্রে।

তামাশার জন্ম দিয়েছে তাসকিনের দলভুক্তির ক্ষেত্রে দেয়া যুক্তিটাও। জাতীয় দল থেকে ছিটকে যাবার পরে এখনো আহামরি কিছু করে না দেখালেও দলে ঠিকই জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। কারণ? সেই অভিজ্ঞতা। তবে সবচেয়ে অদ্ভুৎ হচ্ছে সাকিবের খেলার সম্ভাবনা নূন্যতম থাকলেও তাকেই অধিনায়ক করে ঘোষণা করা হয়েছে দল। অর্থাৎ এক দলে দুই অধিনায়ক। বারবার এভাবে সাকিবকে দলভুক্ত করে দ্বিধার জন্ম দেয়ার চেয়ে বরং তাকে পরিপূর্ণ পুর্নবাসন শেষে দলে ফেরানোটাই যৌক্তিক হতো।

আলোচনায় ছিলো মাশরাফির ফেরা না ফেরাটা। বোর্ডপ্রধান বেশ আত্মবিশ্বাসের সাথেই বলেছিলেন তার ডাক মাশরাফি উপেক্ষা করতে পারবেন না। কিন্তু জীবনের অংক আসলেই কি এত সরল? সম্পুর্ণ যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও হাথুরুর খেয়ালী আচরণ, এবং তাতে বোর্ডপ্রধানের সায়, সবশেষে মাশরাফিকে পাশে বসিয়ে সংবাদ সম্মেলনের নাটকটা বোর্ডপ্রধান ভুলে গেলেও মাশরাফি ভোলেননি। যার ব্যক্তিত্ত্বের প্রশংসায় পুরো বিশ্ব পঞ্চমুখ তিনি যদি নত মস্তকে ফিরে আসতেন হয়তো দলের লাভ হতো, কিন্তু মাশরাফি নিজে কি স্বস্তি পেতেন? মনে হয় না। সারা জীবন সম্মানের জন্য লড়াই করা একজন শেষ সময়ে এসে দেউলিয়াত্বের পরিচয় দিবেন এমনটা মাশরাফি সমর্থকরা আশা করেননি। যদি কেউ বলেন যে, মাশরাফি দলের বদলে শুধুই নিজের কথা ভাবলেন, সেটাও হবে অসত্য। বরং দলই তাকে ছুড়ে ফেলেছিলো প্রাপ্য সম্মান না দিয়েই। একবার যখন এমনটা ঘটেছে, সামনেও যে ঘটবে না তার নিশ্চয়তা কি ? আর কর্তার আসনে অাসিনরাও যখন একই। তাই, মাশরাফি আরো একবার সাধুবাদ পেতে পারেন ইস্পাত কঠিন ব্যক্তিত্বের জন্য।

নিদাহাস ট্রফিতে বাংলাদেশ কেমন করবে তা এখনই বলা কঠিন। লঙ্কানদের মাটিতে তাদের এবং উড়ন্ত ভারতের বিপক্ষে খুব ভালো ফল আসবে এমনটা বোধয় কেউই আশা করছেন না, যখন অন্দর এবং বাহির সবখানেই এক প্রকার অস্থিরতা বিরাজমান। আশার কথা এই যে, টেকনিকাল ডিরেক্টরের চূড়ান্ত মেধাহীন মস্তিষ্ক থেকে মুক্ত হয়ে বাংলাদেশ খেলবে ক্রিকেটে ইতিহাসেরই অন্যতম এক কিংবদন্তির অধীনে। আগে কখনো মূল দলের দায়িত্ব না সামলানো ওয়ালশের সামনে সুযোগ নতুন অঙ্গনে নিজেকে প্রমাণ করার। খেলোয়াড়ি সাফল্যের অর্ধেকও যদি কোচের ভূমিকায় অনুদিত করতে পারেন তাহলেই হয়তো সম্ভব ভালো কিছুর।

শেষে একটা প্রশ্ন রেখেই প্রসঙ্গটার ইতি টানবো। নোংরা ক্রিকেট থেকে সরে দাঁড়ানোর সুযোগ থাকার পরেও মিডিয়া ফিশি তত্ত্বের আবিষ্কারক খালেদ মাহমুদ সেটি না নিয়ে বরং ম্যানেজার হিসাবে লঙ্কা গমণটা তার লাজে আঘাত করবে না?

১ thought on “অগোছালো দল নিয়েই শ্রীলঙ্কা যাচ্ছে টাইগার বাহিনী

কমেন্ট বন্ধ।